নিজেকে গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে জাতীয় দলের নারী ক্রিকেটারকে বিয়ে করেন আলআমিন (২৯) । বিয়ের পর তিনি টার্গেট করে চুরির কাজ করেন তিনি।
বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার স্বর্ণা আক্তারের বাসায় চুরির ঘটনায় গ্রেপ্তার হন সেই চোর মো. আল-আমিন দেওয়ান ওরফে আযান। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আল-আমিন এসব তথ্য স্বীকার করেন বলে জানিয়েছে র্যাব।চুরির ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।
মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) রাতে দিনাজপুর থেকে আলআমিনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১৩ ও র্যাব-২। অভিযানে ৪টি আইফোনসহ ৫টি মোবাইল ফোন, প্রাইম ব্যাংকের একটি চেক বইয়ের পাতা, প্রাইম ব্যাংকের একটি মাস্টার কার্ড, বেশকিছু বৈদেশিক মুদ্রা, ৩টি হাত ঘড়ি, ৪টি চেইন, একটি নোজপিন, একটি ব্রেসলেট, দুটি আংটি ও একটি হ্যান্ডব্যাগ জব্দ করা হয়।
বুধবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানিয়েছেন বাহিনীটির লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ২৯ জানুয়ারি রাজধানীর তেজকুনীপাড়া খেলাঘর মাঠে জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার স্বর্ণা আক্তার ও তার সতীর্থ খেলোয়াড়দের সঙ্গে অনুশীলনকালে তার ব্যবহৃত দুটি আইফোন চুরি হয়। একইদিনে তার বাসা থেকে সাড়ে ৩ হাজার মার্কিন ডলার, ব্যাংকের চেক বই ও ভিসা কার্ডসহ মূল্যবান জিনিসপত্র চুরির ঘটনাও ঘটে।
এ ঘটনায় ক্রিকেটার স্বর্ণা আক্তার রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি চুরির মামলা দায়ের করেন। ঘটনাটি ব্যাপক আলোচিত হয়। চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে র্যাব। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আল-আমিন চুরির ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আলআমিন র্যাবকে জানায়, তিনি মূলত প্রতারণার টার্গেট নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন আইডি খুলে নিজেকে বড় ব্যবসায়ী পরিচয় দিতেন এবং সুন্দরী নারীদের আকৃষ্ট করতে নিয়মিত স্টাইলে ছবি পোস্ট করতেন। এছাড়াও নিজেকে প্রদর্শনের জন্য টিকটক ভিডিও তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করতেন। এভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সুন্দরী নারীদের সঙ্গে কৌশলে সম্পর্ক গড়ে তুলতেন। পরবর্তীতে গ্রেপ্তার আল আমিন ওইসকল নারীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের আস্থা অর্জন করে নিয়মিত তাদের সঙ্গে দেখা করতেন। অনেকক্ষেত্রে কোনো নারীকে বিয়ে করে বা বিয়ে না করে সুবিধাজনক সময়ে তাদের নগদ অর্থসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে কৌশলে আত্মগোপনের জন্য অন্য এলাকায় অবস্থান করতেন। এসময় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখতে তার সংশ্লিষ্ট ফেসবুক আইডি ডিলেট করে দিতেন। পরবর্তীতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কিছুদিন পরে আবার তিনি কারো সঙ্গে প্রতারণার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আরেকটি আইডি খুলে একই কাজ করতেন।
কমান্ডার মঈন আরও বলেন, একই টার্গেট নিয়ে গ্রেপ্তার আল আমিন নিজেকে গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তার পরিচয় ও বর্তমানে ছুটিতে অবস্থান করে কাপড়ের ব্যবসা করছেন বলে একজন নারী ক্রিকেটার সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচিত হন। পরে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়। একপর্যায়ে পরিচয়ের ১৭ দিনের মাথায় গত ১২ জানুয়ারি গ্রেপ্তার আল আমিন ওই নারী ক্রিকেটারের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়।
কমান্ডার মঈন বলেন, জাতীয় ক্রিকেট দলের নারী অলরাউন্ডার স্বর্ণা আক্তারের সঙ্গে ওই নারী ক্রিকেটারসহ ৪ জন প্রায় তিন বছর ধরে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করে আসছিলেন। কৌশলে ওই নারী ক্রিকেটারকে বিয়ের সূত্র ধরে গ্রেপ্তার আলআমিন ওই ফ্ল্যাটে নতুন স্ত্রীকে নিয়ে একটি আলাদা রুমে বসবাস করতে থাকে।
এসময় প্রতারণার জন্য তিনি তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং ব্যবসায়িক বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে কৌশলে বিভিন্ন সময় তাদের কাছ থেকে পরিশোধের আশ্বাস দিয়ে প্রায় দুই লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ২৯ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টার দিকে অলরাউন্ডার স্বর্ণা ও তার ৩ জন রুমমেটসহ সতীর্থ খেলোয়াড়দের নিয়ে রাজধানীর তেজকুনীপাড়া খেলাঘর মাঠে অনুশীলনে যান। এসময় গ্রেপ্তার আলআমিন বাসায় অবস্থান করছিলেন। পরবর্তীতে পরিকল্পনা অনুযায়ী অলরাউন্ডার স্বর্ণার রুমের ওয়ারড্রবের ড্রয়ারের তালা ভেঙে ডলার, ১টি চেক বই, ভিসা কার্ড, তার রুমমেট অন্য নারী ক্রিকেটারের ব্যাগ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা ও তাদের ব্যবহৃত ব্যাগ করে নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে তেজকুনীপাড়া খেলাঘর মাঠে আসেন। এসময় তাদের অনুশীলনের ভিডিও করার কথা বলে অলরাউন্ডার স্বর্ণা আক্তারের ব্যবহৃত আইফোন দুইটি ব্যাগ থেকে নিয়ে কিছুক্ষণ ছবি তুলে কৌশলে মাঠ থেকে পালিয়ে যান তিনি।
আসামি আলআমিন স্বর্ণার ব্যবহৃত একটি আইফোন রাজধানীর একটি পুরাতন মালামাল বিক্রির মার্কেটে ১১ হাজার টাকায় বিক্রি করে বাসযোগে দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে প্রথমে রংপুর গিয়ে রাতে হোটেলে অবস্থান করেন। পরদিন রংপুর থেকে দিনাজপুর হোটেলে অবস্থান করেন। অনুশীলন শেষে আলআমিনকে দেখতে না পেয়ে অন্য নারী ক্রিকেটারের নাম্বার থেকে ব্যবহৃত মোবাইলফোন দুটিতে কল করলে নাম্বারগুলো বন্ধ পান। পরবর্তীতে তারা বাসায় ফিরে ফ্লাটের মূল দরজা লক করা অবস্থায় দেখতে পান। এসময় বাসার দারোয়ানের সহযোগিতায় তালা ভেঙে বাসার ভেতরে প্রবেশ করে রুমের সমস্ত জিনিসপত্র এলোমেলো অবস্থায় দেখতে পান।
আসামি আলআমিনের বিরুদ্ধে রাজধানী ঢাকা ও চাঁদপুরের বিভিন্ন থানায় ৪টির বেশি মামলা রয়েছে এবং এসব মামলায় তিনি তিনবার বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছেন।
+ There are no comments
Add yours