নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় বড় কষ্টে আছেন সাধারণ মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে বাজারে টাকার সরবরাহ কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ধারাবাহিকভাবে বাড়ানো হচ্ছে সুদহার।
বছরের দ্বিতীয় মাস ফেব্রুয়ারিতে বড় অঙ্কের ঋণের সুদহার হবে ১২ দশমিক ৪৩ শতাংশ। তবে ভোক্তা ঋণের সুদহার পড়বে প্রায় সাড়ে ১৩ শতাংশ। জানুয়ারিতে এই বড় অঙ্কের ঋণের সুদহার ছিল ১১ দশমিক ৮৯ শতাংশ আর ভোক্তা ঋণের সুদহার ছিল ১২ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
এখন যে পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে ঋণের সুদহার নির্ধারিত হচ্ছে তা হলো ‘এসএমএআরটি’ বা ‘স্মার্ট’ তথা– সিক্স মান্থ মুভিং এভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল। প্রতি মাসের শুরুতে এই হার জানিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের ছয় মাসের গড় সুদহার (স্মার্ট রেট) ছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ, আগস্টে ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং সেপ্টেম্বরে বেড়ে হয় ৭ দশমিক ২০ শতাংশ, অক্টোবরে ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ, নভেম্বরে ৭ দশমিক ৭২ শতাংশ, ডিসেম্বরে ৮ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং সবশেষ জানুয়ারিতে স্মার্ট রেট বেড়ে দাঁড়ায় ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশে।
জানুয়ারি মাসের ‘স্মার্ট’ হারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে মার্জিন বা সুদ যোগ করে ফেব্রুয়ারি মাসে ঋণ দিতে পারবে ব্যাংক। সেই হিসাবে, ২০২৪ সালের দ্বিতীয় মাস ফেব্রুয়ারিতে বড় অঙ্কের ঋণে সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৪৩ শতাংশ শতাংশ সুদ নিতে পারবে।
প্রি-শিপমেন্ট রপ্তানি ও কৃষি ও পল্লি ঋণের ‘স্মার্ট’ হারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে মার্জিন যোগ হবে। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসে প্রি-শিপমেন্ট রপ্তানি ঋণ এবং কৃষি ও পল্লি ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার হবে ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। যা জানুয়ারিতে ছিল ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
তবে ফেব্রুয়ারিতে ব্যক্তিগত ও গাড়ি কেনার ঋণে ব্যাংক সুদ নিতে পারবে ১৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ। কারণ সিএমএসএমই, ব্যক্তিগত ও গাড়ি কেনার ঋণে অতিরিক্ত ১ শতাংশ তদারকি বা সুপারভিশন চার্জ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। যা জানুয়ারিতে ছিল ১২ দশমিক ৮৯ শতাংশ। সাধারণত ব্যাংক থেকে ব্যক্তিগত ও ভোগ্যপণ্য যেমন গাড়ি কেনার ঋণ, আবাসন ঋণ, শিক্ষা ঋণসহ ফ্রিজ, টিভি কম্পিউটার ইত্যাদি ক্রয় করার জন্য যে ঋণ নেয়া হয় এগুলোকে ভোক্তা ঋণ।
ব্যাংকের ক্ষেত্রে শুধু ঋণে সর্বোচ্চ সীমা থাকলেও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত সংগ্রহেও সুদহারের একটা সর্বোচ্চ সীমা দেওয়া আছে। এসব প্রতিষ্ঠান স্মার্টের সঙ্গে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদ যোগ করে আমানত সংগ্রহ করতে পারবে। ‘স্মার্ট’ রেটের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে মার্জিন বা সুদ যোগ করে ঋণের বিপরীতে সুদ নিতে পারবে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান এনবিএফআই। সেই হিসাবে ফেব্রুয়ারি মাসে তাদের সর্বোচ্চ ঋণের সুদহার হবে ১৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ এবং আমানতে ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। যা জানুয়ারিতে ছিল ১৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং আমানতে ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
তবে ব্যাংকের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও ফেব্রুয়ারিতে ঠিক করা ঋণের এই সুদহার পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে পরিবর্তন করা যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের ৬ মাসের গড় সুদহার প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যায়, গত জানুয়ারিতে স্মার্ট ছিল ৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এরপর প্রতি মাসে একটু করে বেড়ে গত মে মাসে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ। জুন ও জুলাইয়ে সামান্য কমে ৭ দশমিক ১০ শতাংশে নামে। এরপর আগস্ট থেকে ধারাবাহিক সুদহার বাড়ছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে ৯০ দশক থেকে নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে বাজারভিত্তিক সুদহার ব্যবস্থা চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ৯ শতাংশ সুদহারের সীমা আরোপ করা হয়। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ডলারের বাজার স্থিতিশীল করতে বিভিন্ন পর্যায় থেকে সীমা তুলে নেওয়ার জন্য বলা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক গবেষণা প্রতিবেদনেও সুদহারের সীমা প্রত্যাহার অথবা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়। কিন্তু সরকারের ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় নীরব ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের অন্যতম শর্ত হলো, সুদহার বাজারভিত্তিক করা। সেই শর্তের আলোকে নতুন ব্যবস্থা চালু করা হয়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সার্বিক খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ। নভেম্বরে এই মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। গত অক্টোবরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা ছিল গত প্রায় ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
+ There are no comments
Add yours