আতঙ্ক কাটছে না মায়ানমার সীমান্তে

Estimated read time 1 min read
Ad1

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে কয়েকদিন ধরে চলছিল রক্তক্ষয়ী গোলাগুলি। এতে সীমান্ত পেরিয়ে আসা গোলায় প্রাণ গেছে বাংলাদেশের নাগরিকের, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি।

এমন পরিস্থিতিতে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ আর বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের বাসিন্দাদের মধ্যে। প্রাণভয়ে অনেকেই চলে যান বসতবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে। গতকাল বুধবার থেকে সীমান্ত লাগোয়া রাখাইন রাজ্য থেকে গুলির শব্দ না আসায় আপাতত স্বস্তি ফিরেছে এপারের বাসিন্দাদের মধ্যে।

অবশ্য ওপারের যুদ্ধ না থামায় পুরোপুরি আতঙ্ক কাটেনি সীমান্তবাসীর। বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, আপাতত সীমান্তের পরিস্থিতি ভালো হলেও মিয়ানমারে কখন কী হয়, তা বোঝা মুশকিল। যে কোনো সময়েই পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে।

এদিকে গতকালও প্রতিপক্ষের সঙ্গে ‘লড়াইয়ে’ টিকতে না পেরে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সেনাবাহিনী ও দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ৬৪ সদস্য বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া মিয়ানমারের অভ্যন্তরে লড়াই থামলেও দেশটির ভেতরে তা অব্যাহত রয়েছে।

এরই মধ্যে থাইল্যান্ড থেকে প্রকাশিত মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতী জানায়, রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলীয় শহর মিনবিয়ায় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর শেষ দুটি ব্যাটালিয়নের ঘাঁটি মঙ্গলবার দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি। প্রায় এক মাস অবিরাম আক্রমণ চালানোর পর তারা মঙ্গলবার মিনবিয়া শহরের বাইরে জান্তা সরকারের পদাতিক বাহিনীর দুই ব্যাটালিয়নের (লাইট ইনফেনট্রি ব্যাটালিয়ন ৩৭৯ ও লাইট ইনফেনট্রি ব্যাটালিয়ন ৫৪১) সদর দপ্তরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।

এক মাস ধরে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বাহিনীর সঙ্গে দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) তুমুল যুদ্ধ চলছে। এর রেশ পড়ছে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশেও। গত সোমবার ওপার থেকে আসা মর্টার শেলের আঘাতে প্রাণ গেছে বাংলাদেশি এক নারীসহ দুজনের। মিয়ানমারের যুদ্ধে ওপার থেকে আসা গুলিতে শিশুসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। প্রতিনিয়তই সেখান থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মর্টার শেল ও গুলি এসে পড়ছে। এতে চরম আতঙ্ক ছড়ায় সীমান্তবাসীর মধ্যে।

গতকাল নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু ও ঘুমধুম সীমান্ত পরিদর্শন করেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী। সেখানে তিনি বলেছেন, সীমান্ত পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিজিবির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, অবৈধভাবে আর একজনকেও বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হবে না। সীমান্তে উদ্ভূত যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি সর্বোচ্চ ত্যাগ শিকারে প্রস্তুত রয়েছে।

বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ‘গত দুই দিনের তুলনায় আজ (গতকাল) গোলাগুলির পরিমাণ একটু কম। এর আগে গোলাবারুদ, মর্টার শেল আমাদের দেশের অভ্যন্তরে এসে পড়েছে। এজন্য সরকারের সব পর্যায় কাজ করছে।’

আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা বাসিন্দারা ফিরছেন: স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েকদিনে ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া লোকজন গতকাল বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। তবে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িঘরে আশ্রয় নেওয়া বাসিন্দারা এখনো পরিস্থিতি দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন।

এদিকে গতকাল সীমান্ত এলাকার বাজারেও মানুষের উপস্থিতি বেড়েছে; খুলেছে দোকানপাট। মিয়ানমারের ঢেঁকিবনিয়া সীমান্তচৌকির খুব কাছে বাংলাদেশের ঘুমধুম ইউনিয়নের মণ্ডলপাড়া। এই গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত রোববার থেকে তারা জীবনের ভয়ে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি ফেলে অনত্র চলে যান। গুলির শব্দ কমায় এখন বাড়ি ফিরেছেন।

মিয়ানমারের আরও ৬৪ জন আশ্রয় নিয়েছে: বিজিবি সদর দপ্তর জানিয়েছে, গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মিয়ানমার বিজিপি, সেনা, ইমিগ্রেশন ও আরও ৬৪ সদস্য সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। তাদের নিরস্ত্রীকরণ করে বিজিবির হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে গত কয়েকদিনে ৩২৮ জন বিজিবির কাছে আশ্রয় পেয়েছে।

আশ্রিত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন নারী ও দুটি শিশু আছে জানিয়ে বিজিবিপ্রধান বলেন, ‘তাদের নিরাপত্তাটুকু নিশ্চিত করার দায়িত্ব, মানবিক কারণে এবং আন্তর্জাতিক রীতি ও সুসম্পর্ক রাখার কারণে আমরা করছি।

স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যমতে, হাজার হাজার রোহিঙ্গা আরএসও এবং আরসার নামে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে অবস্থান করছে। তাদের মধ্যে নীব হোসেন গ্রুপ নামে আর একটি গ্রুপ বিজিপির সঙ্গে কাজ করছে। এ অবস্থায় চলমান সংঘাতে যদি এসব রোহিঙ্গা অস্ত্রসহ ক্যাম্পে প্রবেশ করে, তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরম অবনতি হতে পারে।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রফিকুল ইসলাম বলেন, শুধু ক্যাম্প এলাকা নয়, দেশের অভ্যন্তরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সচেষ্ট রয়েছে পুলিশ।

নিজস্ব প্রতিবেদক https://khoborbangla24.net

বিশ্বজুড়ে দেশের খবর

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours