দ্রুত বিচার আইন স্থায়ী করতে জাতীয় সংসদে বিল উত্থাপন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদে আইন আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) (সংশোধন) আইন, ২০২৪ নামে বিলটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের পক্ষে উত্থাপন করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
আইনটি যাচাই বাছাইয়ের পর দুইদিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিলটি উত্থাপনের সময় বিরোধী দলের চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু এটাকে বর্বর কালো আইন বলে অভিহিত করে তা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান।
বিলের বিরোধিতা করে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, এটি বর্বর আইন, কালো আইন। বিএনপি সরকারের সময় যখন এই আইন করা হয়, তখন আওয়ামী লীগসহ সব রাজনৈতিক দল এর সমালোচনা করেছিল। এর নাম ‘দ্রুত বিচার আইন’। কিন্তু কোর্টে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মামলা শেষ হয় খুব কম। সিআরপিসিতে মামলাগুলো যেভাবে চলে এটা প্রায় সেভাবেই চলে। শুধু গ্রেপ্তারের বেলায় দ্রুত বিচার আইন বলে মনে করতে পারি।
এই আইনটা দিয়ে সরকারের যদি ইনটেনশন থাকে সাধারণ মানুষকে বা তার প্রতিপক্ষকে হয়রানি করার সুযোগ আছে। আজকে আপনারা ক্ষমতায় আছেন, কালকে অন্য কেউ এলে আপনারাই এই আাইনের মাধ্যমে হয়রাানির শিকার হবেন। যদি ক্ষতিও হয় আইনটি স্থায়ী করবেন না, এটাকে প্রত্যাহার করুন। প্রয়োজনে আরও এক বছর দুই বছরের জন্য বাড়ান কিন্তু স্থায়ী করবেন না। এটার জন্য ভুগবেন, আপনারাও ভুগবেন, দেশের মানুষও ভুগবে ভবিষ্যতে।
এদিকে ২০০২ সালে প্রথম এই আইনটি করা হয়েছিল দুই বছরের জন্য। এরপর ৭ দফা এই আইনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ২০১৯ সালে আইনটি সংশোধন করে মেয়াদ বাড়ানো হয়। আগামী ৯ এপ্রিল এই আইনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এর মধ্যে আইনটির মেয়াদ না বাড়িয়ে তা স্থায়ী করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। গত ২৯ জানুয়ারি মন্ত্রিসভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত বিল সংসদে তোলা হল। বিলে আইনটি স্থায়ী করা ছাড়া অন্য কোনো সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়নি। অর্থাৎ আইনটির বিদ্যমান ধারা এখনকার মতই থাকবে।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে দ্রুত ও কার্যকর ভূমিকা পালনের উদ্দেশ্যে চাঁদাবাজি, যানবাহন চলাকালে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, যানবাহনের ক্ষতিসাধন, স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বিনষ্ট করা, ছিনতাই, দস্যুতা, ত্রাস ও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি, দরপত্র ক্রয়, বিক্রয়, গ্রহণ বা দাখিলে জোরপূর্বক বাধা প্রদান যা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, ভয়-ভীতি প্রদর্শন ইত্যাদি গুরুতর অপরাধের দ্রুত বিচার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অধিকতর উন্নতির লক্ষ্যে আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন, ২০০২ প্রণয়ন ও জারি করা হয়েছিল। আইনটি প্রণয়নের সময় এর মেয়াদ ছিল ২ বছর। পরে প্রয়োজনীয়তার নিরিখে ক্রমান্বয়ে ৭ বার এর মেয়াদ বাড়িয়ে সর্বশেষ ১০ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। সেই মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৯ এপ্রিল। দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা ও অধিকতর উন্নতির জন্য এভাবে আইনটির মেয়াদ বারবার না বাড়িয়ে স্থায়ীভাবে আইনে পরিণত করা প্রয়োজন।
+ There are no comments
Add yours