মেঘনা নদীর উপকূলীয় এলাকায় লক্ষ্মীপুর-রামগতি সড়ক। সড়কের দুই পাশে সবুজ বেষ্টনীর আওতায় বনবিভাগের পক্ষ থেকে বনায়ন করা হয়েছে।
২০০৫ সালে লাগানো গাছগুলো এখন এ অঞ্চলের মানুষের জন্য যেন আশীর্বাদ হিসেবে কাজ করছে। গাছের কারণে পুরো সড়কটি ছায়া-শীতল থাকছে। সেই সঙ্গে দেখতেও খুব সুন্দর লাগে। সড়কের পাশে থাকা নানা প্রজাতির বনজ গাছের সঙ্গে ওষুধি, ফলদ গাছ রয়েছে। কৃষ্ণচূড়া গাছের ফুল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ।
কিন্তু লক্ষ্মীপুর-রামগতি সড়কে এ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর বেশি দিন থাকবে না। সড়কের দুপাশের গাছগুলো কাটা পড়ছে। এ সড়কটি সম্প্রসারণ করা হবে, ফলে কেটে ফেলা হবে সবুজ বেষ্টনীর গাছগুলো।
স্থানীয়রা বলছেন, উন্নয়নের নামে দিনের পর দিন বন ধ্বংস করা হচ্ছে। কিন্তু সে হিসেবে বনায়ন করা হচ্ছে না। সড়কের পাশে গাছ রেখে বিকল্প ও পরিকল্পিত পরিকল্পনা নিয়ে উন্নয়ন করা যেতে পারে। এতে উন্নয়নও হবে, পরিবেশও রক্ষা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর সড়ক বিভাগের আওতাধীন লক্ষ্মীপুর-চর আলেকজান্ডার-সোনাপুর-মাইজদী সড়কটি ৫.৫০ মিটার থেকে ৭.৩০ মিটার প্রশস্ত করা হবে। লক্ষ্মীপুর অংশে (লক্ষ্মীপুর-রামগতি সড়ক) ৫৪ কিলোমিটার সড়কে বনবিভাগের লাগানো গাছ রয়েছে। গাছগুলো কাটার জন্য গেল বছরের নভেম্বরে লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের পক্ষ থেকে বন বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়। এ সড়কে ২০০৫ সালের দিকে বন বিভাগের লাগানো গাছের সংখ্যা ১৩ হাজার ৪৪৫।
অন্যদিকে রামগঞ্জ উপজেলার পানপাড়া বাজার থেকে লামচর উচ্চ বিদ্যালয় ও আজিমপুর থেকে করপাড়া পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সড়কে বন বিভাগের ১৮৭টি গাছ রয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে ওই সড়কটির ‘উন্নয়নের বাঁধা’ ১২৫টি গাছ কাটার জন্য গেল বছরের সেপ্টেম্বরে বন বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়।
বন বিভাগ সূত্র জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর-রামগতি আঞ্চলিক সড়কের পাশে ১৩ হাজার ৪৪৫টি, রামগতি উপজেলার ১৬৭২টি এবং রামগঞ্জ উপজেলার ১২৫টিসহ মোট ১৫ হাজার ২৪২টি গাছ কাটার জন্য জেলা পরিবেশ ও বন উন্নয়ন কমিটি অনুমোদন দেয়। ফলে নিলাম প্রক্রিয়ার জন্য ওই সব গাছে ‘নাম্বারিং’ করা হয়েছে। তবে নিলাম প্রক্রিয়া এখনো সম্পন্ন হয়নি। যে কোনো সময় এ গাছগুলো কাটা পড়বে।
কমলনগরের তোরাবগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা সানা উল্যা বলেন, মেঘনার উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুর। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এ জেলাতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস লেগেই থাকে। সে জন্য বেশি করে গাছ লাগানো প্রয়োজন। কিন্তু গাছ লাগানোর পরিবর্তে কাটা হচ্ছে।
লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মীর ফরহাদ হোসেন সুমন বলেন, যেভাবে উন্নয়নের দোহাই দিয়ে গাছ কাটা হচ্ছে, সেভাবে আর গাছ লাগানো হচ্ছে না। এতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ছে। দিন দিন গাছের সংখ্যা কমার কারণে তাপদাহ তীব্র আকার ধারণ করেছে। প্রকৃতিতে যেমন গাছের প্রয়োজনীয়তা আছে, তেমনি উন্নয়নেরও প্রয়োজনীয়তা আছে। গাছ না কেটে গবেষণার মাধ্যমে বিকল্প পদ্ধতিতে উন্নয়ন করা যেতে পারে।
লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, গাছ মাটি থেকে পানি শোষণ করে। পরিমাণমতো পানি নিজে গ্রহণ করে বাকিটা বায়ুমণ্ডলে ছেড়ে দেয়। এতে বায়ুমণ্ডল শীতল থাকে এবং বৃষ্টিপাত হয়। যে অঞ্চলে গাছের সংখ্যা বেশি, ওই সব অঞ্চলে বৃষ্টিপাতও বেশি হয়।
গাছ কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক ফিরোজ আলম চৌধুরী বলেন, সড়ক প্রশস্ত করার জন্য গাছগুলো কাটা পড়বে। এটা সড়ক ও জনপথ বিভাগের সিদ্ধান্ত। আমাদের সিদ্ধান্তে গাছ কাটা হয় না।
+ There are no comments
Add yours