মোঃ মোশারফ হোসেন সরকার:
জামালপুরে ভিআইপি বেসরকারি হাসপাতাল নামে পরিচিত এম এ রশিদে ভুল চিকিৎসায় হাসি বেগম নামের এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোগী মৃত্যুর পর মরার উপর খাড়ার ঘাঁ হিসাবে ১৪ ব্যাগ রক্ত নেয়ারও অভিযোগ উঠেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
নিহত প্রসূতি হাসি বেগম জামালপুর সদর উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নের শীতলকুর্শা এলাকার নুরুল মল্লিকের স্ত্রী। তাদের আরাফাত (৭) ও নুন মনি (৫) বছরের এক পুত্রসন্তান ও এক কন্যাসন্তান রয়েছে। তৃতীয় সন্তান প্রসবের সময় এ ঘটনা ঘটে। তবে নবজাতকটি এখনো সুস্থ রয়েছে।
এই ঘটনার নিহত রোগীর স্বজন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মধ্যে হট্টগোল সৃষ্টি হলে সারা জামালপুরে আলোচিত প্রধান সংবাদে রুপ নেয়। মৃত হাসি বেগমের স্বামী নুরুল মল্লিক জানান, হাসি বেগমকে বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বিকেল ৫ টার দিকে এম এ রশিদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তারপর স্ত্রী প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন অধ্যাপক ডাঃ রুমানা আরমানের তত্বাবধানে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়। প্রায় দুই ঘন্টার অপারেশন শেষে রাত সাড়ে ৯ টায় রোগীর অবস্থা খারাপ ও রক্তক্ষরণ হচ্ছে বলে রক্ত চাওয়া হয়।
একে একে ১৪ র্যাগ রক্ত নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপর রাত সাড়ে ৩টার দিকে রোগীর অবস্থা মুমূর্ষ বলে আইসিইউতে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ আইসিইউতে রাখার পরে শনিবার (২ নভেম্বর) ভোর রাতে হাসি বেগমকে মৃত ঘোষণা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
মৃত হাসি বেগমের মামা রাজু আহমেদ বলেন, চিকিৎসক রুমানা আরমান আমার ভাগনীর একটি নাড়ি কেটে ফেলেন। তার ভুল চিকিৎসায় আমার ভাগনীকে অকালে প্রাণ দিতে হলো। এখন এই তিনটি অবুঝ শিশুর দায়িত্ব কে নিবে? আমরা ন্যায় বিচার চাই।
মৃত প্রসূতি নারীর চাচাতো ভাই রোমান আহম্মেদ বলেন, রাত ৯ টায় রোগী মারা গেছে কিন্তু হাসপাতাল কতৃপক্ষ আমাদের কে নানা অযুহাত দিয়ে ১৪ ব্যাগ রক্ত নিয়েছে। আমি বলেছি, রোগীর অবস্থা খারাপ হলে, আমাদের রোগীকে দিয়া দেন, আমরা উন্নত চিকিৎসার জন্য আরও ভালো হাসপাতালে নিয়ে যাবো। কিন্তু তারা আমাদের রোগীকে ছেড়ে দেয় নাই।
জামালপুর সিভিল সার্জন ফজলুর হক বলেন, এম এ রশিদ হাসপাতালে রোগী মৃত্যুর ঘটনাটি আমরা শোনেছি, আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এ ব্যাপারে চিকিৎসক ডাঃ রুমানা আরমানের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হয়নি। আজকে জানা যায়, চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সচেতন মহল বলছে, ভুল চিকিৎসা আর অপারেশনে অসতর্কতার কারণে তিন সন্তানের জননী একজন মায়ের মৃত্যু হয়েছে। তদন্ত কমিটি করে কি ওই তিন সন্তানের মাকে ফিরিয়ে আনা যাবে? তাঁরা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আরও বলেন, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও মৃতের পরিবার যেন ন্যায় বিচায় পায়। এখন দেখার বিষয় হলো, ভুক্তভোগী পরিবারটি ন্যায় বিচার পায় কিনা? নাকি টাকার কাছে সবকিছু দামাচাপা পড়ে যায়?
+ There are no comments
Add yours