ঝালকাঠিতে গরুর ক্ষুরা রোগের প্রাদুর্ভাব দিশেহারা কৃষক, বাজারেও দাম কম

Estimated read time 1 min read
Ad1

মোঃ আমির হোসেন, ঝালকাঠি প্রতিনিধি

ঝালকাঠি জেলার ৪ উপজেলায় হঠাৎ করে ব্যাপক হারে দেখা দিয়েছে গরুর ক্ষুরা রোগ। এই রোগে জেলার বিভিন্ন গ্রামের খামারে ও কৃষকদের কয়েক হাজার গরু এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। মারাত্মক ঝুকিতে আছে বাছুর ও গর্ভবতি গাভী। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন খামারি ও কৃষকরা। তবে এখন পর্যন্ত কোনো গরু মারা যায়নি বলে জেলা প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৪উপজেলায় গাভী ও ষাঁড় মোটা তাজাকরণে বেশ কয়েকটি ছোট বড় খামার রয়েছে। অনেক কৃষক তাদের বাড়িতে ষাঁড় মোটা তাজাকরণ করা হয়ে থাকে। এছাড়াও গৃহস্থালী পরিবারে স্বাভাবিকভাবেই গরু পালন করে থাকে। সংক্রামক ভাইরাস ক্ষুরা রোগ থেকে প্রতিকার পেতে প্রতি ৬মাস পর পর টিকা দেয়ার পরামর্শও দেন কর্মকর্তারা। আক্রান্ত হলে প্রাকৃতিকভাবে স্বাভাবিক পদ্ধতিতে সুস্থ করার নির্দেশনা দেয়া হয় বলেও জানায় সূত্রটি।

কৃষক ও খামারীরা জানান, হঠাৎ করে এক্ষুরা রোগ দেখা দেয়ায় আতংকিত হয়ে পড়েছেন খামারি ও কৃষকেরা। আক্রান্ত পশুকে রোগমুক্ত করতে প্রাণী সম্পদ অফিসের পরামর্শ সহায়তা ছাড়া আর কোন সহায়তা না পেয়ে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। এছাড়াও চিকিৎসা ব্যয় বেশি হওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন তারা। যে সকল খামারী বা কৃষকের গাভী ও ষাঁড় আক্রান্ত হয়েছে তারা প্রাণী সম্পদ অফিস থেকে সরকারিভাবে কোনো চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। বাজারে নিয়ে গেলেও চরম অমূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে বলে হতাশ কৃষকরা।

ঝালকাঠি সদর উপজেলা ভেটেরেনারী সার্জন (ভারপ্রাপ্ত প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা) ডা. মো. সরোয়ার হাসান বলেন, আবহাওয়াজনিত কারণে এই রোগ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় কিছু গরুর ক্ষুরা রোগ দেখা দিয়েছে। আমরা আক্রান্ত পশুগুলোর চিকিৎসায় পরামর্শ সহায়তা দিচ্ছি। যেহেতু ক্ষুরা রোগ ভাইরাস, তাই এর তাৎক্ষনিক সুস্থ করার কোন ব্যবস্থা নেই। এছাড়াও সুস্থ গরুগুলোকে ক্ষুরা রোগে প্রতিরোধের ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। ঝুকিতে আছে বাছুর ও গর্ভবতি গাভী। তবে এখন পর্যন্ত কোনো গরু আক্রান্ত হয়ে মারা যায়নি।

ডা. মো. সরোয়ার হাসান আরো জানান, ক্ষুরা রোগ অতি তীব্র প্রকৃতির সংক্রামক ভাইরাস জনিত রোগ। এ রোগে আক্রান্ত পশুর মুখ ও পায়ে ঘা হবার ফলে খাদ্য গ্রহণ করতে পারে না এবং খুঁড়িয়ে হাটে।

ক্ষুরা রোগ অত্যন্ত সংক্রামক হওয়ায় কোনো এলাকায় এ রোগ দেখা দিলে একশত ভাগ পশুই তাতে আক্রান্ত হয়। এ রোগের জীবাণু রোগাক্রান্ত প্রাণির ফোসকা ফেটে অন্য প্রাণির দেহে বিস্তার লাভ করে। রোগাক্রান্ত্র পশুর লালা, শ্লেষ্মা, প্রশ্রাব, মল ও দুধের মাধ্যমে দেহ হতে বের হয়ে আসে। এসব পশুর খাদ্য, পানি, আবাসস্থলের দেয়াল, বাতাস ইত্যাদি কলুষিত করে। বাতাসের সাহায্যে এ ভাইরাস ৬০/৭০ কিলোমিটার দূরবর্তী এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। গ্রামাঞ্চলে অনেক সময় আক্রান্ত পশুকে দূর-দূরান্তের হাটবাজারে বিক্রির জন্য নেয়া হয়। তখন ভাইরাস ব্যাপক এলাকায় ছড়িয়ে ক্ষুরা রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটায়। আক্রান্ত পশুর পরিচর্যাকারীর চলাচল এবং তার জামাকাপড়, জুতা ইত্যাদির সাহায্যে ও ভাইরাস বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। এ ভাইরাস বহনকারী ষাঁড় কৃত্রিম প্রজননের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। কারণ এ সব ষাঁড় থেকে সংগৃহীত সিমেন কৃত্রিম প্রজননে ব্যবহার করলে এ রোগ মহামারী আকারে দেখা দিতে পারে।

ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ তুলে ধরে তিনি জানান, প্রথমে জ্বর হয় এবং শরীরের তাপমাত্রা (১০৫-১০৭ ফারেনহাইট) এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। জিহ্বা, দাঁতের মাড়ি, মুখের ভেতর এবং পায়ের ক্ষুরের মাঝে ফোসকা হয়, পরে ফোসকা ফেটে লাল ক্ষতের সৃষ্টি হয়। আক্রান্ত পশুর মুখ থেকে লালা পড়তে থাকে, ঠোঁটের নাড়াচড়ার ফলে সাদা ফেনা বের হতে থাকে এবং চপ চপ শব্দ হয়। ঘাষ বা অন্য কিছু খেতে না পারায় পশু দুর্বল হয়ে পড়ে। ক্ষুরের ফোসকা ফেটে ঘা হয়, পা ফুলে ব্যথা হয়। ঘা বেশি হওয়ায় চলা ফেরা করতে কষ্ট হয়। ক্ষত স্থানে মাছি ডিম পাড়ে ফলে পোকা হয়। মাছি ও জীবাণুতে ঘা বিষিয়ে উঠে। ফলে পশু পা ছুড়তে থাকে যেন পায়ে কিছু লেগে আছে। রোগের পরিমাণ বেশি হলে ক্ষুরা বা জিহ্বা খসে পড়তে পারে। গাভীর ওলানে ফোসকা হতে পারে, ফলে ওলান ফুলে উঠে এবং দুধ কমে যায়। বাছুরের এ রোগ হলে বাছুর প্রায়ই মারা যায়। পশুর শ্বাসকষ্ট, রক্ত শূন্যতা এবং পরিবেশগত উচ্চ তাপমাত্রায় অসহিষ্ণুতা দেখা যায়।

প্রতিষেধক হিসেবে তিনি জানান, গরুর মুখে আক্রান্ত হলে সোহাগা ভেজে গুড়া করে সাথে মধু মিশ্রণ করে মুখের মধ্যে লেপটিয়ে দিতে হবে। মুখ ও পা আক্রান্ত হলে ৩০গ্রাম খাবার ছোটা মিশিয়ে প্রতিদিন ২বার করে ধুয়ে নিতে হবে। আক্রান্ত পশুর পায়ে নেপথলিন গুড়া করে ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দিতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন গরুতে চেটে না খেতে পারে। প্রয়োজনে গাছের সাথে খাটো দড়ি দিয়ে গাছের সাথে ২/৩ঘণ্টা বেধে রাখতে হবে। তাছাড়াও উষ্ণ গরমপানিতে পটাশ মিশিয়ে পা ধুয়ে নিতে হবে।

ঝালকাঠি জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সাহেব আলী জানান, গরুর তড়কা, বাদলা, গলাফুলা ও ক্ষুরা সংক্রামক ভাইরাস। এ ভাইরাস বাতাসের মাধ্যমে একপশু থেকে অন্য পশুতে তা ছড়িয়ে আক্রান্ত হয়ে থাকে। আক্রান্তের পূর্বে প্রতি ৬মাস পর পর টিকা নিলে আক্রান্তের ভয় থাকে না।

আক্রান্ত হলে প্রাকৃতিকভাবে যতœ নিয়ে নিরাময় করা সম্ভব হয়। উপসহকারী প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তাগণ আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। আমরা কৃষক ও খামারিদের সর্বাত্মক পরামর্শ সহযোগিতা দিচ্ছি বলেও স্বীকার করেন তিনি।

নিজস্ব প্রতিবেদক https://khoborbangla24.net

বিশ্বজুড়ে দেশের খবর

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours