ডেস্ক নিউজ:
কয়েকজন মিলে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে জুতার মালা পরান। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বাতিসা এলাকায় আবদুল হাই কানু নামে এক মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। আগস্টের গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত শনিবার নিজ এলাকা লুধিয়ারায় ফিরে আসেন আবদুল হাই কানু। এরপর গতকাল রোববার স্থানীয় কয়েকজন তাঁকে লাঞ্ছনা করে এলাকা থেকে বের করে দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছনার ঘটনাটি রোববার দুপুরে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কুলিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ঘটেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। এ ঘটনার ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন মিলে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে জুতার মালা পরিয়ে এলাকা ছেড়ে যেতে বলছেন। এ সময় গ্রামবাসীর কাছে তাঁকে ক্ষমা চাওয়ার জন্যও বলতে শোনা যায়। জুতার মালা পরানো ও এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেওয়ার ১ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
লাঞ্ছনার ঘটনার বিষয়ে জানতে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। তবে তাঁকে পাওয়া যায়নি।
মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানু উপজেলা কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সদস্য ছিলেন। স্থানীয়রা জানায়, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার প্রথমদিকে শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তাঁর ভালো সম্পর্কের কারণে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করেন। স্থানীয় এক জামায়াত নেতাকে এলাকা ছাড়া করার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। কিন্তু পরে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির কারণে এলাকায় থাকতে পারেননি কানু। এমনকি হত্যা মামলায় আসামিও হয়েছেন।
মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছনার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, ‘রাতে ফেসবুকে আমি এ ধরনের একটি ভিডিও ক্লিপ দেখেছি। এখন পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। তবে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
কয়েকজন মিলে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে জুতার মালা পরান। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া
কয়েকজন মিলে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে জুতার মালা পরান। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া
বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে লাঞ্ছনায় নেতৃত্ব দেওয়া জামায়াত ইসলামীর সমর্থক বলে জানিয়েছেন স্থানীয় অনেকে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের আমির মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘এ ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় জামায়াতের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। প্রবাসী আবুল হাসেম আমাদের দলের কেউ না। তবে সমর্থক কিংবা অনুসারী হলেও হতে পারে। এ বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।’
স্থানীয় বাসিন্দা শামসুল হক জানান, মুক্তিযোদ্ধার খেতাব ব্যবহার করে আবদুল হাই কানু এলাকায় প্রভাব বিস্তার করতেন। স্থানীয় যুবলীগ নেতা রানা হত্যা মামলার আসামি তিনি। আওয়ামীলীগ–জামায়াত কেউ বাদ যায়নি তার অত্যাচার থেকে। কানুর নির্দেশে জামায়াত ইসলামীর ওয়ার্ড সভাপতি মরহুম আব্দুল হালিম মজুমদারকে অপমান করে পুকুরে ফেলা দেওয়া হয়, জামায়াত শিবিরের নেতা কর্মীদের বাড়িঘরে হামলার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
এ ছাড়া লুদিয়ারা ও আশপাশের এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা কানু ও তাঁর ছেলে বিপ্লব আধিপত্য বিস্তার করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় অপর এক বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন মজুমদার জানান, দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে বিক্ষুব্ধরা।
এদিকে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছনার ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ জানিয়েছেন অনেকে।
+ There are no comments
Add yours