সবাইকে একাই হত্যা করেন আকাশ, নেপথ্যে বেতন-ভাতা নিয়ে দ্বন্দ্ব: দাবি র‌্যাবের

Estimated read time 1 min read
Ad1

ডেস্ক নিউজ:

ডাকাতি নয়, বেতন ভাতা ঠিক মতো না দেওয়ায় এবং জাহাজের মাস্টার ভুয়া বিল ভাউচারের টাকা অন্যদের না দেওয়া এবং এ বিষয়ে জাহাজের অন্য কেউ প্রতিবাদ না করায় ক্ষোভ থেকে সবাইকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে কুপিয়ে হত্যা করেন গ্রেপ্তার এমভি বাখেরার আকাশ মণ্ডল ওরফে ইরফান নামের কর্মচারী; এমন দাবি করেছে র‌্যাব।

অভিযানে চালিয়ে আকাশ ওরফে ইরফানের ব্যবহৃত মোবাইল, ঘুমের ওষুধের খালি পাতা, নিহতদের ব্যবহৃত মোবাইল, ব্যাগ, রক্তমাখা জিন্সের প্যান্ট ও গ্লাভস জব্দ করা হয়েছে।

বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে র‌্যাব-১১ সি পি সি-২ কুমিল্লা কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-১১ এর উপ অধিনায়ক মেজর সাকিব হোসেন।

আকাশ জাহজের সুকানির সঙ্গে ইঞ্জিনরুমে কাজ করতেন জানিয়ে সাকিব জানান, ইরফান প্রায় আট মাস ধরে এমভি-আল বাখেরা জাহাজে চাকরি করে আসছেন। ওই জাহাজের কর্মচারীরা ছুটি ও বেতন-বোনাস সময় মতো পেতো না এবং বিভিন্ন ধরনের বিল কর্মচারীদের না দিয়ে জাহাজের মাস্টার একাই ভোগ করতেন বলে গ্রেপ্তার আকাশ জানিয়েছেন।

 

তিনি আরও জানান, জাহাজের মাস্টার সব কর্মচারীর ওপর বিনা কারণে রাগারাগি করতেন এবং কারোর ওপর নাখোশ হলে তাকে কোনো বিচার বিবেচনা ছাড়াই জাহাজ থেকে নামিয়ে দিতেন। এমনকি তাদের বকেয়া বেতনও দিতেন না। এ ব্যাপারে গ্রেপ্তার ইরফান জাহাজের সবাইকে প্রতিবাদ করতে বললে কেউ ভয়ে প্রতিবাদ করতো না। মাস্টারের এমন কার্যকলাপের কারণে তার মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং এই ক্ষোভ থেকে তাকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী আনুমানিক ১৮ ডিসেম্বর ইরফান তিন পাতা ঘুমের ওষুধ কিনে নিজের কাছে রেখে দেন।

র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে এ ঘটনায় তিনি একাই জড়িত বলে জানা যায়। পরবর্তীতে অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টি আরও নিশ্চিত হওয়া যাবে।

র‍্যাব দাবি, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী গ্রেপ্তার ইরফান ঘটনার দিন সন্ধ্যায় জাহাজে রাতের খাবারের তরকারির মধ্যে তিন পাতা ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয়। শুধু সুকানি জুয়েল এবং গ্রেপ্তার ইরফান ছাড়া সবাই রাতের খাবার খেয়ে তাদের নিজস্ব কেবিনে ঘুমিয়ে পড়ে। রাত আনুমানিক দুইটার দিকে সাহারা বিকন এলাকায় আরও ৮-১০টি জাহাজের সঙ্গে সুকানি জুয়েল এবং গ্রেপ্তার আকাশ তাদের জাহাজটি নোঙ্গর করে। পরবর্তীতে সুকানি জুয়েল রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে আকাশ তার পরিকল্পনা মোতাবেক আনুমানিক রাত তিনটার দিকে প্রথমে মাস্টারকে জাহাজে থাকা চাইনিজ কোড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। পরবর্তীতে সে চিন্তা ভাবনা করে যে, জাহাজে থাকা বাকিরা জেনে গেলে সে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ধরা পড়বে, বিধায় একে একে সবাইকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে আনুমানিক ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে সব জাহাজ তাদের গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে গেলে সে নিজে জাহাজ চালাতে থাকে এবং এক পর্যায়ে মাঝিরচর নামক এলাকায় জাহাজটি আটকা পড়লে পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ট্রলারে বাজার করার কথা বলে ট্রলারে উঠে পালিয়ে যায়। তিনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে বাগেরহাটে চিতলমারি এলাকায় আত্মগোপনে চলে যান। পরে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় র‍্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে।

খুন হওয়া ব্যক্তিরা হলেন- মাস্টার গোলাম কিবরিয়া, গ্রিজার সজিবুল ইসলাম, লস্কর মাজেদুল ইসলাম, শেখ সবুজ, আমিনুর মুন্সী, ইঞ্জিন চালক সালাউদ্দিন ও বাবুর্চি রানা কাজী। এ ছাড়া আহত ব্যক্তি হলেন- সুকানি জুয়েল।

 

ক্রাইম সিন দেখে নৌপুলিশের ধারণা

এদিকে নৌপুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান সাংবাদিকদের বলেছেন, চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ না পেলেও ক্রাইম সিন দেখে বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ নিহতদের সবার লাশ নিজ নিজ ঘুমের ঘরে পাওয়া গেছে। যেন সবাই ঘুমাচ্ছে। সবার মাথায় গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। জাহাজে কাউকে আক্রমণ করলে নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করবে, চিৎকার করলে অন্যরা রক্ষা করতে আসবে- কিন্তু এখানে তেমন মনে হচ্ছে না। এ অবস্থায় সবদিক মাথায় রেখে কাজ করছে তদন্তকারী সংস্থাগুলো।

তিনি বলেন, আমরা খবর পেয়ে জাহাজে গিয়ে লাশগুলো নিজ নিজ শয়নকক্ষে পেয়েছি। শীতের দিনে আমরা যেভাবে লেপ-কাঁথা মুড়িয়ে ঘুমিয়ে থাকা দেখে মনে হচ্ছিল নিহতরাও সেভাবে ঘুমিয়ে আছেন। তাদের প্রত্যেকেরই মাথায় আঘাত।

তিনি বলেন, স্বাভাবিকভাবে আমরা মনে করি, কেউ কাউকে মারতে গেলে বা কেউ যখন নিশ্চিত হয় আমাকে হত্যা করতে আসছে, তখন তিনি জীবন রক্ষায় হাত দিয়ে হোক, পা দিয়ে হোক- যেকোনোভাবেই হোক তিনি নিজেকে রক্ষা করতে চেষ্টা করবে এবং তাদের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত থাকার কথা। কিন্তু প্রত্যেককে আমরা পেয়েছি শুধু মাথায় আঘাত অবস্থায়।

তার ভাষ্য, একটি রুমে একটি হত্যাকাণ্ড ঘটালে চিৎকার বা সাড়াশব্দে পাশের রুমে শব্দ পাওয়ার কথা এবং তারা সবাই একত্রিত হওয়ার কথা। কিন্তু এখানে সেরকম কিছু মনে হয়নি। আবার ডাকাতরা যেটি করে থাকে- সবাইকে একরুমে নিয়ে এসে তারপর ডাকাতি করে। এখানে সেরকম পাইনি, সাতটি লাশ পেয়েছি সাতটি ভিন্ন ভিন্ন রুমে। সেক্ষেত্রে বলা যায়, তাদেরকে হয়তো চেতনানাশক প্রয়োগ করা হয়েছিল বা কোনো ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়েছিল।

নৌপুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ময়নাতদন্তের পর মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। আমরা ভিসেরা রিপোর্ট প্রস্তুত করছি। ভিসেরা রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট গবেষণাগার থেকে এটির সায়েন্টিফিক রেজাল্ট পেলে বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবো এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে কী কারণ ছিল।

ধারণা করে তিনি আরও বলেন, লাশগুলো পর্যবেক্ষণে আমাদের মনে হয়েছে, এটি একটি সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। যে বা যারা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তারা সম্ভবত জাহাজটি চট্টগ্রামের যে বন্দর থেকে আসে সেখান থেকে নাবিকদের সঙ্গেই ছিল।

এর আগে গত সোমবার চাঁদপুরের মেঘনা নদীর হাইমচর উপজেলার ইশানবালা এলাকায় এমভি আল-বাখেরা নামে সারবাহী একটি জাহাজ থেকে পাঁচ জনকে মৃত ও তিন জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে দুই জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

এ ঘটনায় মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে জাহাজের মালিক মাহাবুব মুর্শেদ অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে হাইমচর থানায় মামলা করেন।

সূত্র: একাত্তর টেলিভিশন

খবর বাংলা ২৪

নির্বাহী সম্পাদক, খবর বাংলা ২৪ ডট নেট

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours