ডেস্ক নিউজ:
মানবতাবিরোধী আদালতে দণ্ডিতদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করেছে ড. বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে গঠিত কমিশন। ১৬টি ক্ষেত্রে ১৫০ সুপারিশ করা হয়েছে জানিয়ে কমিশনপ্রধান বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের রক্ত ত্যাগ যেন বৃথা না যায়। তাদের আত্মত্যাগের জন্যই সংস্কার করতে হবে। বুধবার (১৫ জানুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ সুপারিশসংবলিত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।
প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রস্তাব জমা দেওয়ার পর সংসদ ভবনে অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, গুম, খুন, অর্থ পাচার ও মানবতাবিরোধী অপরাধীকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলের সদস্যদের তালিকা থাকতে হবে। এখান থেকেই নেতা নির্বাচিত হবেন। সদস্যদের অনুদানে দল চলবে। তারাই গোপন ভোটে দলীয় সংসদ সদস্য প্রার্থী মনোনয়ন দেবেন। লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র এবং শিক্ষক রাজনীতি বন্ধেরও সুপারিশ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, স্থায়ী স্থানীয় সরকার কমিশন গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। জনমত জরিপের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের সুপারিশ করা হয়েছে। মতামত দেওয়া ৪৬ হাজার নাগরিকের ৯০ শতাংশ আগে স্থানীয় নির্বাচন চেয়েছেন। স্থানীয় সরকারে নারী প্রতিনিধিত্ব ঘূর্ণায়মান পদ্ধতির সুপারিশ করা হয়েছে। এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা স্থানীয় সরকারে নির্বাচিত হলে চাকরি ছাড়বেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের নির্বাচিত জেলা পরিষদের সুপারিশ করা হয়েছে।
যা সুপারিশে করা হয়েছে, ‘না’ ভোটের বিধান চালু, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাদ, দলীয় ভোটে প্রার্থী মনোনয়ন, ৪০ শতাংশ ভোট না পড়লে পুনর্নির্বাচন এবং এমপিদের সুবিধা কমানো, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার প্রস্তাবে নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনীকে যুক্ত করা, ২০১৮ সালের বহুল আলোচিত রাতের ভোটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পর্যায়ের কর্মকর্তা ও প্রার্থীদের বিচারের মুখোমুখি করা, নির্বাচিত হয়ে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়ালে মেয়াদ পূরণের আগেই নির্ধারিত পদ্ধতিতে এমপিদের প্রত্যাহারের বিধান, সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত গাড়ি, আবাসিক প্লট, সব ধরনের প্রটোকল ও ভাতা পর্যালোচনা এবং সংশোধনের প্রস্তাব, কেউ দু’বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না, সংসদে ১০০ আসন নারীদের সংরক্ষিত রাখা, রাষ্ট্রপতি হবেন নির্দলীয়,
এ ছাড়া এই কমিশনের সুপারিশে নির্বাচন কমিশনের আইনি, আর্থিক ও প্রশাসনিক প্রস্তাব সরকারের পরিবর্তে সংসদের প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষের বা সংসদীয় কমিটির কাছে উপস্থাপনের বিধান করা; কমিশনারদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের অভিযোগ উঠলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে সুরাহা, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগে ইসির কর্মকর্তাদের অগ্রধিকার, ইসির ব্যয় পুনর্নির্ধারণ, নির্বাচন কমিশনের জনবল নিয়োগে আলাদা সার্ভিস কমিশন গঠন, ঋণ বিলখেলাপিদের প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত রাখা, ফেরারি আসামি হিসেবে আদালত ঘোষিত ব্যক্তিকে প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত রাখা, নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে বিচারিক আদালতে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিকে শুরু থেকেই সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য করা, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত প্রতিনিধিকে পদত্যাগ না করে সংসদ সদস্য পদে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য করা, তরুণ, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু, শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ১০ শতাংশ মনোনয়নের সুযোগ তৈরির বিধান করা, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ৫০০ ভোটারের সম্মতির বিধান করা, হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিলে প্রার্থিতা বা নির্বাচিত হলে তা বাতিল করা, একাধিক আসনে কোনো ব্যক্তির প্রার্থী হওয়ার বিধান বাতিল করার সুপারিশ করা হয়েছে। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে ৫ বছরের আয়কর রিটার্নের কপি জমা দেওয়ার বিধান, নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিধান বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।
রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের শর্ত শিথিল ও ৫ বছর পর পর দল নিবন্ধন নবায়ন বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রবাসী পোস্টাল ভোটিং ব্যবস্থা, অনলাইন ভোটিং ব্যবস্থা, প্রবাসীদের ভোটার তালিকা প্রস্তুতেরও সুপারিশ করা হয়েছে।
সূত্র: ইত্তেফাক
+ There are no comments
Add yours