ডেস্ক নিউজ
বাংলাদেশে রাজনৈতিক নেতা, সরকারি কর্মকর্তা বা সিনেমা জগতের তারকা থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণের ফোন আলাপের রেকর্ড ফাঁস হওয়ার ঘটনা মাঝেমধ্যেই শোনা যায়। তদন্ত করা না হলে এসব ফোন আলাপের উৎস সম্পর্কে – অর্থাৎ ফোন রেকর্ডটি কে ছড়িয়ে দেয় – প্রায় কখনোই আনুষ্ঠানিকভাবে জানা যায় না।
বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৩ অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকের ‘চিঠিপত্রের ও যোগাযোগের অন্যান্য উপায়ের গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার’ রয়েছে।
অর্থাৎ, ফোনে যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিকের গোপনীয়তা অক্ষুণ্ণ রাখার নিশ্চয়তা দেয় আইন। তার মানে, ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া ফোন আলাপ রেকর্ড করা এবং রেকর্ড ছড়িয়ে দেয়া, আইনত অপরাধ।
আইনজীবীরা মনে করেন, অনুমতি ছাড়া কারো ফোন আলাপের রেকর্ড ছড়িয়ে দিলে তিনি প্রচলিত আইন অনুযায়ী মানহানির মামলা করতে পারেন। ডিজিটাল মাধ্যমে রেকর্ড ছড়ানো হলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেও মামলা করতে পারেন।
তবে আইনজীবীদের অনেকের মতে, ফোনে আড়ি পাতা বা ফোন আলাপ রেকর্ড প্রকাশ করা নিয়ে বাংলাদেশের আইনে সুস্পষ্টভাবে কিছু বলা নেই।
কিন্তু ফোন আলাপের রেকর্ড কি প্রমাণ হিসেবে আদালতে উপস্থাপনযোগ্য? আদালতের গ্রহণযোগ্যতা পেতে কি কোনো বিশেষ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে রেকর্ড করতে হয় ফোন আলাপ?
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইনে একটি ধারা আছে যেখানে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা সংস্থা যদি প্রয়োজন মনে করে, তদন্তের স্বার্থে বা মামলার স্বার্থে হতে পারে, তাহলে টেলিফোন সেবা দাতা সংস্থা তাদের সব রকমের তথ্য দিতে বাধ্য থাকবে” –
“কিন্তু তারা যে কারো ফোনে আড়ি পাততে পারবে – এমন কোন সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা বা ক্ষমতা দিয়ে কোন আইনি বিধান নেই। বরং উল্টোটা আছে। যেকোন নাগরিকের ব্যক্তিগত যোগাযোগের গোপনীয়তার নিশ্চয়তা দিচ্ছে বাংলাদেশের সংবিধান।”
২০০১ সালে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন পাস হয়, পরবর্তীতে ২০১০ সালে সেই আইনটি সংশোধন করা হয়। এ আইনে ফোনে আড়ি পাতাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করা হয়েছে। তবে, গোয়েন্দা সংস্থা, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা, তদন্ত সংস্থার মতো সরকারি সংস্থাগুলোর বাইরে যে কোন ব্যক্তির কথোপকথন আড়ি পেতে রেকর্ড করলে বা প্রচার করলে দুই বছর কারাদণ্ড এবং পাঁচ কোটি টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।
কিন্তু সরকারি সংস্থাগুলো তদন্তের স্বার্থে বা রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে কোন নাগরিকের ফোনে আড়ি পাততে চাইলে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, জন শৃঙ্খলা এসব বিষয়ে যেকোন কর্মকর্তাকে সরকারের অনুমতি নিতে হয়, কিন্তু যেহেতু আইনে এ বিষয়ে পরিষ্কার কিছু বলা নেই, সে কারণে অনেক সময়ই বিষয়গুলো নিয়ে কড়াকড়ি তেমন থাকেনা।
তবে, নির্দিষ্ট কোন নাগরিকের কর্মকাণ্ড যদি রাষ্ট্রের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বা হুমকি না হয়, তাহলে আদালতের নির্দেশনা ছাড়া কারো ফোনে কেউ বৈধভাবে আড়ি পাততে পারবে না।
+ There are no comments
Add yours