খবর বাংলা ডেস্ক |
করোনা সংক্রমণ মারাত্মকভাবে বেড়ে যাওয়ায় প্রথম দফায় মানুষের চলাচল ও কার্যক্রমে বিধি-নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর আগামী ১৪ এপ্রিল (বুধবার) থেকে আটদিনের জন্য চলাচলে বিধি-নিষেধ তথা কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার।
১৪ থেকে ২১ এপ্রিল জরুরিসেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠান ছাড়া সরকারি-বেসরকারি সব অফিস এবং গণপরিবহন বন্ধ থাকবে।
তবে খোলা থাকবে শিল্প-কারখানা। আর অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষের বাড়ি থেকে বের হতেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
এমন বিধি-নিষেধ আরোপ পরে সোমবার (১২ এপ্রিল) প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এসব বিধি-নিষেধ কঠোরভাবে পালনের জন্য সংশিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগের সচিবদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনার অনুলিপি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব, সব বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসককে পাঠানো হয়েছে।
নির্দেশনাগুলো হলো:
১. সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
প্রতিষ্ঠানের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন। তবে বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থলবন্দর এবং তৎসংশ্লিষ্ট অফিসগুলো এ নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে।
২. বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।
৩. সব ধরনের পরিবহন (সড়ক, নৌ, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট) বন্ধ থাকবে। তবে পণ্য পরিবহন, উৎপাদন ব্যবস্থা ও জরুরি সেবাদানের ক্ষেত্রে এ আদেশ প্রযোজ্য হবে না।
৪. শিল্প-কারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। তবে শ্রমিকদের স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান থেকে নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আনা-নেওয়া নিশ্চিত করতে হবে।
৫. আইন-শৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন-কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণবিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা দেওয়া, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরগুলোর (স্থল, নদী ও সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিস, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভূত থাকবে।
৬. অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসাসেবা, মরদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। তবে টিকা কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়ত করা যাবে।
৭. খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা এবং রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত কেবল খাদ্য বিক্রয়/সরবরাহ করা যাবে। শপিংমলসহ অন্যান্য দোকান বন্ধ থাকবে।
৮. কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। বাজার কর্তৃপক্ষ স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
৯. বোরো ধান কাটার জরুরি প্রয়োজনে কৃষি শ্রমিক পরিবহনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন সমন্বয় করবে।
১০. সারাদেশে জেলা ও মাঠ প্রশাসন উল্লেখিত নির্দেশনা বাস্তবায়নের কার্যকর পদক্ষেপ নেবে এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত টহল জোরদার করবে।
১১. স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তার পক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগকে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বল প্রয়োগ করবেন।
১২. স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জুমা ও তারাবি নামাজের জামাতের বিষয়ে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা জারি করবে।
১২. উপর্যুক্ত নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ প্রয়োজনে সম্পূরক নির্দেশনা জারি করতে পারবে।
গত বছরের শেষে এবং এ বছরের শেষে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কমে যেতে থাকলেও মার্চ থেকে সংক্রমণ বাড়তে থাকে। এরপর গত ৫ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে সাত দিনের লকডাউন বা বিধি-নিষেধ জারি করে সরকার। জরুরি প্রয়োজনে সীমিত পরিসরে অফিস চালু রেখে এ বিধি-নিষেধের মেয়াদ ১১ এপ্রিল রাত ১২টায় শেষ হচ্ছে। এ নিয়ে গত ৪ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এরপর তা ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়।
কিন্তু বিধি-নিষেধ শুরু হলে গণপরিবহনের অভাবে যাত্রীদের দুর্ভোগের মধ্যে বিক্ষোভের মুখে ৭ এপ্রিল সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সিটি করপোরেশন এলাকার মধ্যে গণপরিবহন চালু রাখার অনুমতি দেয়। তবে শপিংমল ও দোকানপাট বন্ধ থাকায় তাদেরও আন্দোলনের মধ্যে ৯ থেকে ১৩ এপ্রিল সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানপাট ও শপিংমল খোলা রাখার নির্দেশনা দিয়ে ৮ এপ্র্রিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করে।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ দেখা যাওয়ায় ১৮ মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ২৬ মার্চ থেকে কঠোর লকডাউন বা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটি শেষে জনজীবন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক করার মধ্যে আবারও বেড়ে যায় করোনা সংক্রমণ। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনও বন্ধ রয়েছে।
+ There are no comments
Add yours