প্রশাসনের নিরবতায় থানচি ও রুমাতে গড়ে উঠেছে পাথর উত্তোলনের শক্তিশালী সিন্ডিকেট চক্র

Estimated read time 1 min read
Ad1

 

আকাশ মার্মা মংসিং বান্দরবানঃ

বান্দরবানে থানচি ও রুমা দুই উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন থেকে অবৈধভাবে বিভিন্ন নদী,খাল ,ঝিড়ি ঝর্না ও ছড়া থেকে পাথর উত্তোলন করে অবাধে পাচার করছেন পাচারকারীরা। থানচিতে নতুন নির্মানাধীন থানচি লিটক্রে সড়কে ধারে পাথরে বিশাল মজুতও গড়ে তুলছেন একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটে চক্র । ঐ এলাকায় ষ্টোন ক্রাশিং মেশিনে (পাথর ভাঙার যন্ত্র)প্রকাশ্যে দিবাত্রি পাথর ভাঙা হয়। পাথর ভাঙা এলাকাবাসী ও প্রশাসনে কানে , চোখে পড়লেও পাচারকারীরা শক্তিশালী সিন্ডিকেট চক্র হওয়া করার কিছু নেই। গত ২৫ শে মার্চ ও ২৯ এপ্রিল দুই দিনের পৃথকভাবে ভ্রাম্যমান আদালতে জব্দ করা পাথরও প্রাচারকারীরা ফের নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, থানচি উপজেলা সদর হতে ২৭- ৩২ কিলোমিটার দূরে স্যাইলুক্যা ত্রিপুরা পাড়া, বংক ম্রো পাড়া, সড়কে বিশাল পাথরে স্তুপ সেখানে পাহাড় কাটা স্কেভ্যাটর দিয়ে এদিক সেদিক অবিরাম পাথর নাড়াছড়া করেছে সেনাবাহিনী স্কেভেটরটি। অপরদিকে একদল শ্রমিক ট্রাক ভর্তি ঝিড়ি ঝর্না হতে পাথর নিয়ে আসছে সেখানে আনলোড করছে। অন্য একদল বোল্ডার পাথর গুলি পাথর ভাঁঙা যন্ত্রে রাতদিন অবিরাম মেশিনে ভাঙছে । অপর একদল কংক্রিট পাথর গুলি ট্রাকের বোঝাই করে থানচি লিটক্রে সড়কের পাচারে উদ্যেশে নিয়ে যাচ্ছে। এভাবে প্রতিদিন অর্ধশতাধিক ট্রাক সড়কে পরিবহনের জন্য নিয়োজিত রয়েছে । রাত পোহালেই থানচি সদর বাসষ্টেশনে সারিবদ্ধ ভাবে দেখা মিলে ঐ ট্রাক ও শ্রমিক গুলিকে। পাথর উত্তোলন, ভাঙা, পরিবহন, পাচার সব মিলে নিরাপদে ও অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে। একই সড়কে পাশে ৮,১৩,২৩ কিলোমিটার পাথরে বিশাল স্তুপ একইভাবে অবাধে পাচার করেই চলছে।

এদিকে বান্দরবান থানচি সড়কে মেনরোয়া ম্রো পাড়া, হৈতং খুমী পাড়া, দিনতে পাড়া ,কানাজিও পাড়া ঝিড়ি গুলি থেকেও পাথর উত্তোলন, ভাঙা, পাচার চলমান রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলা ১নং রেমাক্রী ইউনিয়নের রেমাক্রী খালের উপর ১০-১২টি শাখা ঝিড়ির, ২ নং তিন্দু ইউনিয়নের ঙাক্ষ্যং খালের উপর ১৫-১৬টি শাখা ঝিড়ির, ৩নং থানচি সদর ইউনিয়নে পর্দ্দা খাল ও শাখা ২-৩টি ঝিড়ির, ৪নং বলিপাড়া ইউনিয়নের কানাইজৈ ঝিড়ি, শিলা ঝিড়ি, আলমারা ঝিড়ি, ডাকছৈ পাড়া মাংগং ঝিড়ির, রুমা উপজেলা দুলাচাঁন্দ পাড়া রেমাক্রী খালে চয়ক্ষ্যং ঝিড়ি ও শাখা প্রশাখা ৫-৬টি ঝিড়িতে অবাধে পাথর উত্তোলন চলছে ।
পাথর ভাঙা কাজের নিয়োজিত শ্রমিক সরদা সামশু আলম জানিয়েছেন, গত ডিসেম্বর থেকে ৬মাস ধরে পাথর উত্তোলন, ভাঙা,ও পরিবহনে কার্যক্রম চলছে সামশু আলম বাড়ী চকরিয়া হলেও তার নিজস্ব ৫টা ষ্টোন ক্রাশিং মেশিনে (পাথর ভাঁঙ্গা যন্ত্র) রয়েছে সেখান থেকে ৫জন পাথর উত্তোলনকারীকে ১০ -১২জন শ্রমিকসহ কন্ট্রাক মাধ্যমে প্রতি ফুটে ৪০ টাকা হাড়ে তার মতে মোট ৬০-৭০জন শ্রমকি তার অধীনে কাজ করেন। পাথর উত্তোলনের ঐ অঞ্চলে ৩০-৪০জন শ্রমিক, পরিবহনের জন্য কাজ করেন একই এলাকা শ্রমিক একটি ট্রাকের ৫-৬জন করে রয়েছে। তার মতে স্থানীয়রা কোন কাজেই আসছে না ।

থানচি বাজারে চা-চক্র সময় কথা হলে পাথর উক্তোলন, ভাঁঙ্গা, পরিবহনের সাথে সংশ্লিষ্ঠ সাতকানিয়া থানা সাবেক জামাত নেতা হিসেবে পরিচিত মোঃ এমরান মিয়া বলেন, থানচি উপজেলার রয়েছে প্রভাবশালী, জনপ্রতিনিধি, সরকার দলীয় নেতাসহ সমন্বয়ে থানচি লিটক্রে সড়কে আশে পাশে ঝিড়ি-ঝর্ণা, খাল, নদীর পাশে বসবাসরত পাড়াগুলি হতে কারবারী ও হেডম্যানকে স্বল্প টাকা দিয়ে বিশাল অংকে টাকা বসিয়ে পাথর ক্রয়ের চুক্তি করে আগেই থেকে সংরক্ষিত করে রাখা হয়েছে। অর্ধশতাধিক পাড়ার প্রধানরা পৃথক পৃথকভাবে চুক্তি গুলিতে স্বাক্ষর করে রাখা হয়েছে। সে চুক্তিতে মৌজা হেডম্যান সম্মতি জ্ঞাপন রয়েছে। ঐ প্রভাবশালীরা নিজেরা পাথর উত্তোলন না করে আমাদের অমুখ ঝিড়ি সমুক ঝিড়ি সব মিলে ১০ লাক্ষ, ১২ লাক্ষ টাকা দিয়ে আমরা ক্রয় করি। সে অনুসারে আমরা ব্যয়কৃত টাকা উক্তোলনে কাজ করতে বাধ্য হয়। তবে বৈধ কাগজ পত্র রাজস্ব প্রদানে পাথর ব্যবসায়ীদের মধ্যে কারো হাতের নেই। সিন্ডিকেটে চক্রে কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, আমি সাতকানিয়া থেকে আসছি থানচি উপজেলা সব চেয়ে বড় ব্যবসা করেন মোঃ জসিম উদ্দিন, কাজী নুরু আনোয়ার, বিপ্লব মারমা মিলে সিন্ডিকেট তারা তিনজনে আমাদের চালাই ।

থানচি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ৩৬০ নং কোয়াইক্ষ্যং মৌজা হেডম্যান মাংসার ম্রো বলেন, আমি অসুস্থ সময় পাথর খেকোরা আমার মৌজায় কোয়াইক্ষ্যং ঝিড়ি হতে প্রচুর পরিমান পাথর উক্তোলন করে থানচি লিটক্রে সড়কে ৮ কিলোমিটার এর একটি পাহাড়ে স্তুপ রাখা হয়েছে । তাঁকে বলছি আর কোন সময় আমার মৌজায় হাত দিবেন না। এ রকমে চলতে থাকলে অদুর ভবিষ্যতে থানচিবাসী পানির জন্য গৃহযুদ্ধ হওয়া সম্ভাবনা বেশী।

পাথর ব্যবসায়ী মোঃ জসিম উদ্দিন মুঠোফোনে কয়েকবার চেষ্টা করা হলে ফোন রিসিভ করেনি। যোগাযোগ করা হলে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ মুজিবুর রহমান বলেন, গত কয়েক বছরে আমাদের অধিদপ্তর হতে থানচি উপজেলা অর্ধশতাধিক বিভিন্ন ঝিড়ি ঝর্না থেকে আরএফএফ পাইপের মাধ্যমে পানির সরবরাহ লাইন রয়েছে এখন পানির স্তর নিচে নামানো ফলে আর পানি পাওয়া যাচ্ছে না। পানির অভাবে পাহাড়ে হাহাকার সময়। আমাদের ডিপারমেন্ট হিমশিম খাচ্ছে । এভাবে পাহাড়ে জুম পুরানো, বাঁশ কাটা,,গাছ কাটা,পাথর উত্তোলন, বালি সহ উজাড় হলে প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদ না থাকলে পানির অভাবে গৃহবিবাদ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে থানচি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আতাউল গনি ওসমানী বলেন, সদ্য জব্দ করা পাথর গুলি ৩৬১ নং থাইক্ষ্যং মৌজা হেডম্যান মংপ্রু মারমা জিম্মায় রাখা হয়েছে , তিনি আমাদের জানাননি । সুতারাং জব্দকৃত পাথর ফের নিয়ে যাচ্ছে সেটি আমার জানা নেই । হেডম্যানের সাথে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নিজস্ব প্রতিবেদক https://khoborbangla24.net

বিশ্বজুড়ে দেশের খবর

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours