ইসমাইলুল করিম নিরব
বান্দরবানের লামায় ফাইতং ইউনিয়নে অলি কাটার ঝিরিতে মোটরসাইকেল চালক মমিনুল ইসলাম নৃশংসভাবে খুন ও ২১ মে২১ইং শুক্রবার দুপুরে লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মূল আসামীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১৫। মঙ্গলবার (২৫ মে) দিবাগত রাত ৮টায় মূল আসামী আবদুল্লাহ (১৬) কে চট্টগ্রাম বাকলিয়া থানা এলাকা হতে আটক করা হয়। আটক আব্দুল্লাহ (১৬) চকরিয়া হারবাং নোনাছড়ি এলাকার আব্দুর রশিদ ও নূর জাহান বেগম এর ছেলে।
বর্বরোচিত এই অপরাধ সংঘটনের স্বল্পতম সময়ের মধ্যে ঘটনার মূল রহস্য উদ্ঘাটন পূর্বক অপরাধের সাথে জড়িত প্রধান অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১৫। নিহত মোটর সাইকেল চালক মুবিনুল হক (১৬) কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার বড়ইতলী এলাকার মাইজপাড়ার বাসিন্দা নূরুল আলম এর ছেলে।
এই বিষয়ে বুধবার (২৬ মে২১ইং) দুপুরে র্যাব-১৫ এর কক্সবাজার সদর দপ্তর থেকে মিডিয়া এন্ড অপারেশনস্ এর সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ মোহাম্মদ শেখ সাদী প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান।
র্যাব জানায়, গত শুক্রবার ২১মে২১ইং লামা থানাধীন ফাইতং ইউনিয়নের অলিকাটা নামক স্থানে পাহাড়ের ঢালে স্থানীয় সাবেক আবু মেম্বারের লেবুর বাগানের পাশে অর্ধগলিত লাশের সন্ধান মিলে। কিন্তু কে বা কারা এই হত্যাকান্ড সংঘটিত করেছে তা সবার অজানা।
পরবর্তীতে জানা যায় অর্ধগলিত লাশটি চকরিয়ার বরইতলী এলাকার মুবিনুল হকের। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়, হত্যাকান্ডটি লাশ উদ্ধারের আনুমানিক ৪ দিন পূর্বে সংঘটিত হয়ে থাকতে পারে। এমতাবস্থায় মামলাটি তদন্তের জন্য কোন ধরণের সূত্রই পাওয়া যাচ্ছিলনা। কিন্তু র্যাব-১৫ এর চৌকস আভিযানিক দলটি উক্ত মার্ডারটি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-১৫ দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রম ও গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই হত্যাকান্ডের অন্যতম আসামী আব্দুল্লাহ কে ২৫ মে২১ইং রাত ৮টায় চট্টগ্রাম বাকলিয়া থানা এলাকা হতে আটক করে।
পরে জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃত আব্দুল্লাহ তথ্য দেয় যে, সে তার সহযোগী আসামী কায়সার (১৮), পিতা- আব্দুর রহিম এবং আব্দুর রহিম (১৮), পিতা-ইলিয়াস, উভয় সাং- হারবাং, নোনাছড়ি, থানা-চকরিয়া, জেলা-কক্সবাজারগণ ভিকটিম মুবিনুল হকে হত্যা করে।
আবদুল্লাহ আরো জানায়, তারা মুবিনুল হকের মোটর সাইকেল ছিনতাই করার উদ্দেশ্যে গত ১৮ মে২১ইং আসরের নামাজের পর চকরিয়া থানাস্থ নোনাছড়ি সুইচ গেইট নামক স্থানে পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার তারিখ ১৮ মে২১ইং মাগরিবের নামাজের পর আসামী আব্দুল্লাহ, কায়সার ও আব্দুর রহিম হারবাং নোনাছড়ি গ্রামের বাসিন্দা আসামী কায়সারের বোনের চা দোকানে একত্রিত হয়ে মুবিনুল কে হত্যা করে তার মোটরসাইকেল ছিনতাই এর চুড়ান্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করে এবং আসামী কায়সার এই উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে তার বোনের দোকান থেকে একটি স্টিলের চাকু সংগ্রহ করে।
একই তারিখ রাত অনুমান ৯টা ৩০ মিনিটের সময় আসামীরা তাদের পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের পূর্ব পরিচিত মোটরসাইকেল চালক মুবিনুলকে তার ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল নিয়ে ফাইতং, লামা, বান্দরবান এর একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য তাকে নোনাছড়ি সুইচ গেইট আসতে বলে। ভিকটিম মুবিনুল ইসলাম তাদের কথামতে তার মোটর সাইকেলটি নিয়ে রাত অনুমান ৯টা ৪০ মিনিটে নোনাছড়ি সুইচ গেইট আসে এবং আব্দুল্লাহ, কায়সার ও আব্দুর রহিম এবং ভিকটিম মুবিনসহ মোট ৪ জন মোটরসাইকেলে করে ফাইতং যাওয়ার উদ্দেশ্যে বরইতলী টু চিউবতলী রোডে অলিকাটা নামক স্থানে পৌঁছায়।
তখন আব্দুর রহিম সু-কৌশলে প্রস্রাব করার জন্য মুবিনুলকে মোটরসাইকেল থামাতে বলে। মুবিনুল মোটরসাইকেল থামালে আব্দুর রহিম প্রস্রাব করে এসে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনজন মিলে ভিকটিম মুবিনুলকে মোটরসাইকেল থেকে টেনেহিছড়ে গলায় চেপে ধরে রাস্তার পাশে মাটিতে শোয়াইয়া ফেলে এবং নৃশংসতম হত্যার উদ্দেশ্যে চাকু দিয়ে বারংবার ভিকটিমের গলায় পোচ দিতে থাকে। মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য স্ক্রু ড্রাইভারের সাহায্যে অন্ডকোষসহ শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে জখম করতে থাকে। তারপরও মৃত্যু নিশ্চিত হলে নিকটস্থ পাহাড় থেকে ভিকটিমকে ছুড়ে ফেলা হয়।
আটককৃত আসামী আব্দুল্লাহকে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে বান্দরবান জেলার লামা থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীণ। পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
এই বিষয়ে লামা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, র্যাব-১৫ থেকে আসামী হস্তান্তর করা হলে আমরা পরবর্তী আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
+ There are no comments
Add yours