আকাশ মারমা মংসিং, বান্দরবান:::
করোনা সংক্রমণ রোধে ২৩ জুলাই (শুক্রবার) ভোর ৬টা থেকে সারাদেশ ন্যায়সহ বান্দরবান জেলা শহরেও শুরু হয়েছে দুই সপ্তাহের ‘কঠোর বিধি-নিষেধ’ (লকডাউন)। এ লকডাউন বহাল থাকবে ৫ আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত।
এর আগে ঈদুল আজহার সময় মানুষের চলাচল ও পশুর হাটে কেনাবেচার বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত লকডাউন শিথিল করেছিল সরকার।
এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ঈদের আগেই গত ১৩ জুলাই এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। সেই প্রজ্ঞাপনুযায়ী সারাদেশে যানবাহন চলাচল শিথিল করা হয়েছিল ২২জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত।
এইদিকে বান্দরবান জেলা শহরে গত ১৯ জুলাই রবিবার কঠোর বিধি নিষেধে গণবিজ্ঞপ্তি দেন বান্দরবান জেলা প্রশাসক।
সেই সাপেক্ষে আজ ২৩ জুলাই সকাল থেকে যেসব নির্দেশনা রয়েছে সেইগুলো পালিত না হলে আইন্যগত ব্যবস্থা গ্রহন করবে আইনশৃঙখলা বাহিনী।
বান্দরবান জেলা প্রশাসকে প্রজ্ঞাপনে ১৯ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়। নির্দেশনাগুলো-
ক) ২৩ জুলাই থেকে সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিসসমূহ বন্ধ থাকবে।
খ) সড়ক, রেল ও নৌ-পথে গণপরিবহন (অভ্যন্তরীণ বিমানসহ) ও সব যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।
গ) শপিংমল/মার্কেটসহ সব দোকানপাট বন্ধ থাকবে।
ঘ) সব পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ থাকবে।
ঙ) সব শিল্প-কলকারখানা বন্ধ থাকবে।
চ) জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান (বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান, ওয়ালিমা), জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি ইত্যাদি বন্ধ থাকবে।
ছ) সরকারি কর্মচারীরা নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন এবং দাপ্তরিক কাজসমূহ ভার্চ্যুয়ালি (ই-নথি, ই-টেন্ডারিং, ই-মেইল, এসএমএস, হোয়াটসঅ্যাপসহ অন্যান্য মাধ্যম) সম্পন্ন করবেন।
জ) আইন-শৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিসেবা, যেমন-কৃষি পণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহনবিক্রয়, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোডিড-১৯ টিকা প্রদান, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) প্রদান কার্যক্রম, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলি, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাসজ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ব্যাংক, ভিসা সংক্রান্ত কার্যক্রম, সিটি কর্পোরেশনপৌরসভা (পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সড়কের বাতি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি কার্যক্রম), সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, ফার্মেসি ও ফার্মাসিউটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরিঅত্যাবশাকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে যাতায়াত করতে পারবে।
ঝ) জরুরি পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক/ লরি/ কাভার্ডভ্যান নৌযান/ পণ্যবাহী রেলফেরি এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে।
ঞ) কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠনবাজার কর্তৃপক্ষ স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
ট) অতি জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত (ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মরদেহ দাফনসৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। নির্দেশনা অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঠ) টিকা কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকা নেওয়ার জন্য যাতায়াত করা যাবে।
ড) খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রয় (অনলাইন টেকঅ্যাওয়ে) করতে পারবে।
ঢ) আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে এবং বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকিটপ্রমাণ প্রদর্শন করে গাড়ি ব্যবহার করে যাতায়াত করতে পারবেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদে নামাজের বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দেবে।
ণ) কোরবানী পশু চামড়া পরিবহন, সরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাত করণ বিধি-নিষেধ আওতায় বহির্ভুত থাকবে।
ত) আইশৃঙখলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়মিত টহল জোরদার করবে।
থ) জেলা প্রশাসনে উপরোক্ত টিম উপরোক্ত নির্দেশনাসহ পুর্বে নির্দেশনাসমুহ প্রতিপালনে বিষয়টি প্রতিনিয়ত তদারকি করবে।
সোমবার (১৯ জুলাই) জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে হতে মেজিষ্ট্রেট ইয়াছমিন পারভিন তিবরীজি গণ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, ২৩ জুলাই শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে ১৪ দিনের বিধি-নিষেধ শুরু হচ্ছে। চলবে ৫ অগাস্ট পর্যন্ত।
এই ১৪ দিন যদি আমরা বিধি-নিষেধ মানি তাহলে সংক্রমণের চেইনটা ভাঙতে পারবো। এজন্য সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে। সরকারের ‘বিধি-নিষেধ’ মানতে হবে। ‘বিধি-নিষেধের’ সময় সব অফিস বন্ধ থাকবে।
তিনি বলেন, সরকার ঈদের আগে ‘বিধি-নিষেধ’ শিথিল করায় সব শ্রেণির মানুষ সুন্দরভাবে ঈদ উদযাপন করতে পেরেছেন। পশুর হাটগুলোতে ভালোভাবে কোরবানির পশু কিনতে পেরেছেন। সুন্দর পরিবেশে ঈদের পর দিনের মধ্যে বাড়ি ফিরতে পারবেন। এরপর দিন ২৩ জুলাই থেকে ‘বিধি-নিষেধ শুরু হবে।
কঠোর বিধি-নিষেধ দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে আগামী ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৫ আগস্ট দিনগত রাত ১২টা পর্যন্ত কঠোর বিধি-নিষেধ’। এই সময়ে সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিল্প-কারখানাসহ সারা দেশে সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকবে।
+ There are no comments
Add yours