আকাশ মারমা মংসিং >> বান্দরবানঃ
সরকার ঘোষিত টানা কয়েকদিন লকডাউনে মানুষ ঘরবন্দি ছিল। প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। হঠাৎ দুইদিন টানা বর্ষণের ফলে বসতঘর পানির নিচে তলিয়ে গিয়ে বন্যায় কবলিত হয়ে জনজীবন বিপযর্স্থ হয়ে পড়েছে। ঘরহারা মানুষগুলি বাধ্য হয়ে ঠাঁই নিতে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে হচ্ছে। এতে সবাই একযোগে আশ্রয়কেন্দ্রের অবস্থান করার কারনে করোনা সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে আশংঙ্কা করছেন সচেতন মহল।
টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল থেকে নেমে আসা পানিতে সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বান্দরবানের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। গত বুধবার (২৮ জুলাই) সন্ধ্যা থেকে বন্যার পানিতে একের পর এক নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করে। এতে কয়েক হাজার পরিবার এখন পানিবন্দি হয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন।
শুক্রবার সন্ধ্যাউ বন্যায় কবলিত আশ্রয়কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, বন্যায় কবলিত মানুষজন বিভিন্ন মহল থেকে এসে জড়ো হয়ে একত্রে থাকছে। সেখানে এক ধরণের মিলনমেলা পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে বাচ্চারা স্বাস্থ্যবিধি তোয়াক্কা না করে খেলাধুলা মেতে ওঠেছে। যে যার মত করে যত্রতত্র ভাবে চলাফেরা করছে। প্রায় মুখে মাস্ক নেই। অনেক মহিলা নিজের পরিধান শাড়ির ওড়না আঁচল পিছিয়ে মুখ ঢেকে রাখছে। সবকিছু মিলিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোন লক্ষণ নেই বললে চলেই এমন চিত্র লক্ষ্য করা গেছে।
পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানরত ৫নং ওয়ার্ডের সুমন্ত দাশ (২৬) বলেন, আমার বসতিবাড়ি ডুবে যাওয়ায় এই বিদ্যালয়ে স্ব-পরিবার আশ্রয় নিয়েছি। এই ইউনিটে প্রায় আমরা ছয় পরিবার আছি। আমাদেরকে এসে রেড ক্রিসেন্ট থেকে মাস্ক দিয়ে গেছে। বিদ্যুৎ না থাকায় গরমে মাক্স খুলে রেখেছি।
আরেক আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থানরত ৭নং ওয়ার্ডের বন্যাকবলিত মুজিব গাজী খবর বাংলাকে বলেন (৩০) বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক পরিবার হতে অন্য পরিবারে না যাওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে। যেহেতু একসাথে থাকি তা নিয়ন্ত্রণ করার কঠিন। সেই সাথে মাস্ক পরিধান করতে বলা হয়েছে।
সেক্ষেত্রে আপনার মুখে কেন মাস্ক নেই এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বৃষ্টিতে এদিক সেদিক ঘুরোঘুরি করতে গিয়ে মাস্ক ভিজে গেছে। তাই বারান্দায় শুকিয়ে রেখেছি।
পাশে থাকা ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাসাইনচিং মারমাকে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি অশিক্ষিত মানুষ এই বিষয়ের কতটুকু বা বুঝি। তবে টিভিতে ও মানুষের মুখে শুনেছি করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে দিন দিন মানুষ মারা যাচ্ছে। অন্য মানুষের সাথে কথা বলার সময় অবশ্যই মাস্ক পরিধান করতে হবে স্বাস্থ্য বিভাগ এখানে উপস্থিত হয়ে বার্তা দিয়ে গেছে। তবুও এখানে দেখি প্রায় লোক মাস্ক ব্যবহার করছে না। অনেকে তা মানছে না।
বান্দরবান জেলা সাংবাদকর্মী উথোয়াইচিং মারমা (রনি) বলেন, একসাথে থাকার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তাঁর মতে, এই মুহুর্তে আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থানরত মানুষদের প্রত্যক কেন্দ্রের একজন করে স্বাস্থ্য কর্মী দ্বারা স্বাস্থ্যবিধি ব্যাপারে পরামর্শমূলক দিক-নির্দেশনা দিতে হবে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলেই বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ অংশৈপ্রু মারমা খবর বাংলাকে জানান, প্রত্যেক আশ্রয় কেন্দ্রে চার থেকে পাঁচ পরিবার বাধ্য হয়ে একসাথে থাকতে হচ্ছে। যার ফলে এই দুর্যোগকালীণ সময়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে সামাজিক দুরত্ব মেনে চলা কিছুটা ত্রুটি থাকতে পারে। তবে স্বাস্থ্যবিভাগ থেকে বন্যায় কবলিত আশ্রয়কেন্দ্রে মনিটরিং-এর আছে। যেসব আশ্রয়কেন্দ্রে স্বাস্থ্যকর্মী পৌছায়নি সেইখানে খোজ খবর নিয়ে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।
এ ব্যাপারে বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি খবর বাংলাকে জানান, জেলায় মোট ১৪০টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বন্যাদুর্গতরা এসব আশ্রয়কেন্দ্র ও বিদ্যালয়গুলোতে আশ্রয় নিচ্ছে।
এসব আশ্রয় নেয়া মানুষদের শুকনো খাবার দেওয়ার সময় মাস্ক পরিধান করার জন্য বলা হয়েছে। পাশাপশি এক পরিবার হতে অন্য পরিবার না যাওয়ার জন্য পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। কিন্তু একযোগে থাকার কারণে বিষয়টি কিছুটা বিঘ্ন হতে পারে বলেও জানান এই কর্মকতা।
+ There are no comments
Add yours