নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহযােগিতায় ও বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারের সাহায্যে আকাশ হতে সীডবল নিক্ষেপের মাধ্যমে মাতামুহুরী ও সাঙ্গু সংরক্ষিত বনাঞ্চলে চাম্পাফুল,পুতিজাম, ঢাকিজাম, কালােজাম,গামার, করই, জারুল, হারগাজা ইত্যাদি প্রজাতির বীজ বপন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) বেলা ১০টা৩০ মিনিটে বীজ বপন কার্যক্রম শুরু হয়।
এই সময়ে,পার্বত্য চট্টগ্রামে হেলিকপ্টারের সাহায্যে আকাশ হতে সীডবল নিক্ষেপের মাধ্যমে বনায়ন একটি বিরল ও বাংলাদেশ স্বাধীনের পর একটি ঐতিহাসিক ঘটনার স্বাক্ষী, লামা ও আলীকদম বন বিভাগ। যা মুজিব শতবর্ষ ও সুবর্ণ জয়ন্তীর উপহার হিসেবে কালের স্বাক্ষী হয়ে থাকবে।
তবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদর দপ্তর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের বান্দরবান রিজিয়নের রিজিয়ন কমান্ডর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মােঃ জিয়াউল হক, এএফডব্লিউসি, পিএসসি এ কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য জীব-বৈচিত্র দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে উদ্ভিদ ও প্রাণী বৈচিত্রের অনেক প্রজাতি ইতােমধ্যে আমাদের পরিবেশ থেকে হারিয়ে গেছে।বহু উদ্ভিদ ও প্রাণী বিরল তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।এ ভয়াবহ অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে পারে বৃক্ষ ও বনাঞ্চল।
কিন্তু, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব হ্রাস, জীব-বৈচিত্র সংরক্ষণ এবং সর্বোপরি দেশের উন্নয়নের মূলধারা অব্যাহত রাখতে হলে ব্যাপকহারে বনায়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা জরুরী।
একই সাথে জনসাধারণকে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতন করা এবং বনাঞ্চল সৃষ্টিতে উদ্বুদ্ধ করা একান্ত অপরিহার্য।
তিনি আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযােগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি আত্মনির্ভরশীল, উন্নত ও টেকসই, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সােনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
তারই ধারাবাহিকতায় পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সমগ্র বাংলাদেশে টেকসই পরিবেশ উন্নয়নের অংশ হিসেবে সবুজায়ন ও বনায়ন কর্মসূচীর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে এবং তা বাস্তাবায়ন করা হচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের এই সংরক্ষিত বনাঞ্চলগুলি আমাদের দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্যের জন্য একান্ত অপরিহার্য।তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগ মােকাবেলা,পরিবেশ রক্ষা ও একটি অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এই ধরনের বনায়ন কর্মসূচীর গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
আজকের এই বনায়ন কর্মসূচীতে ৪৮০ কেজি বিরল ও বিলুপ্ত প্রজাতির বীজ ছিটানাে হয়েছে, যা জীব-বৈচিত্র সংরক্ষণ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
তবে শুধুমাত্র সরকারি পর্যায়ে নয় ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়েও বেশি বেশি করে গাছ লাগানাের জন্য তিনি সবাইকে আহবান জানান।
লামা বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এম কায়সার জানিয়ছেন,হেলিকপ্টারের মাধ্যমে উপর থেকে বীজ ছিটানাে হলে এতে বীজের অঙ্কুরােদগম কেমন হবে তা একটি পরীক্ষার বিষয়।
অধিকাংশ বীজ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।তবে কিছু পরিমাণ বীজও যদি অঙ্কুরােদগম হয় তাও বনাঞ্চলের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য সহায়ক হবে।
এসময় চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক মোহাম্মেদ আব্দুল আউয়াল সরকার, বান্দরবান বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ ফরিদ মিঞা, লামা বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস. এম. কায়চার সহ সেনাবাহিনী ,বনবিভাগ ও সরকারী বিভিন্ন উর্ধতন কর্মকর্তার উপস্থিত ছিলেন।
আয়োজকের জানান, বিট্রিশ আমলের পর এই প্রথম রির্জাভ বন এলাকা রক্ষায় এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রিজাভ বনের যেসব এলাকায় গাছের সংখ্যা কম এসব এলাকাতেই হেলিকপ্টার থেকে বীজ ছিটানো হয়েছে বলে বন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
এছাড়া আলীকদম উপজেলার আলীকদম-পোয়ামুহুরী সড়কে লামা বন বিভাগ ও বিএটিবি’র বনায়ন প্রকল্পের আওতায় বিস্তীর্ণ সাঙ্গু রির্জাভ এলাকায় ফলজ, বনজ ও সৌন্দর্য্য বর্ধনকারী বিভিন্ন প্রজাতির চারা রোপন করা হবে।বিএটিবি’র বনায়ন প্রকল্পের আওতায় সড়ক সৌন্দর্য্য বর্ধনে লামা বন বিভাগকে ৫৫ হাজার চারা দেয়া হয়।
পরিবেশ বিপর্যয়ে চোরাকারবারির উৎপাত, অপরিকল্পিত জুম চাষ সহ নানা কারণে প্রাকৃতিক এই রিজাভ ফরেস্ট এখন অনেকটাই উজার হতে বসেছে।
+ There are no comments
Add yours