বিপুল মিয়া, ফুলবাড়ী( কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি >>
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে কোন ক্রমেই থামছে না বাল্যবিয়ে। করোনা মহামারী সময়ে উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮৭ ও বড়ভিটা উচ্চ বিদ্যালয়ে এস এস সি পরীক্ষার্থী তিন ছাত্রসহ ৫৫ জন স্কুলছাত্রীর বাল্যবিয়ের বিষয়টি মঙ্গলবার রাত ১০ টায় নিশ্চিত করেছেন দুই স্কুলের প্রধান শিক্ষক।
এই দুই স্কুলে ১৪২ জন স্কুল ছাত্রীসহ উপজেলার ৪৩ টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঁচ শতাধিক স্কুল ছাত্রীর বাল্যবিয়ের খবর পাওয়া গেছে বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো.আব্দুল হাই।সবচেয়ে বেশি বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটেছে বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও বড়ভিটা উচ্চ বিদ্যালয়ে।এর মধ্যে ৬ষ্ঠ, ৭ম ও ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীও রয়েছে।
বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহা.মতিউর রহমান খন্দকার জানান, প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে আমরা ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম ও এসএসসিপরীক্ষার্থী কিশোরীদের মধ্যে ৮৭ জনের বিয়ের খবর পেয়েছি।
এদের সকলের বাড়িতে গিয়ে বিয়ের বিষয়ে তথ্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।অনেকের ক্ষেত্রে সহপাঠী ও এলাকার লোকজনের কাছে তথ্য নিয়ে এ খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
তিনি আরও জানান এ অঞ্চলের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর পরিবার চরাঞ্চলের বাসিন্দা এবং এরা দারিদ্র পরিবারে বসবাস করে।এর মধ্যে স্কুল বন্ধ থাকায় বাল্যবিয়ের প্রবণতা বেড়ে গেছে।স্কুল খোলা থাকলে এতো বেশি সংখ্যক বাল্যবিয়ে হতো না।
বড়ভিটা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.শরীফ উদ্দিন মিয়া জানান, তিন স্কুল ছাত্র ও ৫২ জন স্কুল ছাত্রী করোনা কাল সময়ে বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন।তিনি বাল্যবিয়ের সংখ্যাটি উপজেলা মাধ্যমিক অফিসে জানিয়েছেন।
তিনি আরও জানান ‘আমাদের কাজ এখন এই শিক্ষার্থীদের কীভাবে বিদ্যালয়ে ফেরানো যায় সে বিষয়ে কাজ করা।ইতোমধ্যে বিবাহিতদের অনেকে স্কুলে আসতে শুরু করেছে।আশা করছি বাকিরাও খুব দ্রুত স্কুলমুখী হবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধান শিক্ষক।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো.আব্দুল হাই জানান, উপজেলার ৪৩ টি মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ঐ সব প্রতিষ্ঠানে মোট ৫২৩ জনমেয়ে শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়ে গেছে।তিনি আরও জানান ,এটা সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান শিক্ষকদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য।
এতে একটু কম বেশি হতেও পারে। আমরা সকল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের হোম ভিজিটের নির্দেশনা দিয়েছি।এসব শিক্ষার্থীদের প্রকৃত তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি যাতে এদেরকে স্কুলমুখী করা যায় সেজন্য আমরা ইতি মধ্যেই কাজ শুরু করেছি।
কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসার (ডিইও) মো.শামসুল আলম জানান, এখনও সব উপজেলার তথ্য হাতে পাওয়া যায়নি। আমরা সঠিক তথ্য উপাত্ত সংগ্রহে কাজ করে যাচ্ছি। সবগুলো উপজেলার তথ্য পেলে বাল্যবিয়ের শিকার শিক্ষার্থীদের প্রকৃত সংখ্যা জানা যাবে।
ডিইও আরও জানান, বিয়ে হয়েছে এমন শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে বিদ্যালয় মুখী হচ্ছে। আশা করছি শিক্ষার্থী উপস্থিতির সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়বে।
তবে যেভাবে আশঙ্কাজনক হারে বাল্যবিয়ে বেড়েই চলছে তাতে আগামী দিনের জন্য সত্যিই ভাবনার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।এটা প্রতিরোধ করতে হলেই সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে।
+ There are no comments
Add yours