বিপুল মিয়া, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম )প্রতিনিধি >>
উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিশু-কিশোরসহ সব বয়সীদের আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় চরম উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবকমহল।
আত্মহত্যা একটি সামাজিক ব্যাধি হলেও এর বৃদ্ধির কারণ হিসেবে দারিদ্রতা, প্রেম ভালবাসা ও মানসিক বিকাশে কাজে রাষ্ট্র এবং সমাজের দুর্বলতাকে দায়ী করছেন সুশীল সমাজ।
সেই সঙ্গে অল্প বয়সে প্রেমের সম্পর্ক, অসংস্কৃতিকেই, সামাজিক বৈষম্য, পারিবারিক কলহ, মাদক, ইন্টারনেটের অপব্যবহার, সন্তানের প্রতি অভিভাবকদের উদাসীনতা এমন অসংখ্য কারণে আজ সন্তানরা তাদের জীবনের মূল্য কি সেটা বুঝতে না পেরেই আত্মহত্যার মতো জঘন্য অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে বলে দায়ী করছেন স্থানীয়রা।
আত্মহত্যার প্রতি রোধে ব্যাপক জন সচেতনামূলক উঠান বৈঠক, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আলোচনা সভাসহ সামাজিকভাবে সবাইকে এগিয়ে আসার জোর দাবি জানিয়েছেন সুশীল সমাজসহ স্থানীয়রা।
ফুলবাড়ী থানা সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সাল থেকে চলতি বছরের ২৩ আগস্ট পর্যন্ত এ উপজেলা বিষ পানে আত্মহত্যা করেছে ১০ জন ও গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে ১৪ জন। দেড় বছরে ২৪ জনের আত্মহত্যার ঘটনায় চরম উদ্বিগ্ন অভিভাবক মহল।
প্রেমিক অন্য মেয়েকে বিয়ে করায় প্রেমিকা কিশোরী চিরকুট লিখে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা, বাবা-মায়ের কাছে একটি এ্যান্ড্রুয়েট ফোন কিনে না দেয়ায় ৯ম শ্রেণীর ছাত্র গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা, শ্বশুড় বাড়ি যাওয়াকে কেন্দ্র করে নববধুর আত্মহত্যা, গৃহবধু স্বামীর বাড়িতে না আসায় অভিমানে গলায় ফাঁস দিয়ে স্বামীর আত্মহত্যা।
এছাড়াও তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই আত্মহত্যা ঘটনায় উপজেলা ব্যাপক চাঞ্চলের সৃষ্টি হওয়ায় অভিভাবকরা আরও বেশি চিন্তিত হয়ে পড়েছে।
মিতুর মামা মমিনুল জানান, ভাগ্নির সঙ্গে রাজু এক বছর ধরে প্রেম করে অন্য মেয়েকে বিয়ে করায় মিতু আত্মহত্যা করেছে।রাজুই আমার ভাগ্নি মিতুর আত্মহত্যার জন্য দায়ী।তাই রাজুসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছি।
মামলার ১৬ দিন অতিবাহিত হলেও পুলিশ মূল আসামী রাজুসহ অন্যদের আটক করতে না পাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।আমার ভাগ্নির আত্মহত্যা প্ররোচণাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে ভবিষ্যেতে এ ধরণের ঘটনা ঘটবে বলে আশা করি।
দিনমজুর নাছির উদ্দিন বলেন, আমি কামলা দিয়া খাই।আমার ছেলেটা স্মাট ফোন কিনি চাইল আমি কিনি দিবার পাই নাই দেখি আমার ছেলেটা আত্মহত্যা করি মারা গেছে।
সাইফুর রহমান সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. রফিকুল ইসলাম ও নাওডাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল হানিফ সরকার জানান, সামাজিক,পারিবারিক, অর্থনৈতিক,পরকীয়া সমস্যা,যৌতুক,কর্মসংস্থানের অভাবের কারণে হতাশা বাড়ছে এবং আগামী প্রজন্ম তাদের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিঘ্ন থাকায় এ উপজেলায় আত্মহত্যার ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তাই আত্মহত্যা প্রতিরোধে রাষ্ট্র, সমাজ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এনজিও, পরিবার থেকে আগামী প্রজন্মের মানসিক বিকাশের জন্য জনসচেতনামূলক প্রচার-প্রচারনার দাবী জানিয়েছেন এই দুই অধ্যক্ষ।
স্বপ্নসিঁড়ির সমাজকল্যাণ সংস্থার’র সভাপতি মোশারফ মন্ডল জানান, এই উপজেলায় বিভিন্ন প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে সচেতন মূলক কার্যক্রম চলমান আছে, এছাড়াও বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে গিয়ে এই বিষয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।
ফুলবাড়ী থানার ওসি রাজীব কুমার রায় জানান, গত ২০২০ সাল থেকে চলতি বছরের ২৩ আগস্ট পর্যন্ত এই উপজেলায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই বিভিন্ন বয়সের ২৪জন ব্যক্তির আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। থানা পুলিশের পক্ষ থেকে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের পাড়া-মহল্লায় আত্মহত্যার প্রতিরোধে জনসচেতনমূলক উঠান-বৈঠক অব্যাহত আছে।
বৈঠকে কিশোর-কিশোরী, ইউপি সদস্যসহ অভিভাবকদের মাঝে তাদের সন্তানদের সাথে বন্ধু সুলভ আচারণ ও বিশেষ গুরুত্ব রাখলে আত্মহত্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
+ There are no comments
Add yours