আজিজুল হক চৌধুরী >>
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে বর্তমান সরকারের ফাস্টট্র্যাক প্রকল্পগুলোর অন্যতম চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের মাধ্যমে ঢাকা-কক্সবাজার রেল যোগাযোগ চালু করা।
প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২৩ সালের জুনে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ঢাকাসহ সারা দেশের সঙ্গে কক্সবাজারের রেল যোগাযোগ শুরু হবে।
সবচেয়ে অবাক করা তথ্য হল এই রেলপথে থাকা ৯১ বছরের পুরোনো কালুরঘাট সেতু, ২০ বছর আগে সেতুটি মেয়াদোত্তীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ এর ওপর দিয়েই চলবে বহু আকাঙ্ক্ষিত ঢাকা-কক্সবাজার দ্রুতগামী ট্রেন।
বর্তমান কালুরঘাট সেতুর দৈর্ঘ্য ৬৩৮ মিটার। এর স্প্যান সংখ্যা ১৯। ১৯৩১ সালে এটি ট্রেন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়।
পরে ১৯৬২ সালে এর ওপর ইস্পাতের পাটাতন ও বিটুমিন ব্যবহার করে এটি সব ধরনের যান চলাচলের জন্য উপযোগী করা হয়। এরপর বেশ কয়েক দফায় জরাজীর্ণ সেতুটির মেরামত হয়েছে। কিন্তু এটি এখনো ঝুঁকিপূর্ণই রয়ে গেছে।
সেতুটি নির্মিত হয় ১৯৩০ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে ২০০১ সালেই ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা দেয়া হয়। এরপরও সেতুটির ওপর দিয়ে ট্রেন থেকে শুরু করে চলাচল করছে সব ধরনের হালকা ও ভারী যানবাহন।
এমন পরিস্থিতিতে সেতুটি মেরামত করে এ ট্রেন চলাচলের উপযোগী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এ সেতু ব্যবহার করেই ঢাকা-কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের ভারী ট্রেন পরিচালনার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সূত্র মতে, বর্তমানে কালুরঘাট সেতু দিয়ে ১১ দশমিক ৯৬ টন এক্সেল লোড বিশিষ্ট ছোট লোকোমোটিভ কোচ চলাচল করে। যেহেতু এ পথে নতুন রেলপথ এখনো নির্মাণ হয়নি, তাই সেতুটির গার্ডার ও অন্যান্য অবকাঠামো পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করে প্রতিটি এক্সেল লোডে ১৫-১৬ টন ওজনের ইঞ্জিন ব্যবহার করতে চায় রেলওয়ে।
এজন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের তিন শিক্ষককে পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
অক্টোবরেই বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দলটির কালুরঘাট সেতু পরিদর্শনের কথা রয়েছে। তাদের হাতে রয়েছে এর নকশাও।তারা পরিদর্শনের এক মাসের মধ্যে সেতু সংস্কারের প্রস্তাব রেলওয়ের কাছে জমা দেবে।
এরপর সে অনুযায়ী সেতু মেরামতের কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সেতু বিভাগ। দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প শেষ হওয়ার আগেই সেতুটির ত্রুটি সারিয়ে ভার বহনের সক্ষমতা বাড়াতে চায় রেলওয়ে।
এ বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. সবুক্তগীন জানান, কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন পরিচালনার জন্য কর্ণফুলী নদীতে একটি নতুন সেতু নির্মাণের প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন।
কিন্তু দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ হলেও ওই সেতুটি নির্মাণের কাজ এখনো শুরুই হয়নি।যার কারণে পুরনো সেতুটি বিশেষভাবে সংস্কার করা হবে।
বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দলটি সেতু পরিদর্শন শেষে কারিগরি প্রস্তাব দেবে। এরপর সে অনুযায়ী সেতুর সংস্কার করা হবে। এ কাজ বাস্তবায়ন হলে নতুন সেতু নির্মাণ হওয়ার আগে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন চলাচলে কোনো সমস্যা হবে না বলেও প্রত্যাশা করেন তিনি।
অন্যদিকে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে।
সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পটির আগস্ট পর্যন্ত কাজ শেষ হয় ৬২ শতাংশ। ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা ও নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে প্রকল্পের নির্মাণ সময় বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।
যদিও কক্সবাজারের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ তৈরিতে দোহাজারী থেকে মিয়ানমারের ঘুমধুম সীমান্ত পর্যন্ত রেললাইন প্রকল্পটি একনেকে পাস হয় ২০১০ সালে। পরে কয়েক বছর নকশাসহ নানা জটিলতায় প্রকল্পটির কাজ স্থগিত থাকে। ২০১৬ সালে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রেলপথটি নির্মাণের কার্যক্রম ফের শুরু হয়।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন করে সম্ভাব্যতা যাচাই, ডিপিপি তৈরি, অর্থায়ন নিশ্চিতকরণ, দরপত্র আহ্বান ও কার্যাদেশ শেষে এ সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হতে সময় লাগবে আরো সাত-আট বছর। ফলে সে সময় পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কালুরঘাট সেতুর ওপর দিয়েই চালাতে হবে কক্সবাজার রুটের ট্রেন।
+ There are no comments
Add yours