বিপুল মিয়া, ফুলবাড়ী প্রতিনিধি::
বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়ায় ছয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা এমপিওর জন্য আবেদন করতে পারছেন না এবারও। একই অবস্থা সেখানকার ভূমি মালিকদেরও।
এমপিও পেতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শর্ত শতভাগ পূরণ করা হলেও প্রতিষ্ঠানের নামে জমি রেজিস্ট্রেশন ও হস্তান্তর করতে না পারায় ছয় বছর ধরে এ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের।
সরকারিভাবে দাসিয়ারছড়ার জমি রেজিস্ট্রেশন বন্ধ থাকায় নামজারি করা সম্ভব হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে শর্ত শিথিল করে অনলাইনে এমপিও আবেদনের সময় বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীরা।
দাসিয়ারছড়া ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার ১৬২টি বিলুপ্ত ছিটমহলের মধ্যে আয়তন ও লোকসংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে বড়। ১৯৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি অনুযায়ী দাসিয়ারছড়ার আয়তন এক হাজার ৬৪৩ একর।
বাংলাদেশ হওয়ার পর এ ভূখণ্ডে ভাগ হয়ে ফুলবাড়ী, কাশিপুর ও ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। ছিটমহল বিনিময় হওয়ার সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের যুক্ত হন দাসিয়ারছড়াবাসী। এরপর থেকে উন্নয়ন হয়েছে অনেক।
ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাট হয়েছে। তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ক্লিনিক নির্মাণ করা হয়ে এ ভূখণ্ডে। তা ছাড়াও একটি মাদ্রাসা ও চারটি মাধ্যমিক ও একটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় নির্মাণ করা হয় এখানে।
বেকার সমস্যা দূর করতে এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে শুধু বিলুপ্ত ছিটমহলের অধিবাসীদের শিক্ষক-কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দেন ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা।শিক্ষক-কর্মচারীরা নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে ছয় বছর ধরে ছাত্রছাত্রীদের নিয়মিতভাবে পাঠদানসহ যাবতীয় দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলো পাঠদানের রেজিস্ট্রেশন পেয়ে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে প্রতি বছর। বেশকিছু প্রতিষ্ঠানে একাধিক পাকা ভবনও হয়েছে। কিন্তু অবকাঠামোসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকলেও শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শর্ত শতভাগ পূরণ থাকা সত্ত্বেও শুধু জমি রেজিস্ট্রেশন করার অভাবে এ ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন তারা। সরকারিভাবে দাসিয়ারছড়ার জমি রেজিস্ট্রেশন বন্ধ থাকায় জমির খাজনা-খারিজ ও নামজারি করাও সম্ভব হচ্ছে না।
এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ জমি মালিকরা। মৌজা মূল্য নির্ধারণের জটিলতা থাকায় খতিয়ান হাতে পেলেও মাঠ রেকর্ডের ঝামেলায় রয়েছেন এখানকার অধিবাসীরা। অর্থনৈতিক সমস্যা হলেও বিক্রি করতে পাচ্ছেন না নিজস্ব জমি।
দাসিয়ারছড়া সমন্বয়পাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নুর ইসলাম বলেন, আমাদের তিন শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে ৪৯ জন এসএসসি পরীক্ষার্থী।
প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোও রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সব শর্ত শতভাগ পূরণ থাকা সত্ত্বেও শুধু জমি রেজিস্ট্রেশন করার অভাবে আমাদের বিদ্যালয় এমপিওভুক্তি করা হচ্ছে না। এ অবস্থায় পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতন জীবনযাপন করতে হচ্ছে।
কামালপুর মইনুল হক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল হাই জানান, দাসিয়ারছড়ায় এখনও জমি রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়নি। অথচ এমপিওর জন্য আবেদনের শেষ তারিখ ৩১ অক্টোবর। তাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে শর্ত শিথিল করে আবেদনের সময় বৃদ্ধির দাবি জানান তিনি।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিমল চাকমা জানান, দাসিয়ারছড়ার প্রায় মৌজার আরএস খতিয়ান পাওয়া গেছে। এসব মৌজার মূল্য নির্ধারণের জটিলতা থাকায় জমি রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে না।
প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা আমাদের কাছ থেকে জমি রেজিস্ট্রেশন প্রত্যয়ন চাইলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা না থাকায় দেওয়া সম্ভব হয়নি।
+ There are no comments
Add yours