বিপুল মিয়া,ফুলবাড়ী প্রতিনিধি ::
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও চালক না থাকায় র্দীঘ ১০ মাস ধরে অ্যাম্বুলেন্স থেকে বঞ্চিত। ফলে চরম দূর্ভোগে অসুস্থ-রোগী-স্বজনসহ হাজারও মানুষ।
চরম দুর্ভোগ নিয়ে অসুস্থ রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বাধ্য হয়ে উচ্চ মূল্যে মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকারসহ বেসরকারী অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে কুড়িগ্রাম-রংপুর-মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক -হাসপাতালে ছুঁটছেন রোগী ও স্বজনরা।
এদিকে, র্দীঘ ১০ মাস অতিবাহিত হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অ্যাম্বুলেন্স সেবা দিতে না পাড়ায় হাজারও মানুষ চরম-ভোগান্তিতে পড়েছেন।
হাসপাতাল সুত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারী তৎকালীন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সামছুন্নাহারসহ অপর একজন ডাক্তারের সরকারি কোয়াটারে চুরি সংঘটিত হয়। কোয়াটারের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে চুরির সাথে জড়িত থাকার অপরাধে ৪ জনকে আটক করে পুলিশ।
নির্দেশ দাতা হিসাবে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক একাব্বর আলী (৪৫)কেও আটক করা হয়। পরে পাঁচ জনের বিরুদ্ধে চুরির মামলা দায়ের করে তাদেরকে কুড়িগ্রাম জেল হাজতে পাঠায় পুলিশ। চুরির নির্দেশ দাতা হিসাবে আটক অ্যাম্বুলেন্স চালক একাব্বর আলীকে ১৩/০১/২১ তারিখেই সাময়িক বরখাস্ত করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সেই থেকে গ্যারেজে তালাবদ্ধ অবস্থায় পরে আছে অ্যাম্বুলেন্স। ১১ই এপ্রিল অ্যাম্বুলেন্স চালক একাব্বর আলী কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে আসলেও বরখাস্তকৃত ওই চালক দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চালার নিয়ম নেই বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা এলাকার আসাদুজ্জামান বিপ্লব জানান, আমার মেয়ে অসুস্থ। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার বুধবার সকালে ফুলবাড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যাম্বুলেন্সের জন্য আসলে ১০ মাস ধরে চালক না থাকায় বাধ্য হয়ে বাড়তি মুল্য দিয়ে বে-সরকারী অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে রংপুরে যায়। তিনি দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স চালক দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোড় দাবী জানান।
একই ইউনিয়নের কুটিচন্দ্রখানা এলাকার আব্দুল জলিল জানান, অ্যাম্বুলেন্সের চালক না থাকায় আমরা রোগীর স্বজনরা চরম বিপাকে পড়েছি। বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে মাইক্রোবাস ভাড়া করেই অসুস্থ রোগীকে রংপুর নিয়ে যাচ্ছি।
তিনি অ্যাম্বুলেন্সে অক্সিজেন আছে অনেক সুবিধা, খরচও অনেক কম। মাইক্রোবাসে অক্সিজেন নাই খরচও অনেক বেশি। আমরা অনেক চরম দুর্ভোগ সহ্য করছি। ১০ মাস অতিবাহিত হলেও কর্তৃপক্ষ অ্যাম্বুলেন্স চালকের ব্যবস্থা করেনি।
বরখাস্তকৃত অ্যাম্বুলেন্স চালক একাব্বর আলী জানান, চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারী তৎকালীন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সামছুন্নাহার ষড়যন্ত্র করে আমাকে চুরির নির্দেশ দাতা হিসাবে মামলা দিয়েছে।
মামলা হওয়ায় একই তারিখেই আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আমি উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে এই মামলার নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠ তদন্তের জন্য জোড়দাবী জানাচ্ছি।
ফুলবাড়ী প্রেসক্লাবের সভাপতি এমদাদুল হক মিলন জানান, হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স আছে চালক না থাকায় র্দীঘ ১০ মাস থেকে এ উপজেলার হাজারও মানুষ অ্যাম্বুলেন্স সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, যেখানে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া কিলোমিটার প্রতি দশ টাকা সেখানে ফুলবাড়ী থেকে কুড়িগ্রাম ১৫শ থেকে ২ হাজার টাকা, লালমনিরহাট ১ হাজার থেকে ১২ শ টাকা এবং বংপুর ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হচ্ছে ফুলবাড়ীর জনসাধারণকে।
কর্তৃপক্ষ চালকের ব্যবস্থা না করায় জনগণকে এ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এটা খুবেই দুঃখজনক। তাই তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অ্যাম্বুলেন্স সেবা সচল করার দাবী জানান।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আবুহেনা মোস্তফা কামাল জানান,আমার যোগদান চলতি বছরের ১৩ই জানুয়ারী। সেই দিনেই অ্যাম্বুলেন্স চালক একাব্বরকে বরখাস্ত করা হয়।
চালক একাব্বর জামিনে মুক্ত হলেও আদেশ তুলে না নেওয়া পর্যন্ত ঐ চালক দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চালানোর কোন বিধান না থাকায় ১৩ জানুয়ারী থেকে অ্যাম্বুলেন্স তালাবদ্ধ অবস্থায় গ্যারেজে পড়ে আছে। বিষয়টি একাধিকবার মৌখিক ও লিখিত ভাবে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুমন দাস জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক যিনি নিয়োজিত ছিলেন তিনি সাময়িক বরখাস্ত। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা প্রক্রিয়াধীন আছেন।
অ্যাম্বুলেন্স চালক নেওয়ার ব্যাপারে খুব দ্রুত সময়ে উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকের মাধ্যমে চেষ্টা চারিয়ে যাচ্ছি। আশা করি অল্প সময়ের মধ্যে তা নিরসন হবে বলে আমার বিশ্বাস
+ There are no comments
Add yours