কুড়িগ্রামে বছর না ঘুরতেই ধ্বসে পড়লো কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়ক

Estimated read time 1 min read
Ad1

 

ইউনুস আলী,কুড়িগ্রাম:
কুড়িগ্রামের উলিপুর পৌরসভার জাইকা প্রকল্পের অধিনে নির্মিত প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক বছর না ঘুরতেই ধ্বসে পড়ার অভিযোগ উঠেছে।

 

এছাড়া সড়ক রক্ষায় নির্মিত দুইটি গাইড ওয়ালও হেলে পড়েছে। এ অবস্থায় চুড়ান্ত বিল প্রদানের প্রস্তুতি সম্পন্ন করছেন কর্তৃপক্ষ।
পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, নারিকেলবাড়ি তিস্তারপাড় সটিবাড়ি থেকে খামার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত ১৩শ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ ফিট প্রস্থের সড়ক জাইকা প্রকল্পের অধিনে ৯৬ লাখ টাকা ব্যায়ে ২০১৯ সালে নির্মান করা হয়। এ সময় সড়কটি ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষার জন্য দুই স্থানে গাইড ওয়াল নির্মান করা হয়েছে। সড়কটির নির্মান কাজ করেন স্থানীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মের্সাস অন্বেষা ট্রেডার্সের স্বতাধিকারী আওয়ামীলীগ নেতা শাহীনুর আলমগীর ওরফে আলম।
এলাকাবাসী জানায়, সড়কটি নির্মানের সময় নিম্ন মানের নির্মান সামগ্রি ব্যবহার করা হয়। এ সময় স্থানীয়রা কয়েক দফায় বাঁধা দিলে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে কাজ সম্পন্ন করেন ওই ঠিকাদার। কিন্তু বছর না ঘুরতেই ২০২০ সালের মার্চ-এপ্রিল মাসে বৃষ্টি শুরু হলে নির্মিত সড়কের দুই স্থানে প্রায় ১শ মিটার ধ্বসে পড়ে। একই সঙ্গে ৮ বছর পূর্বে নির্মিত কাঁচা সড়ক রক্ষায় ১শ ফিটের গাইড ওয়ালের সঙ্গে ২০ফিট নতুন করে গাইড ওয়াল নির্মান করা হয়। একই সঙ্গে পৃথক এক স্থানে ৮০ফিট গাইড ওয়ালও নির্মান করা হয়। বর্তমানে সড়কটির ওই দুই স্থান ধ্বসে যাওয়া ও গাইড ওয়াল হেলে পড়ার ফলে ১০ফিট প্রস্থের সড়কের কোথাও ৬ফিট কোথাও ৭ফিট করে রয়েছে। ফলে প্রতিনিয়তই সেখানে দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন পথচারীরা।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সড়কটি নির্মানের সময় ৮বছর পূর্বে নির্মিত গাইড ওয়ালটি ঘসে-মেঝে নতুন নির্মিত বলে কাগজে কলমে চালিয়ে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে সড়ক ধ্বসে পড়াসহ গাইড ওয়াল হেলে পড়লেও ওই কাজের চুড়ান্ত বিল প্রদানের প্রস্তুতি সম্পন্ন করছেন পৌরসভা কর্তৃপক্ষ।


স্থানীয় কামরুজ্জামান (৯০), আঃ খালেক (৫৪), মঞ্জুরুল ইসলাম (৬৮), নুর হাবীব (২৬), সানি রায়হান (১৯), আরিফ মিয়া (২২)সহ অনেকে অভিযোগ করে বলেন, সড়কটি নির্মানের সময় ঠিকাদার নিম্ন মানের সামগ্রি দিয়ে কাজ করার সময় বাঁধা দিলে তিনি ক্ষমতাসীন দলের দাপট দেখিয়ে সবাইকে চুপ করিয়ে রাখেন।
ঠিকাদার শাহীনুর আলমগীর উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-প্রচার সম্পাদক। তিনি ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব খাটিয়ে উপজেলার ঠিকাদারী ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করে আসছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ঠিকাদার জানিয়েছেন। জেলা এবং জেলার বাহিরের ঠিকাদারগণ এ উপজেলায় কোন কাজ পেলে স্থানীয় ঝামেলা এড়ানোর জন্য তার কাছে বিক্রি করে দেন। আর এসুযোগে গোটা উপজেলায় ৮-১০টি সাইডে কয়েক কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে তার।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মের্সাস অন্বেষা ট্রেডার্সের স্বতাধিকারী শাহীনুর আলমগীর জানান, জাইকা প্রকল্পের অধিনে ওই সড়কের কাজ ৩বছর পূর্বে করা হয়েছে। সড়কটি ধ্বসে পড়া ও দুইস্থানে গাইড ওয়াল হেলে পড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বন্যার সময় সড়কটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কাজ শেষ হওয়ার এতোদিন পেরিয়ে গেলেও চুড়ান্ত বিল উত্তোলন করেননি কেনো জানতে চাইলে তিনি উক্ত বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করেন।
উলিপুর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মাহাবুবুল আলম বলেন, ওই সড়কের কিছু অংশ ধ্বসে পড়ার বিষয়ে তিনি অবগত আছেন। বিল প্রদানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, চুড়ান্ত বিল প্রদানের প্রস্তুতি চলছে। তিনি আরও বলেন, বিল প্রদানের পূর্বেই যদি ক্ষতিগ্রস্থ অংশ ঠিকাদার নির্মান করে না দেন তাহলে প্রয়োজনে সড়কের ক্ষতিগ্রস্থ অংশের বিল কর্তন করে চুড়ান্ত বিল প্রদান করা হবে। গাইড ওয়ালের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঠিকাদার গাইড ওয়ালের পাশ থেকে মাটি তুলে সড়কের পাশে ফেলায় গাইড ওয়াল হেলে পড়েছে।
এ প্রসঙ্গে জাইকা প্রকল্পের রংপুর বিভাগীয় রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার (আর.ই) বিজয় কুমার দাসের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমাকে জানতে হবে এবং দেখতে হবে। এরপর এ বিষয়ে সঠিক মন্তব্য করতে পারবো।
উলিপুর পৌরসভার মেয়র তারিক আবুল আলা জানান, এখানে ঠিকাদারের খুব একটা দোষ নেই। যতদুর শুনেছি স্থানীয় লোকজন রাস্তার পাশ থেকে মাটি কাটায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টু বলেন, দলের প্রভাব খাটিয়ে কেউ কোন অন্যায় কাজ করলে তা সমর্থন যোগ্য নয়। জাইকা প্রকল্পের কাজ তো আরও সেনসিটিভ। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উলিপুরে সবচেয়ে নি¤œমানের কাজ করছেন ঠিকাদাররা। জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ দলের নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ কোন অন্যায় কাজ করলে তা ঠিকাদারী হউক বা অন্য কিছু হউক তার দায় দায়িত্ব দল নিবে না।

নিজস্ব প্রতিবেদক https://khoborbangla24.net

বিশ্বজুড়ে দেশের খবর

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours