কুড়িগ্রামে ৫৪ লাখ টাকার সেতু দেবে মানুষের ভোগান্তি চরমে

Estimated read time 1 min read
Ad1

 

ইউনুস আলী,কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ

কুড়িগ্রামের সীমান্তবর্তী উপজেলা রৌমারীর চর শৌলমারী ইউনিয়নে দেবে যাওয়া সেতু।খালের ওপর ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুর (বক্স কালভার্ট) মাঝ বরাবর দেবে গেছে। যেন কোমর ভেঙে পড়ে আছে! নির্মাণের দুই বছরের মাথায় ২০২০ সালের বন্যায় দুই পাশের সংযোগ সড়কের মাটিও ধসে গেছে। বিকল্প না থাকায় সেই ভাঙা সেতুই ১২ হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা। সেতুতে উঠতে নির্মাণ করা হয়েছে একটি বাঁশের সাঁকো। ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন সেই সাঁকো আর ভাঙা সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করছেন হাজারো মানুষ।

কুড়িগ্রামের সীমান্তবর্তী উপজেলা রৌমারীর চর শৌলমারী ইউনিয়নের চর শৌলমারী বাজার সংলগ্ন সড়কের খালের ওপর নির্মিত সেতুর চিত্র এটি। এর পূর্ব প্রান্তে চর শৌলমারী বাজার এবং পশ্চিম প্রান্তে ঘুঘুমারি ও সুখের বাতিসহ কয়েকটি গ্রাম। সেতুটির ২০০ গজ দূরেই চরশৌলমারী ডিগ্রি কলেজ ও চরশৌলমারী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। এ ছাড়ও ওই এলাকায় রয়েছে চারটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেতুটি ভেঙে পড়ায় যোগাযোগ বিড়ম্বনায় পড়েছেন সাত গ্রামের হাজারো মানুষসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,সেতুটি ভেঙে পড়ায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন চর শৌলমারী ইউনিয়নের ঘুঘুমারী, চরঘুঘুমারী, সুখেরবাতি, চরগেন্দার আলগা, ময়েজেরচর, খেদাইমারী ও সুখেরচর এলাকার প্রায় ১২ / ১৫ হাজার মানুষ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার ধরনা দিয়েও কোনো সুরাহা মিলছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় ৫৪ লাখ ৪ হাজার ৬৫০ টাকা ব্যয়ে ৬০ ফুট দৈর্ঘ্যের এই সেতুটি নির্মাণ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মনিরুল ইসলাম। রৌমারী প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় সেতুটির নির্মাণ তত্ত্বাবধানে করে। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হলে এটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। কিন্তু মাত্র দুই বছরের মাথায় ২০২০ সালের বন্যার পর সেতুটির অ্যাপার্টমেন্ট ওয়াল দেবে দিয়ে মাঝ বরাবর সেতুটি হেলে পড়ে। এরপর আরও প্রায় দুই বছর পেরিয়ে গেলেও ভাঙা সেতুটি সংস্কার কিংবা ওই খালের ওপর নতুন কোনো সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে যাতায়াতে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন মানুষ।

চরশৌলমারী ইউনিয়নের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম, খোরশেদ আলম, আয়নাল হক, জেলহক, আনিছুর রহমান জানান, নির্মাণ শেষ হওয়ার পর বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সেতুটি ভেঙে যায়। এরপর চলাচলের জন্য সেতুটির পাশে স্বেচ্ছাশ্রমে একটি বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেন স্থানীয়রা। দুই বছর ধরে স্থানীয়রা ভোগান্তি নিয়ে চলাচল করলেও বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন।

তাঁদের অভিযোগ, ‘সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করার ফলে সেতুটি সামান্য পানির চাপেই ভেঙে গেছে।

চরশৌলমারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান বলেন, ‘অপরিকল্পিত ও পাইলিং ছাড়া সেতুটি নির্মাণ করায় দুই বছরের মাথায় ভেঙে যায়। জনদুর্ভোগ কমাতে ওই জায়গায় পাকা সেতু নির্মাণ করা জরুরি।’

রৌমারী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আজিজুর রহমান জানান, ‘ভেঙে পড়া সেতুটি মূলত বক্স কালভার্ট। বন্যার পানির চাপে নিচের মাটি সরে যাওয়ায় এমনটি হয়েছে। হস্তান্তরের দুই বছর পর ভেঙে যাওয়ায় ঠিকাদারের জামানতও বাজেয়াপ্ত করা যায়নি।’

সেতুটি সংস্কার কিংবা ওই স্থানে নতুন করে সেতু নির্মাণের পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে পিআইও আজিজুর রহমান জানান,‘সেতুটির সংযোগ সড়কের মাটি সরে যাওয়ায় খালের দূরত্বও বেড়ে গেছে। এখন ওই জায়গায় যে আয়তনের সেতু প্রয়োজন তা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় পড়ে না। এলজিইডির মাধ্যমে ওই স্থানে সেতু নির্মাণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিজস্ব প্রতিবেদক https://khoborbangla24.net

বিশ্বজুড়ে দেশের খবর

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours