২৬ শে মার্চ কি তরুনদের জানাতে হবে।

Estimated read time 1 min read
Ad1

 

এম হেলাল উদ্দিন নিরব
সাংবাদিক ও সমাজকর্মী

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ – এতটা রক্তমাখা সূর্যোদয় হয়ত এদেশের মানুষ কখনো দেখেনি, কিন্তু এ এক নতুন সূর্য, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সূর্য। আর আজ তার সুবর্ণজয়ন্তী।

২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে আটকের আগেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে ‘স্বাধীন’ ঘোষণা করে দেশবাসীর উদ্দেশে একটি তারবার্তা পাঠান। ইপিআরের ওয়ারলেস বার্তায় প্রচার করা হয় তার স্বাধীনতার ঘোষণা।

১৯৮২ সালে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় প্রকাশিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র তৃতীয় খণ্ডে শেখ মুজিবের স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, ২৫ মার্চ মধ্যরাতের পর, অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে এ ঘোষণা দেন তিনি, যা তৎকালীন ইপিআরের ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে।

পরে চট্টগ্রামের স্থানীয় একটি বেতারকেন্দ্র থেকে ২৬ ও ২৭ মার্চ বেশ কয়েকজন শেখ মুজিবের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।

স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কে পাকিস্তানের তৎকালীন পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক বাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজীর জনসংযোগ কর্মকর্তা মেজর সিদ্দিক সালিক তার ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ বইয়ে লিখেছেন, “যখন প্রথম গুলিটি ছোড়া হল, ঠিক সেই মুহূর্তে পাকিস্তান রেডিওর সরকারি তরঙ্গের কাছাকাছি একটি তরঙ্গ থেকে ক্ষীণস্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের কণ্ঠস্বর ভেসে এল। ওই কণ্ঠের বাণী মনে হল আগেই রেকর্ড করে রাখা হয়েছিল। তাতে শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ হিসেবে ঘোষণা করেছেন।”

তিনি আরও লিখেছেন, “ঘোষণায় বলা হয়, ‘এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা। আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। বাংলাদেশের মানুষ যে যেখানে আছেন, আপনাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর মোকাবেলা করার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলাদেশের মাটি থেকে উৎখাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আপনাদের সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে’।”

ওয়্যারলেস বার্তায় বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কে লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকার সাংবাদিক ও দক্ষিণ এশিয়া করেসপনডেন্ট ডেভিড লোশাক লিখেছেন, ঘোষণাকারীর গলার আওয়াজ খুব ক্ষীণ ছিল। খুব সম্ভবত ঘোষণাটি আগেই রেকর্ড করা ছিল।

বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সংবিধানেও।

২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু ঘোষিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হ্যান্ডবিল আকারে ইংরেজি ও বাংলায় ছাপিয়ে চট্টগ্রামে বিলি করা হয়৷ আওয়ামী লীগ নেতা জহুর আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা চট্টগ্রামের ইপিআর সদর দপ্তর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ওয়্যারলেস মারফত পাঠানোর ব্যবস্থা করেন৷

চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান এদিন দুপুর ২টা ১০ মিনিটে এবং ২টা ৩০ মিনিটে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন৷

মুক্তিযুদ্ধ ও জনগণকে সংঘঠিত করতে এই কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রই প্রাথমিক ভূমিকা পালন করে। এদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণ ও স্বাধীনতার ঘোষণাভিত্তিক তারবার্তার আদলে স্বাধীনতা এবং স্বাধীনতা যুদ্ধ সম্পর্কিত অনুষ্ঠান সম্প্রচার করেন এম এ হান্নান, সুলতানুল আলম, বেলাল মোহাম্মদ, আবদুল্লাহ আল-ফারুক, আবুল কাশেম সন্দ্বীপ, কবি আবদুস সালাম এবং মাহমুদ হাসান৷

রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী লিখেছেন, ২৬ মার্চ সকাল ৯টায় আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্র থেকে ঢাকা ও অন্যান্য অঞ্চলে যুদ্ধ শুরু হয়েছে বলে প্রচার করা হয়। এদিন অস্ট্রেলিয়ার বেতারে (এবিসি) ঢাকার গণহত্যার খবর প্রচরা করা হয়।

এদিকে ঢাকায় সেনানিবাসের ভেতরে আদমজী কলেজ থেকে বন্দি অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ফ্ল্যাগ স্টাফ হাউজে নিয়ে যাওয়া হয়৷ সেখানে তাকে সারাদিন আটক রেখে সন্ধ্যায় অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়৷পরিশেষে বলছি ২৬ মার্চ সম্পর্কে তরুনদের জানতে, আরো জানতে হবে যে বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ।

নিজস্ব প্রতিবেদক https://khoborbangla24.net

বিশ্বজুড়ে দেশের খবর

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours