অনলাইন ডেস্ক
বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ আজ। করোনার সংকট কাটিয়ে দুই বছর পর আবারো রাজপথে মঙ্গল শোভাযাত্রা। সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে শুরু হয়েছে এ শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রাটি কলাভনের সামনে দিয়ে ভিসি চত্বরে যাবে, এরপর আবার টিএসসিতে গিয়ে শেষ হবে।
সকাল সোয়া ছটার দিকে গানের সুরে বছরের প্রথম সূর্যকে বরণ করার মধ্য দিয়ে রমনার বটমূলে ফিরেছে ছায়ানট। শতভাগ নিরাপত্তায় শহরজুড়ে নজরদারি বাড়িয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বাণীতে তারা নতুন বছরের শুভেচ্ছা ছাড়াও সবার মঙ্গল কামনা করেছেন।
বাংলা নববর্ষ বরণ করে নিতে উৎসবে মেতেছে জাতি। মহামারির দুঃসময় কাটিয়ে ফের এসেছে স্বাভাবিকতার আলো। সেই প্রত্যাশার ভাষিক প্রকাশের জন্য প্রখ্যাত বাঙালি গীতিকার ও সুরকার রজনীকান্ত সেনের একটি গীতিকবিতার চরণ ধার করে এবারের শোভাযাত্রার মূল প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে, ‘নির্মল করো, মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে।’
রমজান মাস হওয়ায় এবারের পয়লা বৈশাখের সকালে পান্তা-ইলিশের আয়োজন হয়নি। তবে পুরোনো গ্লানি, হতাশা আর মলিনতাকে পেছনে ফেলে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশায় নতুন বছর ১৪২৯ কে বরণ করতে সবাই প্রস্তুত।
মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ টিএসসি এলাকায় এসেছেন। শোভাযাত্রায় অংশ নিতে আসা নারীদের অনেকের পরনে শাড়ি আর মাথায় নানা রঙের ফুল। পুরুষদের পরনে পাঞ্জাবি। তবে সবারই চোখে মুখে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়।
বিগত শতকের আশির দশকে সামরিক শাসনের অন্ধকার ঘোচানোর আহ্বানে পয়লা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে একটি শোভাযাত্রা বের হয়েছিল। এটিই পরে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নাম ধারণ করে।
গত তিন দশক ধরে প্রতি বছরই পয়লা বৈশাখে চারুকলার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হচ্ছে। ২০১৬ সালে ইউনেসকোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পায় এই শোভাযাত্রা।
প্রতি বছরের মতো এবারও মঙ্গল শোভাযাত্রার তহবিল সংগ্রহের জন্য চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে গত এক সপ্তাহ ধরে ‘আর্ট ক্যাম্প’ হয়। এখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও প্রখ্যাত শিল্পীদের আঁকা ছবি বিক্রি করে সংগৃহীত অর্থ খরচ হচ্ছে শোভাযাত্রার ব্যয় নির্বাহে। শোভাযাত্রার প্রস্তুতি শুরু হয় তারও এক সপ্তাহ আগে। মুখোশ, টেপা পুতুল, মাছ ও পাখির প্রতিকৃতিসহ লোকসংস্কৃতির নানা উপাদান থাকছে এবারের শোভাযাত্রায়।
এর আগে করোনা পরিস্থিতির কারণে ২০২০ সালে মঙ্গল শোভাযাত্রা হয়নি। ২০২১ সালে হয়েছে সীমিত পরিসরে, যেখানে সবার অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল না। দুই বছর পর এবার অনেকটা চেনা রূপে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন হয়েছে।
+ There are no comments
Add yours