লামা প্রতিনিধি :
বৈশাখের শুরুতে হঠাৎ আসা কালবৈশাখী ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে পুরো বান্দরবানের লামা উপজেলা বুধবার সকাল সাড়ে ১০ থেকে ১১টা পর্যন্ত এক ঘন্টার ঝড়ের তান্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কালবৈশাখী ঝড়, বজ্রপাত ও শিলা বৃষ্ঠিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিভিন্ন এলাকার জনবসতি, গাছপালা, ফসলি ক্ষেত, পোল্ট্রি খামার, তামাকচুল্লী ও বৈদ্যুতিক খুঁটি। যে কারণে পুরো এলাকায় আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন লামা বিদ্যুৎ বিভাগ।
২০ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০টায় কালবৈশাখী তান্ডব শুরু হয়। প্রায় এক ঘন্টা ধরে এ তান্ডব চলে। এসময় বজ্রপাত, মেঘের গর্জন, কালবৈশাখী প্রচন্ড ছোবল ও শিলা বৃষ্টি সব মিলেয়ে জন-জীবনকে বিপন্ন করে তোলে।
লামা উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নে দুই শতাধিক বসতবাড়ি কালবৈশাখী ঝড়ে গাছ পড়ে নষ্ট হয় ও বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে যায়। ৪০ এর অধিক মোরগের খামারের ক্ষয়ক্ষতি, ২০ এর অধিক তামাকচুল্লী ভেঙ্গে নষ্ট, ৬/৭টি বিদ্যুৎ খুঁটি ভেঙ্গে ও শতাধিক স্থানে গাছ পড়ে বিদ্যুতের তাঁর ছিঁড়ে গেছে। ৩০ জনের অধিক বিদ্যুতের কর্মী ছিঁড়ে যাওয়া লাইন ও ভেঙ্গে যাওয়া বিদ্যুৎ খুঁটি মেরামতে নিরবচ্ছিন্ন কাজ করছে।
বসতবাড়ি ভেঙ্গে অনেক পরিবার খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছে। রমজানের এমন দিনে হঠাৎ আসা কালবৈশাখী ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে সকলের দাঁড়ানো জন্য সবাইকে অনুরোধ করেছেন লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মোস্তফা জাবেদ কায়সার।
কালবৈশাখী ঝড়ে কাঁচা-পাকা ঘর-বাড়ি, দোকানপাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লামা পৌরসভার হরিণঝিরি বগাঝিরি এলাকার থুইঅং প্রু মার্মার তামাকচুল্লী বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে গেছে। এতে করে তার দুই লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয় বলে জানিয়েছেন। শিলেরতুয়া মার্মা পাড়ার অংক্যে থোয়াই মার্মার বাড়ির উপর নারকেল গাছ ভেঙ্গে পড়ে ও একই এলাকার অংক্যহ্লা মার্মা প্রকাশ বলি বাড়িতে আম গাছ পড়ে ভেঙ্গে গেছে। কলাবুইজ্জা পাড়া এলাকার আতাউর জামান এর পাকা বসতবাড়ির ছাল উড়িয়ে নিয়ে গেছে ও হরিণঝিরিস্থ লামা সততা পোলট্রি ফার্মের মুরগীর ফার্মের ছাল উড়ে গেছে ঝড়ে।
প্রবল বাতাসের সাথে শিলা বৃষ্টি হওয়ায় বিভিন্ন এলাকার ফসলি ক্ষেত ও ফলমূলের বাগান নষ্ট হয়ে গেছে।
লামা বিদ্যুৎ বিভাগের আবাসিক প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন জানান, কালবৈশাখীর ঝড়ের কবলে লামার বিভিন্ন এলাকায় শতাধিক স্থানে গাছ পড়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে ও ১০টির বৈদ্যুতিক খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
উপজেলা কৃষি অফিসার রতন কুমার বর্মন জানান, কালবৈশাখীর ঝড়ের কবলে এলাকার কিছু ফসলি ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে সড়ক ও জনপদ বিভাগের লামা অফিসের দায়িত্বরত উপ-সহকারী প্রকৌশলী পুণেন্দু বিকাশ চাকমা জানান, ঝড়ে গাছ পড়ে লামা চকরিয়া সড়ক, গজালিয়া আজিজনগর সড়ক, লামা সুয়ালক সড়ক সহ বেশ কয়েকটি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। দ্রুত শ্রমিক দিয়ে তা অপসারণে কাজ করা হচ্ছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ মুনিরুল ইসলাম বলেন, ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে উপজেলা প্রশাসন থেকে সহায়তা করা হবে। সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হলেও কারো প্রাণহানির খবর এখনো পাওয়া যায়নি।
লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মোস্তফা জাবেদ কায়সার জানান, বিভিন্ন দপ্তরের মাধ্যমে ঝড়ের কবলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা হচ্ছে।পরবর্তিতে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
+ There are no comments
Add yours