এম হেলাল উদ্দিন নিরব চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম)::
চন্দনাইশের দোহাজারী পৌরসভায় ব্রিটিশ শাসনামলে নির্মিত ২৫ ফুট চওড়া
এবং প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের জনগুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক মানচিত্র থেকে বিলুপ্তির পথে।
দোহাজারী রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে বড়ুয়াপাড়া, সাতছড়ি, ময়নার বাপের পাহাড় হয়ে হিমছড়ি পর্যন্ত সড়কটি স্থানীয়দের কাছে ‘মোটর রাস্তা’ হিসেবে পরিচিত।
জানা যায়, ১৯৪০ সালে ব্রিটিশ ও জাপানের মধ্যে সংঘটিত দেশ দখলের যুদ্ধে ব্রিটিশ সৈণ্যগণ নিরাপত্তা জনিত কারনে
জনবহুল এলাকা এড়িয়ে কমসংখ্যক মানুষ চলাফেরা করেন এমন এলাকায় ক্যাম্প স্থাপনের পরিকল্পনা করেন।
তারই প্রেক্ষিতে দোহাজারী রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে হিমছড়ি এলাকায় গহীন পাহাড়ে ক্যাম্প স্থাপন করেন তারা।
যুদ্ধকালীন সময়ে ওই ক্যাম্পে অবস্থান করে ব্রিটিশ সৈণ্যরা যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন।
ব্রিটিশ সৈণ্যদের যুদ্ধাস্ত্র, রসদসহ প্রয়োজনীয় মালামাল ওই ক্যাম্পে আনা-নেওয়ার জন্য
দোহাজারী রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে হিমছড়ি পর্যন্ত ২৫ ফুট চওড়া এবং প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটি নির্মাণ করা হয়।
সাতছড়ি খালের ওপর একটি কংক্রিটের সেতুও নির্মাণ করা হয়।
যুদ্ধকালীন সময়ে সড়কটি দিয়ে ব্রিটিশ সৈণ্যদের যুদ্ধযানের পাশাপাশি রসদবাহী বড় বড় ট্রাক চলাচল করলেও যুদ্ধ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ক্যাম্পটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়।
এরপর ‘মোটর রাস্তা’ দিয়ে সৈণ্যদের চলাচল বন্ধ হয়ে গেলেও এলাকার লোকজন চলাচল করার পাশাপাশি কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল আনা-নেওয়ার জন্য সড়কটি ব্যবহার করতেন।
বিলুপ্ত দোহাজারী ইউনিয়ন পরিষদ সাড়ে তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সড়কটির কোন রেকর্ড সংরক্ষণ না করার ফলে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি এখন বিলুপ্তির পথে।
দোহাজারী ভূমি অফিসে গিয়ে সড়কটি সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়,
জামিজুরী মৌজায় বিএস খতিয়ানে (নং ৬) ৯৯২৩ দাগে ৩৯ শতক এবং ৯৮৭৮, ৯৯৮০ দাগে ২৭ শতকসহ মোট ৬৬ শতক জমি সড়ক হিসেবে উল্লেখ রয়েছে।
তবে সরেজমিনে দেখা যায় সাড়ে তিন কিলোমিটার সড়কের মধ্যে দুই কিলোমিটারের চিহ্ন থাকলেও প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়ক প্রায় নিশ্চিহ্ন।
সড়কের দুই পাশের জমির মালিকরা আইল বাড়াতে বাড়াতে সড়কটি সংকুচিত করে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে ফেলেছেন।
২৫ ফুট চওড়া সড়কটির কোন কোন স্থানে বর্তমানে ১ থেকে দেড় ফুট, কোন কোন স্থানে ৫ থেকে ৭ ফুট অস্তিত্ব বিদ্যমান রয়েছে।
কোথাও আবার সড়কের ওপরেই ফসল চাষাবাদ করা হয়েছে।
সাতছড়ি খালের ওপর ব্রিটিশ আমলে নির্মিত সেই সেতুটি না থাকলেও খালের দুই পাড়ে সেতুর ধ্বংসাবশেষ এখনো বিদ্যমান।
এক সময় যে সড়কটি দিয়ে ব্রিটিশ সৈণ্যদের বড় বড় ট্রাক চলাচল করতো এখন সেটি জমির আইলে রুপান্তরিত হয়েছে।
সড়কটি পুনরুদ্ধার করে পুনরায় জনচলাচল ও যানচলাচলের উপযোগী করার জন্য চট্টগ্রাম-১৪ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী,
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল জব্বার চৌধুরী, দোহাজারী পৌরসভার প্রশাসক ও পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগের সদয় সুদৃষ্টি কামনা করছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
এব্যাপারে দোহাজারী পৌরসভার প্রশাসক ও চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাছরীন আক্তারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি গভীরভাবে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস প্রদান করেন।
+ There are no comments
Add yours