নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
ফটিকছড়ি পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের ফুলতল স’মিল এলাকার মোস্তফা সওদাগরের ফার্ণিচারের দোকানে পালিশ মিস্ত্রি হিসেবে কালা সিরাজের হাতে খড়ি।
তবে তার জীবনের প্রথম কর্মস্থলে সে বেশীদিন তীতু হতে পারেনি।
পুরোদিন খাটা খাটুনী করে বেতন (২৫০ টাকা) যা পেত তা দিয়ে গরুগাড়ি চলাইন্যে রশিদ্যের পরিবারের ৮/১০ জন লোকের ঝোল তরকারীর জোগানও হয়না।
কালের আবর্তনে একসময় এলাকায় ঠেলাগাড়ি, ভ্যানগাড়ি, জীপগাড়ি, ট্রাক্টর, ট্রাক ইত্যাদির আগমন ঘটলে রাস্তাঘাটে গরুরগাড়ি বন্ধ হয়ে যায়।
গরুগাড়ি চালকরা বড় অসহায় ও বেকার হয়ে পড়ে। রশিদ্যার বেলায়ও এর ব্যতিক্রম নয়।
উপার্জনের একমাত্র সম্বল গরুর গাড়িটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে সে মস্তবড় বেকায়দায় পড়ে, ছেলে-মেয়ে আন্ডা বাচ্চা নিয়ে তার পঁথে বসার উপক্রম হয়।
উপায় অন্তর না দেখে সিরাইজ্জ্যে তখন মোস্তফা সওদাগরের ফার্নিচারের দোকানে পালিশ মিস্ত্রির চাকরী নেয়।
কিন্তু এখানের অল্প বেতনের চাকরীতে তার কোনোমতেই কুলায়না। তাদের সংসারেও নুন আনতে পানতা ফুরায় অবস্থা।
ঘরে শান্তি বলতে বিলকুল নেই। প্রতিদিনই তাদের অভাব অনটনের সংসারে ঝগড়াফসাদ লেগে থাকত।
সিরাজও কাজের ফাঁকে ফাঁকে টু-পাইস ইনকামের একটা ধান্ধা খুঁজতে থাকে। এরই মধ্যে ঘটে যায় এলাকায় একটি গরু চুরির ঘটনা।
সারাংয়ের বাড়ির মীর আহমদের একটি গরু পার্শ্ববর্তী বিল থেকে কে বা কারা চুরি করে নিয়ে যায়।
গরুটি তিনি এলাকার গরীব মহিলা (কালুর স্ত্রী) কে বাগা দিয়েছিল।
বিষয়টি নিয়ে মীর আহমদ তৎকালীন রাঙ্গামাটিয়া ইউপির চেয়ারম্যান আলমগীর চৌধুরীর কাছে বিচার দেয়।
চেয়ারম্যান আলমগীর চারিদিকে সোর্স লাগিয়ে জানতে পারলেন যে ঐ মহিলার গরু তার চাচা রশিদ্যার চোরা ছেলে সিরাইজ্জ্যেই চুরি করেছে।
এরপর আলমগীর চেয়ারম্যান তাকে ধরে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে ভালা করে একটা প্যাদানী দেয়।
এই ঘটনা এলাকায় চাওর হলে সে কিছুদিন পালিয়ে থাকে। লোক লজ্জায় কালা সিরাজ আর মোস্তফার দোকানেও আসতে পারছিলনা।
কিছুদিন পর মোস্তফার দোকানের চাকরী ছেড়ে আবার নাজিরহাট মুনাফ সওদাগরের ফার্নিচারের দোকানে দৈনিক ৩০০ টাকা বেতনে পালিশ মিস্ত্রির কাজ নেয়।
তবে এখানেও সে বেশীদিন টিকতে পারেনি। বাড়তি কিছু ইনকামের ধান্ধায় সে আবারও জুয়াখেলায় মেতে উঠে।
রাতের বেলায় কিছু ফার্নিচারের মিস্ত্রিকে নিয়ে সে ফার্নিচারের কারখানায় মদ ও জুয়ার আড্ডা জমাত। ভাগ্য খারাপ হলে যা হয় আরকি?
এসব ঘটনা জানতে পেরে মুনাফ সওদাগর একদিন তাকে চাকরী থেকে বিদায় করে দেয়। এরপর কালা সিরাজ একপ্রকার নিঃস্ব ও বেকার হয়ে পড়ে।
এদিক ওদিক কাজ খুঁজতে থাকে। বিবিরহাট বাজারেও বেশকিছু ফার্নিচারের দোকানে ঘুরে ঘুরে কাজ খুঁজতে থাকে।
এরই মধ্যে লেলাং নোয়াহাট বাজারের ফার্ণিচারের দোকানদার মানিক সওদাগর তাকে বেকার না ঘুরে তার দোকানে গিয়ে পালিশের কাজ করতে বলে।
এরপর সিরাইজ্জ্যে তার নতুন ঠিকানা মানিক সওদাগরের ফার্নিচারের দোকানে দৈনিক ৪০০ টাকা বেতনে স্থায়ীভাবে কাজ করতে থাকে।
এখানে থাকা অবস্থায়ই তার সাথে পরিচয় ঘটে রাজুর বাড়ির পুরানা কাম্মো ফরহাদের সাথে। দুজনের মধ্যে সুন্দর একটা সখ্যতা গড়ে উঠে।
পালিশ মিস্ত্রির কাজের পাশাপাশি তারা দুজন মিলে দুর দুরান্ত থেকে মোটরসাইকেল চুরি করতে থাকে।
এবার শুরু হয় ফটিকছড়িতে টানা গাড়ির রমরমা ব্যবসা।
এরই মধ্যে একদিন রাউজানের সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরী ফটিকছড়ি আসলে ফরহাদ কালা সিরাজকে নিয়ে সালাউদ্দীনের হাতে গছিয়ে দেয়।
সালাউদ্দীনের দোয়ার ফজিলতে এলাকার সিঁদকাটা গরুচোর হয়ে যায় সালাউদ্দীন কাদেরের বিশিষ্ট্য ক্যাডার।
যুদ্ধাপরাধের মামলায় সালাউদ্দীন কাদেরের সাজা হওয়ার আগ পর্যস্ত সিরাইজ্জ্যের দিনকাল একমত ভালই চলেছিল।
সালাউদ্দীন জমানা শেষ হওয়ার পর ফরহাদ জেলে চলে গেলে সিরাইজ্জ্যে আবারও ভবঘুরে হয়ে পাড়ায় পাড়ায় বেকার ঘুরতে থাকে।
এরই মধ্যে সিরাজ একদিন চৌমুহনী বাজারের রফিকের চা-দোকানে কাজী ইউসুফ আলী চৌধুরীর বাড়ির যুবলীগ নেতা নাজিম উদ্দীন নাজুকে দেখতে পেয়ে তার হাতে পায়ে ধরে তাকে কোনো একটা বিহীত করতে বলে।
নাজিম উদ্দীন নাজু তখন যুবলীগের রাজনীতিতে বেশ পরিচিত একটি নাম।
রাজনীতির সুবাধে আওয়ামীলীগ নেতা এটিএম পেয়ারুল ইসলাম এর সাথে তার ভাল সম্পর্ক ছিল এটি কালা সিরাজ আগে থেকেই জানতো।
সে প্রতিদিনই হাটে বাজারে পথে ঘাটে নাজিম উদ্দীন নাজুকে বিরক্ত করতে থাকে।
নাজিম উদ্দীন নাজু সিরাইজ্জ্যের পীড়াপীড়ি আর সহ্য করতে না পেরে একদিন তাকে নিয়ে এটিএম পেয়ারুল ইসলামের হাতে তুলে দেয়।
চৌমুহনী বাজারের ভবঘুরে কালা সিরাজের কালা কপালটা মনে হয় এবার সাদা হতে চলেছে।
শক্ত মজবুত একজন গার্ডিয়ান পেয়েছে বলে সে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে লাগল। না তার এই তৃপ্তিও বেশীদিন স্থায়ী হলনা।
এলাকার সিঁদকাটা গরুচোর, টানা কাম্মো সালাউদ্দীন ক্যাডার সিরাইজ্জ্যের সমস্ত খবরাখবর এক সময় এটিএম পেয়ারুল ইসলাম বিশ্বস্ত সোর্স লাগিয়ে গোপনে সংগ্রহ করে নেয়।
এরপর এটিএম পেয়ারুল ইসলাম একদিন কালা সিরাজকে ডেকে সাফ সাফ জানিয়ে দেয় যে তাঁর কাছে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, চোর, মাস্তানদের কোনো যায়গা নেই।
তাঁর পার্টি অফিসের আশে পাশেও যেন না যায়। মাথায় বাজ পড়ার মত অবস্থা সিরাজের।
দু’মুঠো খেয়ে পরে বেঁচে থাকার আকুতি নিয়ে যে বটগাছের নীচে সে আশ্রয় নিয়েছিল সে গাছটিই কিনা আজ তার মাথায় ভেঙ্গে পড়ল।
এসময় তাঁর মজবুত একটি আশ্রয় খুবই দরকার হয়ে পড়ে।
এর পরের গল্প অবশ্য একটু চমকপ্রদ, এলাকার কন্ট্রাকটর শেয়াকতের হাতে পায়ে ধরে দক্ষিনের ছাত্রনেতা আবু তৈয়বের পাঞ্জাবীর তলায় আবার আশ্রয় নেয় পাড়ার সিঁদকাটা এই দাগী চোরের। তাঁর ছত্র-ছায়ায় থেকে এলাকার বালুর গাড়ি থেকে চাঁদাবাজি, লুঠতরাজ, চুরি, চামারী, ছিনতাই, রাহাজানি, অস্ত্রবাজী, দখল বাজী ও ভুমি দস্যুতায় সে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠে। আবু তৈয়ব উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকায় তাঁর সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি ও জমিদখল বেপরোয়া ভাবে বৃদ্ধি পায়। বছর দুয়েক পুর্বে সে পৌরসভা এলাকার ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ইসলাম মুন্সীর মেয়ে সাজু আক্তার (কালু) এর বাড়িতে প্রকাশ্যে দিবালোকে অস্ত্র নিয়ে হামলা করে।
+ There are no comments
Add yours