নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
ফটিকছড়িতে দিন দিন বেড়েই চলেছে বখাটে, ইভটিজার ও কিশোরগ্যাং এর উপদ্রব।
করোনেশন স্কুলের সামনের রাস্তায়, ডাকবাংলো রোড, হামাজার টিলা, কামরাঙা পাড়া রোড, করোনেশনের পুকুর পাড়ে,
পালপাড়ার রাস্তা, গার্লস স্কুলের সামনের রাস্তা, পশ্চিম পাশের রাস্তা, ও গার্লস স্কুলের পুর্ব পাশের পুকুরপাড়ে
এসব কিশোরগ্যাং ও ইভটিজারদের হর হামেশা ঘুরাফেরা করে ও আড্ডা মারতে দেখা যায়।
দিনের তিনটা সময়ে বিশেষ করে এদের উপদ্রব ও ইভটিজিং চোখে পড়ার মত।
প্রথমত স্কুল শুরুর আগে, দ্বিতীয়ত টিফিন ছুটির সময় আর সর্বশেষ স্কুল ছুটির পড়।
করোনেশন স্কুলের সামনের রাস্তাটি দিয়েই ফটিকছড়ি গার্লস স্কুল, ফটিকছড়ি সিনিয়র মাদ্রাসা ও ফটিকছড়ি কলেজের মেয়েরা আসা যাওয়া করে,
তাই করোনেশন স্কুলের সামনের রাস্তা, ডাকবাংলো রোড, হামাজার টিলা, করোনেশনের পুকুরপাড়, পালপাড়া রোড ও কামরাঙা পাড়া রোড,
গার্লস স্কুলের সামনের রোড, গার্লস স্কুলের পুর্ব পাশের পুকুরপাড় এসব ইভটিজার ও বখাটেদের জন্য নিরাপদ রুট হয়ে দাড়িয়েছে।
স্কুলে ক্লাস আরম্ভ হওয়ার আগে আগেই বখাটে ইভটিজাররা এসব যায়গার দখল নিয়ে নেয়।
স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসায় পড়ুয়া মেয়েদের আসতে দেখলেই এদের উৎপাৎ শুরু হয়ে যায়। গার্লস স্কুলের মেয়েরা বিশেষ করে এসব ইভটিজারদের প্রথম পছন্দ।
স্কুলগামী মেয়েদের প্রতি কুরুচিপূর্ণ ইঙ্গিত, প্রেমের প্রস্তাব দেয়া, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি, অশালীন বাক্য, শীষ দেয়া এদের একটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
এসব বখাটে ইভটিজারদের আবার কয়েকটা শ্রেণীতে বিভক্ত দেখা যায়। এক শ্রেনীর ইভটিজারদের হাতে রাবারের ব্যান্ড আর স্টিলের চুড়ি থাকে।
তাদের মাথার চুলগুলো লাল-সাদা মিশ্র কালারের কালার দেয়া থাকে। এরা এলাকায় কিশোরগ্যাং নামে সর্বাধিক পরিচিত।
গার্লস স্কুলের পিছনের রাস্তা ও কামরাঙ্গা পাড়া রোড এদের বেশ পছন্দ ও নিরাপদ যায়গা।
সকাল ৯টা থেকেই এরা দলবেঁধে তাদের প্রতিদিনের স্পটে অবস্থান নেয়। এরপরই শুরু হয় তাদের বখাটেগিরি ও ইভটিজিং কার্যক্রম।
পথচারী জনসাধারণকে দেখলে তারা মস্তবড় সন্ত্রাসীদের দল, তারা এলাকার কাওকে তুলে নিয়ে যেতে এসেছে এমন ভাব দেখায়।
উশৃঙ্খল ও বেপরোয়া চাল চলনের কারণে তারা সবসময় এলাকার শান্তিপ্রিয় জনগন ও স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের আতঙ্কের কারণ হয়ে দাড়ায়।
কিশোরগ্যাং বলতেই এখন এলাকায় মুর্তিমান আতঙ্কের নাম।
পালপাড়ার সংখ্যালগু সম্প্রদায় ও গার্লস স্কুলের পিছনের ভাড়া বাসায় থাকা বাসিন্দারা এসব বখাটে ইভটিজার ও কিশোরগ্যাংয়ের ভয়ে সবসময় তটস্থ থাকে।
আরেক শ্রেনীর ইভটিজারের গলায় সিলভারের চেইন ও কানে দুল থাকে এবং এদের পরণের প্যান্টের দু’তিন যায়গায় জোড়াতালি ও ছেঁড়া ফাটা দেখা যায়।
বখাটেরা মুলত হামজার টিলা, ও ডাকবাংলো সড়কে অবস্থান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকে।
তারা এলাকার অন্যান্য ইভটিজারদের সাথে পাল্লা না দিয়ে এই দুই যায়গাতেই সীমাবদ্ধ থেকে তাদের বখাটেপনা ও ইভটিজিং চালিয়ে যায়।
তারা বেশীরভাগই বাজারের আশেপাশের এলাকার কর্মহীন ভবঘুরে।
কথিত আছে যে এই গ্রুপটি দিনের বেলায় মাত্র ২ঘন্টা হামজার টিলা ও ডাকবাংলো সড়কে ব্যস্থ থাকলেও বাদবাকি সময় বাজারের অলীগলি, চায়ের দোকান, কসমেটিক্স গলী ও মাছ বাজারে কাটায়।
এ সময়ে তারা বাজারের নিদ্রিষ্ট কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রেকি করে নেয় আর রাতের বেলায় তাদের টার্গেট করা দোকানের তালা ভেঙ্গে সমস্ত মালামাল ও নগদ টাকা চুরি করে নিয়ে যায়।
আরেক শ্রেনীর ইভটিজারদের মাথার লম্বা চুল দেখা যায়, তাদের মাথায় জুঁটি, মেয়েদের চুলের ব্যান ও রাবার ব্যবহার করতে দেখা যায়।
তারা ম্যাচ করে শার্ট, প্যান্ট, শো পরে চলাফেরা করে। গলায় তাদের সিটিগোল্ড চেইন, ক্লিন শেভ কিংবা ফেসকাটিং দাঁড়িও থাকে।
এরা মুলত প্রবাসরত বড়লোক পিতার বখে যাওয়া সন্তান। এরা বেশীরভাগ সময়ে দু’তিনজন মিলে বাইক (নিজের নয়) নিয়ে চলাফেরা করে থাকে।
তারা পরিচিত পথচারী ও এলাকার লোকজনের আড়ালে আবঢালে থাকতে পছন্দ করে। পরিচিত লোকজনের সামনে পড়লে তারা হাঁসিমুখে কুশল বিনিময় করবে।
ভাবসাবে যেন তারা ভদ্র ফ্যামেলীর সন্তান, এলাকার লোকজনের সাথে ঝগড়াফসাধে তারা মোটেই যেতে চায়না।
চালচলনটা তাদের এমনই যেন তারাই এলাকার বড়ভাই, তারাই সিনিয়র, তারাই ভদ্রশ্রেণীর সমাজের হর্তাকর্তা।
এদের অবস্থান মুলত গার্লস স্কুলের সামনের টি-স্টল (রেষ্টুরেন্ট) কসমেটিক্স শপ, স্টেশনারী ও মিনি ফুডের দোকানগুলোতে।
এখানে বসে বসেই তারা স্কুলে আগত মেয়েদের ইভটিজিংয়ের কাজটি সারে। আরেক শ্রেনীর ইভটিজার আছে যারা খুবই কুটবুদ্ধি সম্পন্ন।
তারা ঘর থেকে স্কুল কলেজে যাবার মতই ড্রেস করে সাইকেলের পিছনে বই-খাতা নিয়ে বিসমিল্লাহর সহিত বেড়িয়ে পড়ে।
তাদের চাল চলনে আপাদমস্তক স্কুলের ভাল ছাত্র বলে মনে হয়। তারা বেশীরভাগ সময় স্কুল কলেজের ছাত্রদের মাঝে মিশে থাকতে চেষ্টা করে।
বাড়ি থেকে স্কুল কলেজের নাম করে বের হলেও মুলত তারা স্কুল কলেজের বাউন্ডারীতেও ঢুকেনা।
বাজারের কোন এক গ্যারেজে বই-খাতা আর সাইকেলটা রেখে তারা অবস্থান নেয় ডাকবাংলো রোড,
হামাজার টিলা, পালপাড়া রোড, করোনেশন স্কুলের সামনের রাস্তা ও পুকুরপাড় এবং তেজেন্দ্র স্কয়ারের আশে পাশে।
তারা দলবদ্ধভাবে না থেকে এসব এলাকায় দুজন দুজন করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে।
এদেরকে দেখলে আপনী ফটিকছড়ি কলেজ ও করোনেশন স্কুলের ছাত্র ভেবে ভুল করবেন।
তবে এদের সাথে করোনেশন স্কুলের কিছু ছাত্রও জড়িত আছে, যারা প্রতিদিনকার পড়াশোনা বাদ দিয়ে এসব বখাটেদের সাথে বাজারে সাজারে ঘুরে সময় কাটায়। স্কুল কলেজের মেয়েরাও তাদের ভাবসাব ও ড্রেসাপ দেখে স্কুল কলেজের ছাত্র মনে করে। এদের প্রধান টার্গেট গার্লস স্কুলের মেয়েরা। মেয়েদের আসা যাওয়ার পথেই তারা ইভটিজিংয়ের কাজটি করে থাকে। মেয়েদের স্কুলে যাওয়া শেষ হলে তারা বাজারের বিভিন্ন চা দোকান, শো-রুম, কসমেটিক্স গলী, এবিসি রোড, ও ১নং রোডের বিভিন্ন হোটেল রেস্তোরায় আড্ডা মারে। বিকেলে স্কুল ছুঠির পর তাদের আরেক দফা ইভটিজিং সেরে তারা এবার বাড়ির পথ ধরে। এসব ভবঘুরে ইভটিজার ও বখাটেদের উৎপাত উপদ্রবে এলাকার লোকজন অতীষ্ঠ হয়ে পড়েছে।
+ There are no comments
Add yours