পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হচ্ছে আজ (শনিবার)।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুটির উদ্বোধন করবেন।
পদ্মা সেতু রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য প্রধান শহরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ২১টি জেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগে ব্যাপক অগ্রগতি আনবে। সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে দেশে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ এই সেতু দিয়ে সরাসরি সড়ক যোগাযোগের সুবিধা পাবে।
চলুন পাঠক জেনে আসা যাক পদ্মা সেতু প্রকল্প সম্পর্কে —
দাপ্তরিক নাম
পদ্মা সেতু।
প্রকল্পের নাম
পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প।
অবস্থান
ঢাকা থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলায় এ প্রকল্পের অবস্থান। সেতু প্রকল্পের দুটি প্রান্ত, মাওয়া ও জাজিরা।
কাজ শুরু
২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করে চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি।
প্রকল্পের মেয়াদ
১ জানুয়ারি ২০০৯ থেকে ৩০ জুন ২০২৩।
কাজের মূল সময়সীমা
মূল সময়সীমা ৪৮ মাস। বর্ধিত সময় ৪৩ মাস।
পদ্মা সেতুর ধরন
দ্বিতলবিশিষ্ট।
প্রধান নির্মাণ উপকরণ
কংক্রিট ও স্টিল।
সেতুর দৈর্ঘ্য
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার।
প্রস্থ
৭২ ফুট।
লেন
পদ্মা সেতুতে রয়েছে চার লেনের সড়ক। মাঝখানে রোড ডিভাইডার।
ভায়াডাক্ট
পদ্মা সেতুর ভায়াডাক্ট ৩ দশমিক ১৮ কিলোমিটার।
ভায়াডাক্ট পিলার
৮১টি।
পাইলিং গভীরতা
৩৮৩ ফুট।
মোট পাইলিং
২৮৬টি।
মোট পিলার
৪২টি।
স্প্যান
৪১টি ।
মূল সেতুর নির্মাণ কাজের সমাপ্তি ঘোষণা
২২ জুন মূল সেতুর নির্মাণ কাজের সমাপ্তি ঘোষণা করে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।
রেল সংযোগ
পদ্মা সেতুতে রেললাইন স্থাপন হচ্ছে স্প্যানের মধ্য দিয়ে।
সংযোগ সড়কের দৈর্ঘ্য
পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক দুই প্রান্তে (জাজিরা ও মাওয়া) ১৪ কিলোমিটার।
মোট লোকবল
পদ্মা সেতু প্রকল্পে কাজ করছেন প্রায় চার হাজার মানুষ।
সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ
রক্ষণাবেক্ষণ করবে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।
নকশা
পদ্মা সেতুর নকশা করেছে আমেরিকান মাল্টিন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম এইসিওএমের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পরামর্শকদের নিয়ে গঠিত একটি দল। ৬ ও ৭ নম্বর পিলার নিয়ে জটিলতা তৈরি হলেও পরে তা চূড়ান্ত হয়।
মূল সেতুর ঠিকাদার
মূল সেতু নির্মাণের কাজটি করেছে চীনের ঠিকাদার কোম্পানি চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি)।
নদীশাসন
১৩ দশমিক ৮ কিলোমিটার নদীশাসনের কাজ করেছে চীনের সিনো হাইড্রো করপোরেশন
প্রকল্পের মোট ব্যয়
পদ্মা সেতু প্রকল্পে মোট ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকা।
মূল সেতু নির্মাণে ব্যয়
১২ হাজার ১৩৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা (৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন টাওয়ার এবং গ্যাস লাইনের জন্য ১০০০ কোটি টাকাসহ)।
ভূমি অধিগ্রহণ ব্যয়
২ হাজার ৬৯৩ দশমিক ২৬ কোটি টাকা।
অন্যান্য ব্যয়
টোল প্লাজা এবং এসএ-২ সহ ১২ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ রোডের নির্মাণ ব্যয় ১ হাজার ৯০৭ দশমিক ৬৮ কোটি টাকা (দুটি টোল প্লাজা, দুটি থানা ভবন এবং তিনটি পরিষেবা এলাকাসহ)। পুনর্বাসনে ব্যয় ১ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা। পরিবেশ রক্ষায় ব্যয় ১ হাজার ২৯০ দশমিক ৩ কোটি টাকা, কনসালটেন্সি ৬ হাজার ৭৮৩ দশমিক ৭ কোটি টাকা এবং অন্যান্য (বেতন, পরিবহন, সিডি ভ্যাট এবং ট্যাক্স, ফিজিক্যাল এবং প্রাইস কন্টিনজেন্সি, ইন্টারেস্ট ইত্যাদি) ১ হাজার ৭৩১ দশমিক ১৭ টাকা।
শুরুটা যেভাবে
১৯৯৮-২০০০ সময়ে চলে প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই। জাপান ২০০১ সালে পদ্মা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের সমীক্ষা প্রতিবেদন বাংলাদেশের কাছে জমা দেয়। জাপানি জরিপে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া পয়েন্টকে পদ্মা সেতু নির্মাণের স্থান হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। জরিপের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী ২০০১ সালের ৪ জুলাই মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
পরে জোট সরকার মাওয়া পয়েন্টে নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় এবং মানিকগঞ্জের আরিচা পয়েন্টে পদ্মা সেতুর জন্য আবারও জরিপ করার জন্য জাপান সরকারকে পরামর্শ দেয়। দ্বিতীয়বার জরিপ শেষে জাপান মাওয়া পয়েন্টকে পদ্মা সেতু নির্মাণের স্থান হিসেবে উল্লেখ করে প্রতিবেদন জমা দেয়।
২০০৪ সালের জুলাই মাসে জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকার সুপারিশ মেনে মাওয়া-জাজিরার মধ্যে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৮ সালে সেতুর নকশা প্রণয়নে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করে। মহাজোট সরকার শপথ নিয়ে পদ্মা সেতুর সম্পূর্ণ নকশা প্রস্তুত করার জন্য একটি পরামর্শদাতা সংস্থা নিয়োগ দেয়। চূড়ান্ত হয় ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সেতুর নকশা।
একনেকে অনুমোদন
২০০৭ সালে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদন পায়। শুরুতে ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হলেও পরে নকশা পরিবর্তনে দৈর্ঘ্য বেড়ে গেলে ব্য্য বাড়ে। ২০১১ সালে প্রকল্পে সংশোধন এনে ব্যয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকা করা হয়। ২০১৬ সালে ফের ব্যয় বাড়িয়ে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা করা হয়। সবশেষ প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়ায় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকায়।
সেতু প্রকল্পের মূল নির্মাণ কাজের উদ্বোধন
২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর শরীয়তপুর জেলার জাজিরা পয়েন্টে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী নদী প্রশিক্ষণের কাজ এবং পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের মূল নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন।
চুক্তি অনুযায়ী কাজ সমাপ্তির তারিখ
চুক্তি অনুযায়ী ২০১৮ সালের ২৫ নভেম্বর কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পরে কয়েক ধাপে সময় বাড়ানো হয়।
২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পদ্মা সেতুর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারে প্রথম স্প্যান বসানোর মাধ্যমে পদ্মা সেতুর অংশ দৃশ্যমান হয়। পরে একের পর এক ৪২টি পিলারের ওপর বসানো হয় ৪১টি স্প্যান। ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর শেষ ৪১তম স্প্যান স্থাপনের মাধ্যমে বহুমুখী ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতুর সম্পূর্ণ কাঠামো দৃশ্যমান হয়।
+ There are no comments
Add yours