চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের পথে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত হবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক। চলতি বছরের শেষনাগাদ খুলতে পারে টানেলের দুয়ার।
এ অবস্থায় দেশের নদীপথের প্রথম টানেলকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাবনা পুলিশ সদর দফতরে পাঠিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। পুলিশের পক্ষ থেকে টানেলের দুই প্রান্তে দু’টি থানা ও একটি পুলিশ লাইন নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই প্রস্তাব এখনও চিঠি চালাচালির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। টানেল উদ্বোধনের আগে এসব প্রস্তাব আলোর মুখ দেখবে কি না তা নিয়ে সন্দিহান পুলিশ কর্মকর্তারা।
একইসঙ্গে তারা এ-ও বলছেন, নতুন স্থাপনা ও জনবল না বাড়িয়ে বিদ্যমান কাঠামো দিয়ে টানেলকে কেন্দ্র করে বিশাল কর্মযজ্ঞ সামলানো এবং আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখা কষ্টসাধ্য হবে। কর্ণফুলী নদীর দুইপাড়ে চীনের সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তুলতে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন টানেল প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী— ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই টানেলে প্রতিটি টিউব বা সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। একটির সঙ্গে অপর টিউবের দূরত্ব ১২ মিটারের মতো। প্রতিটি টিউবে দুটি করে মোট চারটি লেন তৈরি করা হয়েছে। টানেলের পূর্ব ও পশ্চিম ও প্রান্তে থাকছে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক। এ ছাড়া ৭২৭ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি ওভারব্রিজ রয়েছে আনোয়ারা প্রান্তে।
নির্মাণ কাজ করছে চীনা কোম্পানি ‘চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন লিমিটেড’।
প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ চৌধুরী খবর বাংলাকে বলেন,
‘নদীর তলদেশের টানেলের দুটি টিউব নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। টানেলের ভেতরে অবকাঠামোগত কাজ চলছে। মূল টানেল এবং সংযুক্ত সড়ক তৈরিসহ সার্বিক কাজের অগ্রগতি ৮৬ শতাংশ। ডিসেম্বরের মধ্যে টানেলের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।’
নগরীর পতেঙ্গায় নেভাল একাডেমির পাশ দিয়ে ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরতায় নেমে যাওয়া এই টানেল কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ-পূর্বে আনোয়ারায় সিইউএফএল ও কাফকোর মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে স্থলপথে বের হবে। ৩৫ ফুট প্রশস্ত ও ১৬ ফুট উচ্চতার টানেলে দুটি টিউব দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে।টানেলের উত্তরে নগরীর দিকে আউটার রিং রোড, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কাটগড় সড়ক, বিমানবন্দর সড়ক এবং পতেঙ্গা বিচ সড়ক দিয়ে টানেলে প্রবেশ করা যাবে।
বর্তমানে দামপাড়া ও মনসুরাবাদ এলাকায় সিএমপির দুইটি পুলিশ লাইন আছে। তৃতীয় পুলিশ লাইনটি করার প্রস্তাব করা হয়েছে কর্ণফুলী উপজেলার সিইউএফএল সংলগ্ন খাস জমিতে ২৫ একর জায়গায়।
প্রস্তাবিত স্থানে তৃতীয় পুলিশ লাইনে সাতটি স্থাপনার প্রস্তাব করা হয়েছে। ব্যারাকের পাশাপাশি সেখানে থাকবে পরিবহন ডাম্পিং স্টেশন, ওয়ার্কশপ, ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার, জোনাল এসি অফিস (জোনের সহকারী কমিশনার কার্যালয়), বন্দর পুলিশ ফাঁড়ি এবং বন্দর জোনের উপ-কমিশনার কার্যালয়।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম মহানগরীতে বর্তমানে থানার সংখ্যা ১৬টি। সিএমপি আরও চারটি থানা করার প্রস্তাব দিয়েছে। প্রস্তাবনা অনুযায়ী টানেলের দুই প্রান্তে হবে দুই থানা- বঙ্গবন্ধু টানেল পূর্ব ও পশ্চিম থানা। বাকি দু’টি হচ্ছে-কাট্টলী থানা ও মোহরা থানা। সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে কাট্টলী থানা করার প্রস্তাব দিয়েছে সিএমপি। আর ৫ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে মোহরা থানা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সিএমপি কমিশনার তানভীর বলেন,
‘টানেল হয়ে গেলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়বে। যে সব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা আছে সেগুলোর নিরাপত্তা এবং টানেল এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অনেক ফোর্সের প্রয়োজন হবে। দামপাড়া কিংবা মনসুরাবাদ পুলিশ লাইন থেকে সেখানে ফোর্স নেওয়া সহজসাধ্য নয়। সে জন্য টানেল এলাকাতেই একটি পুলিশ লাইন নির্মাণ দ্রুত হওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া টানেলের দুই প্রান্তের দুই থানাসহ চারটি থানার অনুমোদনও দ্রুততার সঙ্গে পেলে ভালো হবে।’
+ There are no comments
Add yours