শ্রীলঙ্কার পর ১২টি দেশ এখন অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। শনিবার (১৬ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থাটি মূলত বিপর্যয়ের খাদের কিনারায় থাকা দেশগুলোকে চিহ্নিত করে তাদের অর্থনৈতিক দুরবস্থার দিকটিকে সামনে নিয়ে এসেছে। এসব দেশের বৈদেশিক ঋণ, মুদ্রাস্ফীতি এমন পর্যায়ে চলে গেছে যা ভবিষ্যতের চরম সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে। আর্জেন্টিনা, ইউক্রেন, মিশর, কেনিয়া, ইথিওপিয়া, এল সালভাদর, ইকুয়েডরসহ তালিকায় রয়েছে বেলারুশ, নাইজেরিয়া, পাকিস্তানের মতো দেশও।
এসব দেশের মাথার ওপর বিশাল অংকের ঋণের বোঝা চেপে আছে। বিশেষজ্ঞদের হিসাবে এই ঋণের বোঝার পরিমাণ প্রায় ৪০০ বিলিয়ন বা ৪০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। তবে এসব দেশের মধ্যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ঋণের বোঝা বহন করছে আর্জেন্টিনা। দেশটিকে ১৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
আর্জেন্টিনা
২০২৪ সাল পর্যন্ত পরিষেবা চালিয়ে নেওয়ার মতো আর্জেন্টিনার সরকারের কাছে কোনো উল্লেখযোগ্য ঋণ নেই। তবে ওই সময়ের পরে এটি আরও বাড়বে।
ইউক্রেন
সেপ্টেম্বরে ইউক্রেনকে ১২০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ শোধ করতে হবে এবং তখনই সংকট সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু রাষ্ট্র-চালিত নাফটোগাজ চলতি সপ্তাহে দুই বছরের ঋণ ফ্রিজ করার আহ্বান জানিয়েছে।
বেলারুশ
পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার কারণে গত মাসে রাশিয়া খেলাপি দেশে পরিণত হয়েছিল। আর ইউক্রেন অভিযানে মস্কোর পাশে দাঁড়ানোর কারণে বেলারুশ এখন পশ্চিমাদের একই কঠোর আচরণের মুখোমুখি হয়েছে।
ইকুয়েডর
লাতিন আমেরিকার এই দেশটি মাত্র দুই বছর আগে ঋণ খেলাপি হয়েছিল। কিন্তু হিংসাত্মক বিক্ষোভ এবং প্রেসিডেন্ট গুইলারমো লাসোকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রচেষ্টার কারণে এটি আবার সংকটে পড়ে গেছে।
নাইজেরিয়া
নাইজেরিয়া তার রাজস্ব আদায়ের প্রায় ৩০ শতাংশ ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় করে থাকে। এতে করে এই দেশটিও রয়েছে ঝুঁকির মধ্যে।
তিউনিসিয়া
দেশটিতে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ১০ শতাংশ। যা সরকারি সেক্টরে বিশ্বের সর্বোচ্চ মজুরি বিলগুলোর মধ্যে একটি। এছাড়া আফ্রিকার এই দেশটির জন্য আইএমএফ-এর প্রকল্প সচল রাখা বা কমপক্ষে সেগুলো অনুসরণ করা বেশ কঠিন হবে।
ঘানা
বিশাল ঋণের বোঝার কারণে ঘানার ঋণ-টু-জিডিপি’র অনুপাত প্রায় ৮৫ শতাংশে পৌঁছে গেছে। অপরদিকে মূল্যস্ফীতিও পৌঁছেছে প্রায় ৩০ শতাংশের কাছাকাছি।
মিশর
ফান্ড ফার্ম ‘এফআইএম পার্টনারস’-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আগামী পাঁচ বছরে ঋণ পরিশোধে মিশরের ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার নগদ অর্থের প্রয়োজন পড়বে। দেশটি এরইমধ্যে তাদের মুদ্রা পাউন্ডের ১৫ শতাংশ অবমূল্যায়ন করেছে এবং গত মার্চে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছে সহায়তাও চেয়েছে।
কেনিয়া
কেনিয়া, মিশর, তিউনিসিয়া এবং ঘানার বিষয়ে মুডি’স ডেভিড রোগোভিচ বলেছেন: ‘কেবলমাত্র রিজার্ভের তুলনায় ঋণের পরিমাণ এবং ঋণের বোঝা স্থিতিশীল করার ক্ষেত্রে আর্থিক চ্যালেঞ্জগুলোর কারণে এই দেশগুলো সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।’
ইথিওপিয়া
চলমান গৃহযুদ্ধের কারণে দেশটির অগ্রগতি থমকে গেলেও দেশটি তাদের ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের আন্তর্জাতিক বন্ড পরিষেবা চালিয়ে যাচ্ছে।
এল সালভেদর
দেশের অর্থনীতির ওপর মানুষের ভরসা এমন পর্যায়ে নেমে গেছে যে, দেশটিতে আগামী ছয় মাসের মধ্যে পূর্ণ হতে যাওয়া ৮০ কোটি মার্কিন ডলারের বন্ড ৩০ শতাংশ ডিসকাউন্টে বিক্রি হচ্ছে।
পাকিস্তান
পাকিস্তানের রাজস্ব আদায়ের ৪০ শতাংশ ঋণের সুদ দিতেই খরচ হয়ে যায়। ফলে শেহবাজ শরীফের নতুন সরকারকে খরচ কমাতে হবে। অবশ্য পাকিস্তান চলতি সপ্তাহে আইএমএফের সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি করেছে।
+ There are no comments
Add yours