হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক সহিংসতার করুণ মানবিক বিপর্যয় প্রসঙ্গে উপমহাদেশের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক শাদাত হাসান মান্টো লিখেছেন, ‘‘এটা বলোনা যে ১ লাখ হিন্দু ও ১ লাখ মুসলমান মরেছে; বরং বলো ২ লাখ মানুষ মরেছে! আর এটা অত বড় ট্রাজেডিও নয় যে ২ লাখ মানুষ মরেছে! আসল ট্রাজেডি হলো এই যে, ঐ মারাপড়া মানুষদের কেউ-ই কারো(হিন্দু ধর্ম কিংবা ইসলাম ধর্ম) খাতায় সংযোজিত বা বিয়োজিত হয়নি ! ১ লাখ হিন্দুকে মেরে মুসলমানরা হয়তো ভেবেছিল হিন্দু ধর্ম মরে গেছে!কিন্তু তা এখনোও টিকে আছে এবং ভবিষ্যতেও টিকে থাকবে। অন্যদিকে, ১ লাখ মুসলমানকে মেরে হিন্দুরা হয়তো এটা ভেবে বগল বাজিয়েছিলো যে, ইসলাম ধর্ম শেষ হয়ে গেছে! তবে বাস্তবতা হলো এই যে, তাতে ইসলামের গায়ে কোন রকম আচর-ও লাগেনি। সেইসব লোক তো মুর্খ যারা মনে করে যে, বন্দুক দিয়ে ধর্মকে শিকার করা যায়! আদর্শ, ধর্ম, ঈমান, বিশ্বাস এইসব বিষয়গুলো মানুষের দেহে নয় আত্মায় থাকে। ছুরি, চাকু; আর, বন্দুক দিয়ে তা ধ্বংস করা যায়না।’’(১)
বিশ্বব্যাপি সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের গতিপ্রকৃতি এবং এর নেপথ্যে থাকা সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতা খুবই ভয়াবহ। সাম্প্রদায়িক সংঘাতের ঘটনাসমূহ পর্যবেক্ষন করলে প্রত্যেক ক্ষেত্রেই দেখা যাবে যে সন্ত্রাসবাদি কার্যক্রমের নেপথ্যে থাকে প্রচলিত সামাজিক কুসংস্কার, অশিক্ষা ও অপরাজনীতি। তেমনি ২০২২ সালে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসি কর্মকাণ্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে যে তার নেপথ্যে রয়েছে গভীর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। পৃথিবীর যেকোন দেশে এসব সাম্প্রদায়িক সহিংসতার নেপথ্যে একটি প্রভাবশালি রাজনৈতিক দল যদি সক্রিয় থাকে তখন তা সেই দেশ ও জাতির জন্য ভয়াবহ দুর্ভাগ্য হয়ে দাঁড়ায়।
বিশ্বের সুখি দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায় যে সেসব দেশের অধিকাংশ জনগণই উচ্চশিক্ষিত। তারা ধর্মীয় মতপার্থক্য নিয়ে নিজেদের মধ্যে বাড়াবাড়ি না করে জ্ঞান বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ হয়েছে তাই সেখানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা একদম শূণ্যের কোটায়। একটি দেশের রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিই মূলত সেদেশের জনগণের জন্য স্বস্তিদায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করে। বিশ্বের সুখি দেশগুলোর যাবতীয় সমৃদ্ধি অর্জনে অসাম্প্রদায়িক সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, উৎপাদনমুখি কর্মযজ্ঞ ও নারী-পুরুষ লিঙ্গ সমতা সবচেয়ে বেশি কার্যকর অবদান রেখেছে। তবে এশিয়ার দিকে তাকালে একদম ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। এশিয়ার অধিকাংশ দেশই এখন পশ্চিমা ডিভাইড এন্ড রুল নীতির প্রভাবে মারাত্মকভাবে সাম্প্রদায়িক সংক্রমনে ধুকছে। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িক সংঘাতে প্রতিনিয়ত মানুষের রক্তে মানুষই হোলি খেলে চলেছে। ধর্মজীবী রাজনীতির বলি হচ্ছে নিরিহ মানুষজন। সে নিরিখে বলতে গেলে বলতে হয় যে,
‘‘চীনের দুঃখ যেমন হোয়াংহো নদী,
ভারতের দুঃখ হলো আরএসএস-বিজেপি,
আর; বাংলাদেশের দুঃখ হলো সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস জামাত-বিএনপি।’’
হাজার বছর আগে পৃথিবীর অন্যতম সমৃদ্ধ অঞ্চল ছিলো দক্ষিণ এশিয়া বা ভারতীয় উপমহাদেশ। ১৫২৬ থেকে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দ অবধি এ অঞ্চল ছিলো বিশ্বের অন্যতম ধনী মুঘল সাম্রাজ্য। অথচ পরিতাপের বিষয় আজ এই উত্তর আধুনিক যুগে এসেও সাম্প্রদায়িক সামাজিক সংঘাতের ব্রিটিশ অভিশাপ শতবছরের বেশি সময় ধরে ক্ষতবিক্ষত করে চলছে দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশ গুলোকে । যার আঘাতে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারতের আপামর জনগণ।
অথচ আজ থেকে শত বছর পূর্বেও কৃতদাস হিসেবে জ্যান্ত মানুষ দেদারছে বেচাকেনা হতো ইউরোপ-আমেরিকার অলিতে গলিতে। সেকালে ইউরোপ-আমেরিকায় শেতাঙ্গ ও অশেতাঙ্গদের জন্য আলাদা যাতায়াতের রাস্তা থাকতো। যেখানে শেতাঙ্গদের চলাচলের রাস্তা ছিলো পাকা করা আর অশেতাঙ্গদের রাস্তা ছিলো কাচামাটির ভাঙাচোরা অবস্থা। এইতো বেশিদিন আগের কথা নয় আমেরিকার পুলিশ বাহিনী অশেতাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডকে প্রকাশ্য দিবালোকে গলায় বুট চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। যার ফলে আমেরিকা জুড়ে #BlackLivesMatter আন্দোলনের দাবানল ছড়িয়ে পড়েছিলো।
এদিকে বাংলাদেশ ও ভারতের ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের দুই ধরণের নমুনা বেশি প্রচলিত যার মধ্যে প্রথমত সামাজিক প্রবণতা;
উদাহরণ স্বরূপ, স্থান কাল পাত্রের কল্পিত নাম দিয়ে একটি ঘটনা উল্লেখ করছি, ‘‘বাংলাদেশের কোন এক এলাকার জনৈক মজিদের সাথে কানাই দাসের ঝগড়া বা অন্যকোন বিরোধ হয়েছে। হয়তোবা মজিদ কানাইদাসের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা ধার নিয়ে তা না দেয়ার ফন্দি খুঁজতেছিলো! কিন্তু মজিদ কোনভাবেই কানাই দাসকে ফাঁকি দিতে পারছেনা। তাই সে তাঁর তুলনামূলক একটু চালাক চতুর কুটিল স্বভাবের মুসলিম বন্ধুর কুপরামর্শ মত কানাই দাসের নাম ও ছবি দিয়ে একটি ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে সেখান থেকে ইসলাম ধর্মের আল্লাহ ও নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে কটুক্তি করে লেখা পোস্ট করে। ব্যাস কাজ হয়ে গেলো! ঘটনার সসত্যাসত্য না জেনেই সাধারণ তৌহিদী জনতা কানাই দাসের বাড়িতে লুটপাট চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করে ক্ষান্ত হয়নি সে এলাকার প্রতিটি হিন্দু পরবারের উপর ধর্মের নামে খড়গহস্ত হয়ে রক্তপিপাসায় মেতে ওঠে নিরীহ অথচ ধর্মান্ধ গ্রামবাসী!
ঠিক একইচিত্র দেখা যায় কাটাতারের ওপারে ভারতে! গুজরাটের জনৈক মুসলমান ভারতীয় নাগরিক শামসুল হকের মাটন বিড়ানির দোকানে নিয়মিত বাকিতে খেয়ে থাকেন স্থানীয় সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবারের বখাটে ছেলে রামদাস। কিন্তু অনেকদিনের বকেয়া পরিশোধ না করায় শামসুল একদিন রামদাসকে খুব কথা শোনায়। এতে আতে গা লাগে রামদাসের। সে শামসুলকে শায়েস্তা করার ফন্দি খুঁজতে থাকে। একদিন সুযোগ বুঝে রামদাস, শামসুল হকের দোকানে লুকিয়ে গরুর মাংস রেখে আসে। ব্যাস এখানেও কাজ হয়ে গেলো! মুহুর্তেই গেরুয়াবাহিনী এসে জয় শ্রী রাম ধ্বনিতে শামসুল হকের দোকান তছনছ করে দেয়! তারা শুধু দোকান লুটপাট করেই ক্ষান্ত হয়না শামসুল হকের মহল্লায় যত মুসলমান আছে সবার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়।’’
এখন ভাবুন তো উপরোক্ত দুইটি দেশের দুইটি ঘটনায় প্রকৃত অপরাধী কে, আর ভুক্তভোগীইবা হলেন কারা?
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ যেহেতু ধর্মের ভিত্তিতে কোন দেশ নয় সেহেতু এদেশের ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে কোন নাগরিক সংখ্যালঘু নয়। ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশকে রাজনৈতিকভাবে ও অর্থনৈতিকভাবে খর্ব করার লক্ষ্য নিয়ে ব্রিটিশদের ষড়যন্ত্রমূলক সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে দেশভাগের বিষ সংক্রামিত হয় উপমহাদেশজুড়ে। দেশভাগের সাম্প্রসায়িক রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ায় হিন্দু মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের কত নিরীহ মানুষ যে বেঘোরে প্রাণ হারিয়েছে তার কোন হিসেব নেই। দেশভাগ পরবর্তি বাস্তবতায় বাংলাদেশ,ভারত ও পাকিস্তানে। এছাড়া পার্শ্ববর্তী দেশ মায়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর জাতিগত নিধন অব্যাহত রেখেছে খোদ সেদেশের রাষ্ট্রীয় সেনাবাহিনী ও উগ্রবাদি সন্ত্রাসি বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ধর্মের সাইনবোর্ড সাটানো রাজনৈতিক সংগঠন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে সামাজিক অবস্থান লোকবলে দুর্বল সম্প্রদায়ের উপর ক্ষমতার দাপট প্রকাশের চিরাচরিত সামাজিক প্রবণতা হিসেবে সংখ্যাগুরুরা নিপিড়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। তাছাড়া একটি দেশের অধিকাংশ মানুষ অশিক্ষায় নিমজ্জিত থাকলে সেখানে বৃহত্তর গোষ্ঠীর ধর্মানুভূতির দায় চাপিয়ে ক্ষুদ্রতর গোষ্ঠীর কাউকে ঘায়েল করা সবচেয়ে সহজ অথচ অব্যর্থ কৌশল! আমাদের দেশে উগ্রমুসলমানরা যেমন হিন্দুকে অহেতুকভাবে নিপিড়ন করতে সদা সুযোগ খোঁজেন। তেমনি কাটাতারের ওপারে ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদি গেরুয়াবাহিনীও সেদেশের নিরিহ মুসলমানদের নিপিড়নে সদা তৎপর। সুতরাং এই সামাজিক সমস্যাকে রাজনৈতিকভাবে তোষণ করে যে শ্রেনি তাদেরকে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে বর্জন করতে হবে। সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক ফায়দালাভের উদ্দেশ্যে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস।
দৃষ্টান্তস্বরূপ অতিতের শত শত ঘটনার কথা উল্লেখ করা যাবে। সাম্প্রতিককালে বিএনপির মির্জা ফখরুল সাহেবের একটি ব্যাপার আপনারা লক্ষ্য করেছেন? তার চরিত্রের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো তিনি উত্তেজনা দমিয়ে রাখতে পারেন না। তার চিন্তা-ভাবনার ভেতর গোপন কিছুও বেশীক্ষণ চেপে যেতে পারেন না। কোন না কোন ভাবে তিনি তা প্রকাশ করেই ফেলেন একেবারে ভরা মজলিসে!
আপনাদের কি মনে আছে কুমিল্লার মন্দিরে হামলার কথা? যেখানে ইকবাল নামের এক মুসলিম ব্যক্তি মন্দিরে রাতের আধারে কোরআন শরীফ রেখে এসেছিল ঠিক তারপরেই শুরু হয়ে গিয়েছিল দেশব্যাপি সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস? অবশ্যই মনে থাকার কথা। এই ঘটনা ভোলার নয় । এই ঘটনার আগে পত্রপত্রিকায় একটি ডায়ালগ খুব চলছিল – “দড়ি ধরে মারো টান, রাজা হবে খান খান” – বলেছিলেন বিএনপি মহাসচীব মির্জা ফখরুল সাহেব। ঠিক তার পর পরই শুরু হয় কুমিল্লার সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস এবং কুমিল্লার মন্দিরে কোরআন শরীফ রেখে আসার ঘটনা। এরপর আবার এক বিএনপি নেতার ফোনের কথোপকথন লিক হয়েছিল যেখানে নির্দেশ দেয়া হচ্ছিল সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস ঘটানোর। গণমাধ্যমের বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের কল্যাণে যার কদর্য চিত্র দেখেছে সমগ্র দেশবাসী। যাহোক, মির্জা ফখরুল সাহেব প্রচ্ছন্নভাবে স্বীকার করে নিয়েছিলেন যে সে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসে বিএনপির হাত ছিলো এবং সাম্প্রতিক নড়াইলের ঘটনাতেও বিএনপির হাত রয়েছে। আসলে তিনি সেসময় নিজেদের গোপন প্ল্যানিং গোপন রাখতে পারেননি। উত্তেজনার বশবর্তি হয়ে প্রেস কনফারেন্সে “দড়ি ধরে মারো টান” ডায়ালগ দিয়ে তা অনেকটা ঘোষণাই দিয়ে দিয়েছিলেন যা দেশের মানুষ ঘটনার পরে গিয়ে বুঝতে পেরেছে।
নড়াইলে কিছুদিন আগের যে ঘটনাটি ঘটল ঠিক তার একদিন আগে ফখরুল সাহেব পুনরায় নিজের উত্তেজনা ধরে রাখতে ব্যর্থ হলেন । এবার দিলেন নতুন ডায়লগ “সরকার পতনের সাইরেন বাজছে”। দেশের সাধারণ মানুষ প্রথমে বুঝল না ব্যাপারটা আসলে কি! কিন্তু এখন একেবারে দিনের আলোর মত পরিষ্কার। সাইরেন বাজা বলতে আবারো পরোক্ষভাবে তিনি ধর্মীয় কার্ড খেলে দেয়াকেই বুঝিয়েছেন। সাম্প্রাদায়িক সন্ত্রাসকে উসকে দেয়া। প্রথমে দড়ি ধরে মারো টান আর এবার সাইরেন বাজার হুমকি। যা একেবারে দিনের আলোর মত পরিষ্কার।
কালের বিবর্তনে মানুষ এখন পড়ালেখা করে শিক্ষিত হয়েছে। তারা এখন ভালো মন্দ বিচার করতে শিখেছে। কাজেই জনবিচ্ছিন্ন গণবিরোধী বিএনপির হাতে গুজব সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস ছাড়া এই মুহুর্তে অন্য কোন অপশন নেই তাই বার বার একই নোঙরা খেলা খেলেই রাজনীতির মাঠে টিকে থাকার শেষ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ফখরুল সাহেবের ধারনা, এমন করেই ক্ষমতার চেয়ার দখল করতে পারবেন। কিন্তু দেশের সাধারণ জনগণ কি এসব বোঝেন না? অবশ্যই তারা সবই বোঝেন। আর উত্তেজনা ধরে রাখতে না পেরে নিজেদের গোমর নিজেরা এভাবে ফাঁস করে দিলে মানুষেরই বা আর কি করার থাকে! বিএনপি এখন নিচে নামতে নামতে এতটাই তলানিতে পৌঁছে গেছে, অন্ধকারে ডুবতে ডুবতে এতটাই নিমজ্জিত হয়েছে যে সেখান থেকে তাদের ফিরে আসার আর কোন উপায় নাই। শুধু একটা বার কল্পনা করে দেখুন, বিএনপি যদি কোন মিরাকলে ক্ষমতায় চলেও আসে, তাহলে কি হতে পারে, দেশের কি অবস্থা হতে পারে, আপনার ও আপনার পরিবারের কি হতে পারে! হাওয়া ভবন খোয়াব ভবনের খাম্বা ব্যবসায়ি বেনিয়াগোষ্ঠী, স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতিতে যুদ্ধাপরাধী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষক বিএনপি এখনো ক্ষুধার্ত হায়েনার মত অপেক্ষা করে বসে আছে তারা বাংলাদেশকে আবার কবে ২০০১ থেকে ২০০৮ সালের মত করে লুটে পুটে খাবে!
তবে আশার কথা হলো যে বাংলাদেশের তরুণ সমাজ এখন সুশিক্ষিত হয়েছে। দেশবাসী এখন তাদের জন্য কি ভালো আর কি মন্দ তা বোঝেন। এখন চাইলেই গুজব ছড়িয়ে বেশিক্ষণ হালে পানি পায়না সাম্প্রদায়িক অপশক্তি।
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন,
‘‘আমি ধর্মনিরপেক্ষতার একটি চারা বাংলাদেশে রোপন করেছি। এই চারা কেউ যদি ছিড়ে ফেলতে চায়, উপড়ে ফেলতে চায় তাহলে বাংলাদেশের অস্তিত্ব সংকটে পড়বে।’’
পাকিস্তানি শোষনের বিপরীতে বাঙালি জাতির ২৩ বছরের অব্যাহত সংগ্রাম, ৩০ লক্ষ শহীদ ও লাখো মা বোনের জীবন সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত জাতির আত্মপরিচয়ের মহান পতাকাকে অক্ষত রাখতে দেশবাসীকে সর্বদা সচেতন ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রাণপ্রিয় স্বদেশভূমির অস্তিত্বের প্রশ্নে তরুণ প্রজন্মকে আপোষহীন থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় স্নাত হয়ে একটি অসাম্প্রদায়িক সুখী সমৃদ্ধ জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে নিজেদের আত্মনিয়োগ করতে হবে। নতুন প্রজন্মের স্লোগান হোক,
‘আমরা পাঁজর দিয়ে দূর্গ-ঘাঁটি গড়তে জানি
তোমার ভয় নেই, মা, আমরা প্রতিবাদ করতে জানি।’
লেখকঃ ইয়াসির আরাফাত-তূর্য, সাংগঠনিক সম্পাদক,
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
রেফারেন্স: সাহায় গল্প,মান্টোকে আফসানা, শাদাত হাসান মান্টো।
+ There are no comments
Add yours