অনাথ আশ্রম থেকে মিশনারি স্কুলে। মাধ্যমিকে পড়াশোনা করার সময় বাংলা একটি সিনেমা দেখেন তিনি। সিনেমায় দেখানো হয় এক এতিম মেয়ে স্বেচ্ছায় মানুষকে সেবা দিচ্ছে। সিনেমা দেখার পর স্বপ্ন বুনতেন তিনিও সেবিকা হবেন।
১৯৭৬ সালে মাধ্যমিক পাস করে রাজশাহীর খ্রিস্টিয়ান মিশন হাসপাতালে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারিতে ভর্তি হোন। ১৯৮১ সালে পড়াশোনা শেষ করে ১৯৮২ সালের ৬ জুন ঠাকুরগাঁও মহকুমা হাসপাতালে (বর্তমানে আধুনিক সদর হাসপাতালে) নার্স হিসেবে যোগদান করেন।
চাকরির দুই বছর পরেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। সংসারের ব্যস্ততা অন্যদিকে কর্মময় জীবন। এগুলো বাদ দিয়ে আলাদা কোনো বিষয়ে মনোনিবেশ করার সুযোগ ছিল না তার। তবে মনে তার সুপ্ত বাসনা তাড়া করতো উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার। সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিতে আবার শুরু করেন পড়াশোনা।
১৯৯৬ সালে বিএসসি করার জন্য ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত মহাখালী সেবা মহাবিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ১৯৯৮ সালে স্নাতক শেষ করেও ক্ষান্ত হননি তিনি। পরে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করার জন্য ভর্তি হন। ২০১৯ সালে মাস্টার্স সম্পন্ন করে চলতি বছরের ১৫ জুন ৬২ বছর বয়সে সনদ গ্রহণ করেন তিনি ৷ এই বয়সে আরেফা হোসেনের উচ্চশিক্ষায় ডিগ্রি অর্জনের বিষয়টি জেলার শিক্ষার্থীদের মাঝে সাড়া ফেলেছেন।
আরেফা হোসেন বলেন, যেহেতু এতিম, সেহেতু এর বাইরে আলাদাভাবে জীবন কাটানোর কোনো সুযোগ হয়ে ওঠেনি। ছোটবেলায় সবার মনে বড় হয়ে কিছু হওয়ার ইচ্ছে থাকে। তবে আমার স্বপ্ন বা ইচ্ছাটা ছিল একটু অন্যরকম। যেহেতু মিশনারি স্কুলে পড়াশোনা করেছি সেখানেই থেকেছি। আমি একটি বাংলা সিনেমা দেখেছিলাম। সেই সিনেমার ওই চরিত্র থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আমিও মনে মনে ভেবেছিলাম যে, মানুষের সেবা করব।তারপর নার্সিং কলেজে ভর্তি হই। সেখানে পড়াশোনা শেষ করি।
আরেফা হোসেন আরও বলেন, আমার স্বামী আমাকে সাহস দিয়েছেন। তার অনুপ্রেরণায় আমি উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পেরেছি। তিনি আমাকে বলেছিলেন উচ্চশিক্ষার যেহেতু সুযোগ আছে তুমি ভর্তি হয়ে যাও। আমি এই বয়সে মাস্টার্স করেছি আমার স্বামীর অনুপ্রেরণায়। যদিও তিনি আমার সফলতা দেখে যেতে পারেননি। ২০১৯ সালে তিনি মারা গেছেন।
+ There are no comments
Add yours