নিজস্ব প্রতিবেদক
সন্দ্বীপ নাগরিক সমাজের সংবাদ সম্মেলনে ভাসানচরে রোহিঙ্গা শরণার্থী স্থানান্তর প্রক্রিয়া বাতিল এবং সন্দ্বীপের লক্ষাধিক নদী ভাঙনে অসহায় উদ্বাস্তুদের ভাসানচরে পুনর্বাসনের দাবি জানানো হয়।
এ দাবিতে আজ সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এফ. রহমান হলে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, সন্দ্বীপের সাবেক ন্যায়মস্তি ইউনিয়ন জেগে উঠার পর ঠেঙ্গার চর নামে পরিচিতি পাওয়া বর্তমান ভাসানচরে বার্মা থেকে আগত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্থানান্তর প্রক্রিয়া চলমান। এরই অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ৪০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ভাসানচর পরিদর্শন করেন। আমরা মনে করি ভাসানচরে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা স্থানান্তরিত হলে তাদের স্বদেশ বার্মায় ফেরত পাঠানো অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
সন্ত্রাস এবং মাদকে জড়িত রোহিঙ্গারা ভাসানচরে স্থানান্তরিত হলে সন্দ্বীপ, হাতিয়া সহ তৎ সংলগ্ন সব দ্বীপ, বৃহত্তর চট্টগ্রাম, বৃহত্তর নোয়াখালী, ভোলা এমনকি বাংলাদেশের জনজীবনে পরিবেশগত বিপর্যয়, আইন শৃঙ্খলার অবনতিসহ সংলগ্ন এলাকায় সন্ত্রাস এবং মাদকের বিস্তার ঘটতে পারে। চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলা হয়ে উঠতে পারে ইয়াবা কারবারের কেন্দ্রবিন্দু, নদী পথে ইয়াবা সহজেই সারাদেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। নদী পথে তৈরী হতে পারে অস্থিরতা। সাগরে আমাদের সম্ভাবনাময় মৎস্য সম্পদ আহরণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে, সাগরে ডাকাতি বৃদ্ধি পেতে পারে, নৌ চলাচল বিঘ্নিত হতে পারে, সমগ্র চট্টগ্রামে অস্থিরতা বিরাজ করতে পারে। সন্দ্বীপের সার্বিক পরিবেশ পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
সন্দ্বীপ-হাতিয়া-চট্টগ্রাম-নোয়াখালী, ভোলা এমনকি বাংলাদেশ হুমকির মধ্যে পড়তে পারে, শান্তির দ্বীপ সন্দ্বীপ অশান্তিতে পরিণত হতে পারে। সন্দ্বীপ সহ তৎ অঞ্চল হারাতে পারে নিজস্ব স্বকীয়তা।
বক্তারা দাবি করেন সম্ভবত বিশ্বে এমন কোনো নজির নেই শরণার্থীদের সীমান্ত থেকে ২০০শ মাইল দূরে দ্বীপে রাখার।
আমরা বার্মা থেকে আগত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের স্বদেশ বার্মায় ফেরত পাঠাতে সরকারের চলমান কূটনৈতিক তৎপরতা আরো বৃদ্ধির জোর দাবি জানাই।
কেননা, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর বিদ্যমান রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান নয়। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে তারা সেখানে স্থায়ী হয়ে এখন থেকে একযুগ পরে আলাদা ভূ-খন্ডের দাবি করতে পারে। তখন রাষ্ট্রতন্ত্রকেই তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হতে পারে। বক্তারা রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যার শান্তিপূর্ণ সুষ্ঠু স্থায়ী সমাধান চান।
রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে তা আমাদের আঞ্চলিক সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। রোহিঙ্গাদের কারণে ভাসানচর সংলগ্ন অঞ্চলের নাগরিকদের পাসপোর্ট পাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। যে সমস্যা ইতিমধ্যে টেকনাফ ও উখিয়াতে দেখা দিয়েছে। বর্তমানে কক্সবাজার অঞ্চলের মানুষ পাসপোর্ট পেতে বিভিন্ন হয়রানির শিকার হচ্ছে।
বক্তারা বার্মা থেকে আগত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভাসানচরে স্থানান্তর প্রক্রিয়া বাতিলের জোর দাবি জানান। একই সাথে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সন্দ্বীপের সাবেক ন্যায়মস্তি ইউনিয়ন জেগে উঠার পর ঠেঙ্গারচর নামে পরিচিতি পাওয়া বর্তমান ভাসানচরে সন্দ্বীপের নদী ভাঙনে অসহায় জলবায়ু উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের জোর দাবি জানান। প্রসঙ্গত: সন্দ্বীপের নদী ভাঙনে অসহায় জলবায়ু উদ্বাস্তু জনসংখ্যা লক্ষাধিক।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন-সন্দ্বীপ নাগরিক সমাজের প্রধান সমন্বয়ক অধ্যক্ষ মুকতাদের আজাদ খান।
সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন-সন্দ্বীপ এসোসিয়েশন চট্টগ্রামের সাবেক সভাপতি মো. এনায়েত উল্লাহ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. মোশাররফ হোসাইন, লায়ন্স ক্লাব অব চট্টগ্রাম সন্দ্বীপের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট লায়ন আলহাজ মো. সলিমুল্লাহ, সন্দ্বীপ নাগরিক সমাজের সমন্বয়ক মো. মিজানুর রহমান ও মাকছুদের রহমান, এবি ব্যাংক সন্দ্বীপ শাখার সাবেক ম্যানেজার আলহাজ মো. সোলাইমান, এক্সিম ব্যাংক সন্দ্বীপ শাখার সাবেক ম্যানেজার অ্যাডভোকেট মো. তসলিমুল আলম, মানবাধিকার সংগঠক লায়ন এমদাদুল করিম সৈকত, কবি কে.এম. আজিজ উল্যা, ন্যায়মস্তি ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের সাবেক ৪ বারের ইউপি সদস্য সেন্টু চক্রবর্ত্তীর পুত্র তরুণ চক্রবর্ত্তী।
উপস্থিত ছিলেন-সাপ্তাহিক উপনগর নির্বাহী সম্পাদক কেফায়েতুল্লাহ কায়সার, সন্দ্বীপ রক্তদাতা সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আলাউদ্দিন আল আকাশ, সাপ্তাহিক আলোকিত সন্দ্বীপ-এর স্টাফ প্রতিনিধি নুর মোস্তফা আলী হাসান, সন্দ্বীপ ল’স্টুডেন্টস্ ফোরামের সাবেক সভাপতি এম. হাসান খান, সাংবাদিক আবদুল হান্নান হিরা, মোবারক হোসেন ভূঁইয়া, প্রলয় দাশ, রিয়াজুল কবির রিজভী, স্বর্ণদ্বীপ ব্লাড ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা আকরামুল হাসান প্রমুখ।
+ There are no comments
Add yours