দেলোয়ার হোসাইন টিসু,কক্সবাজার থেকে
করোনার কারণে বন্ধ থাকা অবস্থায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে আকস্মিকভাবে ভেসে আসে বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য, ছেঁড়া জাল, সামুদ্রিক কাছিম ও মদের খালি বোতল। এসব বর্জ্য কোথা থেকে আসে তা নিয়ে স্থানীয় ও পরিবেশবাদীদের মাঝে এক ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়।
ঘটনার কারণ খুঁজে বের করতে সরকারের পক্ষে থেকে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। কমিটির তথ্য মতে, সমুদ্রে মানুষের দীর্ঘদিনের ফেলা বর্জ্যই তীরে উঠে আসে। সরকারের পক্ষ থেকে সমুদ্র তলদেশ পরিষ্কারের পদক্ষেপ না নিলে সাগরের জীব বৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
চলতি বছরের ১০ থেকে ১২ জুলাই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে অকস্মিক ভাবে ভেসে আসে বিপুল পরিমাণ মদের খালি বোতল, প্লাস্টিক বর্জ্য, ছেঁড়া জাল ও সামুদ্রিক কাছিম। জোয়ারে এসব বর্জ্য তীরে এসে জমে বলে জানিয়েছিলেন স্থানীয়রা। তবে এত বিপুল পরিমাণ বর্জ্য কোথা থেকে এলো তা কেউ আবিস্কার করতে পারেনি।
কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতের কলাতলীর সায়মন বীচ হতে দরিয়ানগর পর্যন্ত এলাকায় স্তুপ হয়ে থাকা আবর্জনা। এসব বর্জ্য তেজস্কৃীয়তায় অনেক সামুদ্রিক কাছিম মারা পড়ে এবং অজ্ঞান হয়ে তীরে ভেসে আসে।
কক্সবাজার বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতিকে আহবায়ক ও পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের উপপরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদাকে সদস্য সচিব করে সাত সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির দেয়া তথ্য মতে, কক্সবাজারে ময়লার স্তুপ অধিকাংশই দেশীয় বর্জ্য। দীর্ঘ দিন থেকে সমুদ্র তলদেশে জমে থাকা বর্জ্য বৃষ্টি, ঢেউ, ঝড়ের মাধ্যমে তীরে উঠে এসেছে। জেলেদের ফেলে আসা জালে জড়িয়ে কচ্ছপ ও বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মারা যায়।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের উপপরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদা বলেন, ভেসে আসা বর্জ্যের মধ্যে ব্যবহার্য প্লাস্টিক পণ্য ও মদের বোতল বেশি যা দীর্ঘ দিন থেকে সাগরের তলদেশে জমেছে। স্থানীয় ভাবে ব্যবহার করা পণ্যগুলো এভাবে সৈকতে ফেলার কথা নয়। সৈকতে অবস্থান করা কোন বড় জাহাজ এসব বর্জ্য ফেলেছে বলে ধারণা করছি।
সমুদ্র তলদেশ অনুসন্ধানী বিশেষজ্ঞ এস এম আতিকুর রহমান বলেন, সমুদ্র বর্জ্য জীববৈচিত্র্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। বিভিন্ন নদী-খালের বর্জ্য একসময় সাগরে এসে জমা হয়। এছাড়া জাহাজ, অসচেতন পর্যটন, হোটেলও সমুদ্রে জমা হয়।
বিভিন্ন ছোট বড় মাছ ধরার জাহাজ থেকে জাল আটকে গেলে তা কেটে দেয়া হয়। এতে সমুদ্র তলদেশে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণি আটকা পড়ে মারা যায় এবং জীব বৈচিত্র্যের ক্ষতি হয়। পৃথিবীর অনেক দেশে ড্রোন ক্যামেরার মাধ্যমে এসব ময়লা খুঁজে খুঁজে সাগরের তলদেশ পরিচ্ছন্ন করা হয়। আমাদের দেশেও এই ধরনের কার্যক্রম চালু হওয়া উচিত।
কক্সবাজার সোসাইটির সভাপতি গিয়াস উদ্দিন বলেন, প্রকৃতিগতভাবে সমুদ্রের ধর্মই হলো কোনো কিছুকে ধরে না রেখে উপরে ফেলে দেয়া। তাই দীর্ঘ দিন থেকে জমা বর্জ্যই প্রাকৃতিক ভাবে তীরে এসে জমা হয়েছে। তিনি বলেন, সমুদ্রে বর্জ্য আসা যেমন গুরুত্বপূর্ণ একই ভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও বিবেচ্য বিষয়। সুত্রে জানা যায় অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, দুবাইসহ বিশ্বের অনেক দেশেই সাগরের বর্জ্য অপসারণে সরকারের পক্ষে থেকে বিভিন্ন ধরণের পদক্ষেপ নেয়া হয়। প্রতিনিয়ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এই ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয় না। এই ধরনের বর্জ্য অপসরনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সমুদ্র তলদেশ পরিচ্ছন্নতার কর্মসূচি হাতে নেয়া এখন সময়ের দাবি মনে করছেন পরিবেশবাদীরা।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লেঃ কর্ণেল (অব:) ফোরকান আহমদ বলেন, সমুদ্র সৈকতে এই ধরনের বর্জ্য উঠে আশা খুবই অনভিপ্রেত। ভবিষ্যতে এই ধরনের ক্ষতিকারক ময়লার স্তুপ আর যেন ভেসে না আসে তার জন্য এখন থেকেই আমাদের কাজ করতে হবে। তারই অংশ হিসাবে সৈকতের তীরে যে সকল দোকান রয়েছে তা অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে তিনি জানান।
+ There are no comments
Add yours