সিম্পল লিভিং, হাই থিংকিং, এটাই ছিল আমাদের মটো (আদর্শ)। কামাল সব সময় অত্যন্ত সাদাসিধাভাবে চলাফেরা করতো। তার পোশাক-পরিচ্ছদ, জীবন-যাপন খুবই সীমিত ছিল। আমার বাবা ক্ষমতায় ছিলেন সত্যি, কিন্তু আমরা কখনও এই ক্ষমতাটাকে বড় করে দেখিনি। এটা আমার মা-বাবার শিক্ষা ছিল না। আমার আব্বা ৩২ নম্বরের বাড়িতেই থেকে গিয়েছিলেন।
এমন কী দেশ স্বাধীন হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির ছেলে বা প্রধানমন্ত্রীর ছেলে হিসেবে কোনো অহমিকা ছিল না তার। এটা আমার মা-বাবা কখনও চাননি। খুব সাধারণভাবে জীবনে চলা, এটাই ছিল তার লক্ষ্য।
শেখ কামালের জীবন থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের যুব সমাজ নিজেদের মেধা-মনন বিকশিত করে বাংলাদেশের মর্যাদা উন্নত করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, বহুমুখি প্রতিভা নিয়ে সে জন্মেছিল। হয়তো বেঁচে থাকলে আরও বেশি উন্নতি করতে পারত।
সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে আজ (শুক্রবার) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের ৭৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন এবং শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার-২০২২ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ সব কথা বলেন।
ভাইয়ের স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্কুল পাস করে যখন ঢাকা কলেজে ভর্তি হলো, তখন থেকে সে ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী। আমরা সবাই সংগঠন করতাম। কখনও কোনো পদ নেওয়ার চিন্তা আমাদের ছিল না। আমার বাবা এদেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করেন, তার আদর্শ নিয়ে আমরা পথ চলতাম। তিনি আমাদের শিখিয়েছিলেন সাদাসিধা জীবন-যাপন করতে হবে।
একাত্তরের মার্চের উত্তাল দিনগুলোর বর্ণনা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ২৫ মার্চ পাকিস্তান হানাদার বাহিনী গণহত্যা শুরু করে। সেই সময় জাতির পিতা স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, যেটা ২৪ মার্চে প্রথম প্রহরে সমগ্র বাংলাদেশে আমাদের এখন যে বিজিবি তখনকার ইপিআরের মাধ্যমে এবং পুলিশের ওয়্যারলেসের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। রাতে আমাদের বাসায় আক্রমণ করে। বাবাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। বাসা সম্পূর্ণ ভেঙে-চুড়ে রেখে যায়।
তিনি আরও বলেন, দ্বিতীয় দিন আবার আক্রমণ করে। বাবাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে শুনে কামাল আবাহনী ক্লাবের ওখান থেকে প্রায় ৫০টা ওয়াল টপকে মাকে দেখতে আসে। তখন কারফিউ ছিল। পাশের বাসা থেকে ডা. সামাদ সাহেব আমার মাকে আর রাসেলকে ওখানে নিয়ে যান। ২৫ তারিখ রাতে আব্বা আমাদের অন্য জায়গায় পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। কামাল সেখান থেকে মুক্তিযুদ্ধে চলে যায়। কামাল মুক্তিযুদ্ধে যখন যায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেছিলেন লেখাপড়ার জন্য তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে, কামাল কিন্তু সেটাতে রাজি হয়নি। কামাল বলেছে, আমি যুদ্ধ করতে এসেছি, আমি ট্রেনিং নেব। দেরাদুনে প্রথম কোর্সে সে ট্রেনিং নেয় এবং যুদ্ধে যায়। পরবর্তীতে তাকে কর্নেল ওসমানীর এডিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। কামাল এবং নূর একই সাথে কর্নেল ওসমানীর এডিসি ছিল।
তিনি বলেন, নিয়তির কী পরিহাস ১৫ আগস্ট নূরই প্রথম আসে। ফারুকের নেতৃত্বে যে গ্রুপটা আমাদের ৩২ নম্বরের বাড়ি আক্রমণ করে সেখানে কর্নেল নূর-হুদা এরা ছিল। কামাল মনে হয় কিছু ধোকায় পড়ে গিয়েছিল তাকে দেখে। ভেবেছিল তারা বোধহয় উদ্ধার করতে এসেছে। কিন্তু তারা যে ঘাতক হয়ে এসেছে সেটা বোধহয় জানতো না। কারণ প্রথমে তারা কামালকে হত্যা করে। এরপর একে একে পরিবারের সকল সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
শেখ হাসিনা বলেন, আজ কামাল আমাদের মাঝে নেই। আধুনিক ফুটবল খেলা, আবাহনীকে গড়ে তোলা বা বিভিন্ন খেলাধুলায় এদেশের ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে যুবকদের সম্পৃক্ত করায় একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছে কামাল।
+ There are no comments
Add yours