ইউনুস আলী, জেলা প্রতিনিধিঃ
গত কয়েকদিনের বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে নদীর প্রচন্ড স্রোতে ধরলা নদীর ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। গত কয়েকদিনের অব্যাহত ভাঙ্গনে আবাদী জমি, স্কুল, বেশকিছু বসতভিটা, নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙ্গনের কারণে বর্তমানে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নদী পাড়ের হাজারো মানুষ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সদর উপজেলার মোগলবাসা ইউনিয়নের সংলগ্ন চর কৃষ্ণপুর গ্রামে ধরলার পূর্ব পাড়ে ৩ কি.মি. পর্যন্ত গত ১৫-২০ দিনের ধরলা নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গনে শতাধিক পরিবারের বসতভিটা, গাছপালা ও ফসলি জমি সহ সরকারী-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। ছোট হয়ে আসছে মোগলবাসা ইউনিয়নের পরিধি। ভেঙ্গে পড়েছে এসব এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা। অনেকেই ভাঙ্গনের হাত থেকে বাঁচতে ঘরবাড়ি ভেঙ্গে সরিয়ে নিচ্ছে।
ভাঙ্গনের কবলে পড়ে অনেকেই এখন বসবাস করছে খোলা আকাশের নিচে। ভাঙ্গনের কারণে নদী পাড়ের বেশির ভাগ মানুষ এখন আতঙ্কে রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা আজিজল হক, অবরুদ্দি মুন্সি, এছা মুন্সি, মাইদুল ইসলাম, ফারুক মিয়া, শামছুল হক, মনছার ডিমালী, নেলপু, কবির আলী, মজির উদ্দিন, বেলাল কবিরাজ, দুলাল মিয়া, নায়েব আলী, মুকুল মিয়া, ছলিমুদ্দিন, কাছরণ বেওয়া, গহুর আলী, শামসুল আলম, ছয়ফুল সহ প্রায় শতাধিক পরিবারের লোকজন নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। হুমকির মুখে পড়েছে আবেদ আলী (ঘাটিয়াল), আজগার আলী, আহাদ আলী, হাজী রিয়াজুল হক, ইয়াকুব মাস্টার, আমির সওদাগর, বাবলু মিয়া, ইয়ামিন, দারোগ আলী, হাছেন আলী, এরশাদুল হক সহ সহ শতাধিক পরিবার।
তাছাড়াও চর কৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও স্থানীয় জামে মসজিদ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পার্শ্ববর্তী নয়ারহাট বাজার, বল্টুর মোড়, নয়ারহাট উচ্চ বিদ্যালয়, চর সিতাইঝাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ সরকারি-আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগের রাস্তাঘাট হুমকির মুখে পড়েছে। স্থানীয় জামে মসজিদের মোয়াজ্জেম এছাহাক আলী জানান, গত কয়েকদিনে ভাঙ্গনের শিকার হয়ে অনেকে গৃহহীন হয়ে পড়েছে। স্থানীয় জামে মসজিদটি বিলীন হয়ে গেছে তাই গত শুক্রবারের জুম্মার নামাজ বল্টুর মোড় সংলগ্ন রাস্তায় খোলা আকাশের নিচে জামায়াত আদায় করা হয়।
এ পর্যন্ত ইউপি চেয়ারম্যান বা মেম্বার কোন খোঁজ খবর নেয়নি। স্থানীয় আবেদ আলী (ঘাটিয়াল) জানান, নদী ভাঙ্গনে তার আমন আবাদ ৫ বিঘা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে, হুমকির মুখে পড়েছে তার বসতবাড়ী। উক্ত এলাকার দায়িত্বরত কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তা এলাকায় আসেনি। ডাক্তার রোস্তম আলী জানান, গত ২০১৭ সাল হতে যত ভাঙ্গন হয়েছে তার মধ্যে ২০২০ সালের ভাঙ্গন ভয়াবহ রূপ দেখা দিয়েছে। কাপড় ব্যবসায়ী দারোগ আলী জানান, তার পৈত্রিক ৭ বিঘা আবাদী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে নিজ বসতবাড়ী হুমকির সম্মুখিন। ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় কেউ পরিদর্শন বা খোঁজ খবর নেননি।
ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান বাবলু মিয়ার সাথে কথা হলে তিনি জানান, ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় দু’বার খোঁজ খবর নিয়েছি। প্রকৃত ভাঙ্গন কবলিত পরিবারের তালিকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে। কিন্তু ভাঙ্গন রোধে বা ভাঙ্গন কবলিত পরিবারে সাহায্যের জন্য কোন বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। স্থানীয় ইউপি মেম্বার রবিউল ইসলাম রবি জানান, ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় খোঁজ খবর নিয়েছি। তালিকা প্রস্তুত করে কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে।
এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, চতুর্থ দফায় বন্যার পানি ও ভাঙ্গনে ৪’শ একর আমন আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। অব্যাহত ভাঙ্গন রোধে এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সহ প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
+ There are no comments
Add yours