রংপুরের কাউনিয়ায় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে সানজিদা আক্তার ইভা নামে এক স্কুলছাত্রীর হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ।
ত্রিভুজ প্রেমের বলি হতে হয়েছে দশম শ্রেণিপড়ুয়া ওই শিক্ষার্থীকে। আট মাস আগে প্রেমিক নাহেদুল ইসলাম ওরফে সায়েমের সঙ্গে প্রেমের বিচ্ছেদ ঘটে। এরই জের ধরে ছুরিকাঘাতে সানজিদাকে করে হত্যা করেন প্রেমিক সায়েম। প্রেমিক নাহেদুল ইসলাম সায়েম রংপুরের পীরগাছা উপজেলার কল্যাণী ইউনিয়নের তাশুক উপাশু গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য নুর হোসেনের ছেলে। তিনি রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) সকালে রংপুর জেলার সহকারী পুলিশ সুপার (সি সার্কেল) মো. আশরাফুল আলম পলাশ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এএসপি আশরাফুল আলম বলেন, এই হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটনের জন্য সানজিদার ব্যাগে পাওয়া একটি খাতা ও সোর্সের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রেমিক নাহিদুল ইসলাম ওরফে সায়েমকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে নেওয়া হয়। সেখানে দেওয়া জবানবন্দিতে সায়েম তার প্রেমিকা সানজিদার সঙ্গে তিন বছর আগে পরিচয় থেকে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল বলে জানায়।
তিনি আরও বলেন, কিছুদিন আগে সায়েম ও সানজিদার সম্পর্ক ভেঙে গেলেও যোগাযোগ অব্যাহত থাকে। এরই মাঝে গত ১৬ আগস্ট দুপুরে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সায়েম সানজিদাকে নিয়ে রংপুর নগরীর শাপলা টকিজে সিনেমা দেখতে যান। সেখানে সানজিদার নতুন প্রেম নিয়ে উভয়ের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়।
পরে সায়েম তার পূর্ব পরিচিত আরও দুইজনের সাহায্যে কৌশলে সানজিদাকে মাহিগঞ্জে রেখে পরে সেখানে আবার মিলিত হয়। তারপর তারা পীরগাছায় তিস্তা নদীর পাড়ে নির্মিত আলীবাবা থিম পার্কে ঘুরতে যায়, কিন্তু রাত হয়ে যাওয়ায় সানজিদা ফিরে আসার জন্য চাপ দেয়। এরপর মধুপুর রোডের একটি ফাকা জায়গায় নিয়ে সানজিদার একাধিক প্রেম নিয়ে আবার তর্কাতর্কি শুরু হয়। এক পর্যায়ে সায়েমসহ তিনজন মিলে উপর্যুপরি ছুরিকাহত করে সানজিদাকে রাস্তার পাশে ফেলে পালিয়ে যায় তারা।
আশরাফুল আলম জানান, গ্রেপ্তার সায়েম হত্যার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ইতোমধ্যে আরও একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তদন্ত অব্যাহত।
এদিকে আজ সকালে আসামি সায়েম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে তাকে রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক আনিসুর রহমান।
কাউনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মীর হোসেন জানান, হাসপাতালে আনার আগেই মেয়েটির মৃত্যু হয়েছে। তার গলায় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১৮টি জখমের চিহ্ন ছিল।
+ There are no comments
Add yours