সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের বিচরণ এতো বেশি বেড়েছে যে, একে প্রায় নেশাগ্রস্ত অবস্থা বলা যায়। প্রয়োজনে তে আছেই, অপ্রয়োজনে অনেকে সারাদিন শুধু স্ক্রলিং করে যাচ্ছেন। বৃথা কাজে সময় নষ্ট হওয়া ছাড়া যেখান থেকে ফলদায়ক কিছুই আসছে না। উল্টো নেশার প্রতিক্রিয়া হিসেবে ক্ষতিকর অনেক কিছুই ঘটছে। কিন্তু এই যে সারাটা সময় স্ক্রলিং করা হচ্ছে, এটা কেনো? এর পেছনে মনোস্তত্ত্ব কি? বা মস্তিষ্কের কোন দিকটি কিভাবে কাজ করছে?
মজার একটি তত্ত্ব আছে। ভিডিওটি খেয়াল করুন, স্কিনার বক্স, এই বাকশটি ব্যবহার করা হয় মনস্তাত্ত্বিক আচরণ পর্যবেক্ষণে। বাকশের ভেতরে একটি ইঁদুর একটি বাটনে চাপ দিচ্ছে, কোনো কোনো সময় এই চাপে পাশের নল দিয়ে খাবার আসছে ভেতরে।
তখন সে খাবারের লোভে বারবার সেই বাটনে চাপ দিতে থাকে। তবে প্রত্যেকবার খাবার আসে না। কিন্তু ইদুরের মাথায় একটা জিনিসই ঘুরতে থাকে যে এই বাটন চাপ দিলে খাবার আসে। তাই খাবার না আসা পর্যন্ত সে বাটন চাপতেই থাকে চাপতেই থাকে চাপতেই থাকে।
আপনি কোনো পোস্টে প্রতিক্রিয়া দেখানো, আপনি আসলে তাদেরকে তথ্য দিলেন যে এই বিষয়ে আপনার ইন্টারেস্ট আছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে তারা তখন আপনাকে এই জাতীয় পোস্ট এবং বিজ্ঞাপনগুলোই দেখাতে থাকে।
আর এই ডিজাইনটিই আমাদের স্ক্রলিংয়ের আচরণকে প্রভাবিত করে। এবং আপনি আরও বেশি সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যয় করতে থাকেন। বলা যায় ব্যবহারকারীরা আরও সময় ব্যয় করুক তাদের অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে, এটাই তাদের প্রধান লক্ষ্য।
মজার ব্যাপার হলো এই প্রক্রিয়ায় আরকটি ঘটনা ঘটে। সেটা হলো আমাদের ডোপামিন হরমোনের নিঃসরণ। ওই যে সেই হরমনটা, যেটা আমাদের আনন্দ, হাসি, খুশির কারণ। কোনো কিছুতে আমরা আনন্দ পেলে এই হরমন নিসৃত হয়।
শুধু তাই নয়, আনন্দদায়ক, বা মনভালো হবার মত কোনো কিছু পাওয়ার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা থাকলেও এই হরমন নিসৃত হতে থাকে। তাই ঘুম থেকে উঠেই আপনি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঢু মারেন, দেখি তো কি কি জমা হলো! অনেক অনেক কমেন্ট লাইক লাভ শেয়ার দেখে মনে লাড্ডু ফুটতে থাকে।
এর সাথে আবার আমাদের মাংসপেশির নড়াচড়ার সংশ্লিষ্টতা আছে। যখন আমরা ফোনে শুধু বৃদ্ধা আঙ্গুল নাড়িয়ে ডানে বায়ে নাড়চাড়া করে ডোপামিনের খোরাক পেয়ে যাচ্ছি, তখন মস্তিষ্ক এই বার্তাই পায় যে নির্দিষ্টধরনে আঙুলের নড়াচড়ায় ডোপামিন নিসৃত হয়।
ফোন বাদ দেয়ার ৫ থেকে ৭ দিন পর, আপনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবেন। যেখানে নিজের শরীরের দিকে নজর দেবার সুযোগ হবে, পাশের মানুষটির সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের সাথের সাথে সামাজিক সম্পর্কগুলোর দিকেও দৃষ্টি যাবে।
ফলে, টানা দুই সপ্তাহ এভাবে স্ক্রলিং বন্ধ রাখলে, ফোনের জন্য মোহমায়া পিছুটান কেটে যাবে। ওটা শুধু এখন আপনার প্রয়োজনই মেটাবে, বাড়তি সময় নষ্ট করবার হাতিয়ার হবে না, গিলে খাবে না আপনাকে। ফলে আপনার মস্তিষ্কই নয় শরীরও দারুণ ইতিবাচকভাবে সাড়া দেবে।
+ There are no comments
Add yours