৫ শতাধিক বাংলাদেশিকে বানানো হয়েছে ‘সাইবার চাকর’

Estimated read time 1 min read
Ad1

উচ্চ বেতনে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কম্বোডিয়াতে নিয়োগের কথা বলে  দেশটিতে নিয়ে গিয়ে পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশি চাকরি প্রত্যাশীর সঙ্গে প্রতারণা করেছে একটি চক্র।

বেশ ক’জন ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে চক্রের মূলহোতাসহ তিন সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর এ তথ্য জানিয়েছে র‌্যাব-৩।

র‌্যাব-৩-এর স্টাফ অফিসার (মিডিয়া) সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ফারজানা হক বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩ এর একটি দল মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর পল্টন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে কম্বোডিয়ায় মানবপাচার চক্রের মূলহোতা নাজমুল ইসলাম (৩০), নূর ইসলাম সাজ্জাদ (২৫), এবং মো. সিরাজুল ইসলাম পঞ্চায়েতকে (৫৭) গ্রেপ্তার করে।

এ সময় তাদের কাছ থেকে পাসপোর্ট ৩টি, মোবাইল ফোন ৪টি, রেজিষ্টার ১টি, মানবপাচার সংক্রান্ত বিভিন্ন কাগজপত্র ২৫০ পাতা এবং নগদ ৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তাররা সংঘবদ্ধ মানবপাচার চক্রের সদস্য। চক্রের মূলহোতা কম্বোডিয়া প্রবাসী নাজমুল ইসলাম। তিনি বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দালালের মাধ্যমে উচ্চ বেতনে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরি দেয়ার নাম করে ভিকটিম এবং তাদের অভিভাবকদের প্রলুব্ধ করেন। কম্বোডিয়ায় প্রেরণের খরচ বাবদ প্রাথমিকভাবে তারা ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা নেয়।

আগ্রহী বেকার তরুণ-তরুণীদের প্রথমে কম্পিউটার বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়। উত্তীর্ণ হলে কম্বোডিয়া প্রবাসী আলীম ও শরিফুলের সহায়তায় তাদের জন্য কম্বোডিয়ান ট্যুরিস্ট ই-ভিসা করা হয়। তারপর তাদেরকে বিমানযোগে কম্বোডিয়ায় পাঠানো হয়।

কম্বোডিয়ায় যাওয়ার পর নাজমুল তার সহযোগী কম্বোডিয়া প্রবাসী রাকিব ও রফিকের সহায়তায় প্রথমে ভিকটিমদের প্রবাসী আরিফের হোটেলে নিয়ে যায় এবং তাদের কাছ থেকে পাসপোর্ট ছিনিয়ে নেওয়া হয়।

হোটেলে কিছুদিন অবস্থান করার পর তাদেরকে কম্পিউটার বিষয়ে প্রশিক্ষণের জন্য কম্বোডিয়া প্রবাসী কামাল ওরফে লায়ন কামাল ও আতিকের সহায়তায় একটি বিদেশি ট্রেনিং সংস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বিদেশি প্রশিক্ষকরা ভিকটিমদের ছদ্মনামে অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করে কিভাবে প্রতারণা করা যায়, ভুয়া ক্লোনড ওয়েবসাইট ব্যবহার করে ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা আত্মসাৎ করার কৌশল, ভুয়া নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে বা চ্যাটিং করে স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ার নাম করে কৌশলে ডিপোজিট হাতিয়ে নেওয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভয়েস কল ও ভিডিও কল রেকর্ডিং করে পরবর্তীতে ব্লাকমেইল করে অর্থ আত্মসাৎ করার কৌশল শেখানো হয়।

ট্রেনিং শেষে ভিকটিমদের একটি বিদেশি কোম্পানির কাছে দুই হাজার থেকে তিন হাজার ডলারের বিনিময়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়। তারপর ভিকটিমদের একটি সুরক্ষিত ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। ভবনে যাওয়ার পর তাদের দেহ তল্লাশী করে সকল প্রকার ইলেকট্রনিক ডিভাইস তাদের কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হয়।

তারপর তাদের একটি কম্পিউটার ল্যাবে নিয়ে যাওয়া হয়। যেখানে একটি বৃহৎ কক্ষে ৩০০ থেকে ৪০০ ডেস্কটপ কম্পিউটার সাজানো থাকে। মানবপাচারকারীদের ভাষায় ওই ল্যাবকে ক্যাসিনো বা প্ল্যাটফর্ম বলা হয়।

কম্পিউটার ব্যবহার করে ভিকটিমদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুরুষদের সাথে ছদ্মনামীয় নারী অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে এবং নারীদের সাথে ছদ্মনামীয় পুরুষ অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য বাধ্য করা হয়। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার পর ভিডিও কল দিয়ে আপত্তিকর অঙ্গভঙ্গি ও কথাবার্তা রেকর্ড করা হয়। তারপর সেসব রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়।

আবার কখনও উপহার পাঠানো, দেখা করার জন্য যাতায়াত খরচের প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করে আসছিল চক্রটি। এসব কাজে টিকটক, বিটকয়েন, ফেক ওয়েবসাইটের সহায়তা নেওয়া হয়।

নিজস্ব প্রতিবেদক https://khoborbangla24.net

বিশ্বজুড়ে দেশের খবর

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours