শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিচালিত অভিযানে ছয়টি অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বরিশাল সমন্বিত জেলা কার্যালয়।অভিযানের সার্বিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুদকের আভিযান পরিচালনাকারী দলের এক কর্মকর্তার বিচার চেয়ে স্মারকলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন বরিশাল শাখা। বিশ্লেষকরা বলছেন, চিকিৎসকরা মূল ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে আন্দোলন করছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে জানানো হয়েছে, ভুক্তভোগীর অভিযোগ ছিল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আনোয়ার হোসেন বাবলু সরকারি দায়িত্ব পালন করেন না। তিনি সরকারি দায়িত্ব পালনের সময়ও ব্যক্তিগত চেম্বারে ব্যস্ত থাকেন। মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টায় কলেজের মেডিসিন ও নিউরোলজি বিভাগের তার কক্ষ, ক্লাস রুম কিংবা হাসপাতালের ওয়ার্ডে কোথাও পাওয়া যায়নি। সম্পূর্ণরূপে তার কক্ষটি তালাবদ্ধ ছিল। মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মনিরুজ্জামান শাহীনও ছিলেন অনুপস্থিত।
দুদকের টিম তাকে মোবাইলে কল করে অফিসে আসার জন্য বলে। এ সময় অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান শাহীন অন্যান্য ডাক্তারদের হাজিরা সংক্রান্ত তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান। অন্যদিকে ডা. আনোয়ার হোসেন বাবলুকে সকাল ১০টায়ও পায়নি দুদকের টিম। এ সংক্রান্ত কোনো জবাব বা তথ্যও দিতে পারেননি কলেজ অধ্যক্ষ। আর সরকার নির্ধারিত অফিস সময়ের কমপক্ষে দেড় ঘণ্টা পর দুদক টিমের সামনেই ১৫ জন চিকিৎসক বায়োমেট্রিক হাজিরা দেন অধ্যক্ষের কক্ষে। দুদক টিমের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে- হাসপাতালের মেডিসিন, আর্থোপেডিক্স বিভাগে দু-একজন ইন্টার্ন ডাক্তার ব্যতীত দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র কোনো ডাক্তার উপস্থিতি ছিলেন না।
জানা গেছে, ডা. আনোয়ার হোসেন বাবলু ও ডা. অমিতাভ সরকারের নাম উল্লেখসহ হাসপাতালের সিনিয়র সকল চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন ভুক্তভোগী। প্রকৃতপক্ষে হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎসকরা ব্যক্তিগত চেম্বার নিয়ে ব্যস্ত থাকায় চিকিৎসাসেবা দেন শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা।
দুদকের বরিশাল সমন্বিত জেলা কার্যালয় জানিয়েছে, মূলত দুদকের হটলাইনে (১০৬) পাওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে এবং দুদক প্রধান কার্যালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে সহকারী পরিচালক রাজ কুমার সাহার নেতৃত্বে ওইদিন অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানকালে সেবাপ্রত্যাশী রোগী ও ওয়ার্ডে চিকিৎসারত রোগীর স্বজনরাও হাসপাতালে ডাক্তার না থাকা এবং দুর্বল ব্যবস্থাপনার কথা জানান। সরকারি দায়িত্ব পালনের চেয়ে চিকিৎসদের ব্যক্তিগত চেম্বারে সময় অতিবাহিত করা, ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিকে হাসপাতালের রোগী পাঠানো, কমিশন বাণিজ্যসহ আরও বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে এখানকার চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে।
এদিকে অভিযান পরিচালনাকারী টিমের বিচার চেয়ে আন্দোলনের দ্বিতীয় দিনে বিভাগীয় কমিশনার আমিন উল আহসানের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)।
বিএমএ বরিশালের সভাপতি ডা. ইসতিয়াক হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক ডা. মনিরুজ্জামান শাহীনের নেতৃত্বে দুপুরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, আভিযানিক টিম মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাসুম আহম্মেদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। তারা কলেজ অধ্যক্ষের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন এবং মামলার ভয় দেখান। আভিযানিক টিম সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ না দাখিল করে বরং ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করে এবং সাংবাদিক ডেকে এনে সংবাদ প্রচার করান।
দুদক টিমের এমন আচরণে চিকিৎসক সমাজ ক্ষুব্ধ। চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কোনো হয়রানিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করবে। বিএমএ আভিযানিক টিমের প্রধান দুদকের সহকারী পরিচালক রাজ কুমার সাহার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণির দাবি জানান।
+ There are no comments
Add yours