বাংলাদেশকে বিনামূল্যে ট্রানজিট দেবে ভারত

Estimated read time 1 min read
Ad1

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার জন্য তাদের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং বাংলাদেশকে তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানির জন্য ভারত বিনামূল্যে ট্রানজিটের প্রস্তাব দিয়েছে।

বুধবার ভারতে জারি করা এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারত তার ভূখণ্ডের মাধ্যমে বিশেষ স্থল শুল্ক স্টেশন বা বিমানবন্দর বা সমুদ্রবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানির জন্য বিনামূল্যে ট্রানজিট সুবিধার প্রস্তাব দিয়েছে।

এ বিষয়ে ভারতীয় পক্ষ তৃতীয় দেশে ট্রান্সশিপমেন্টের জন্য বন্দর অবকাঠামো ব্যবহার করার জন্য বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।

ভারত নেপাল ও ভুটানে পণ্য রপ্তানির জন্য বাংলাদেশকে বিনামূল্যে ট্রানজিট দিচ্ছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশ সদ্য উদ্বোধন হওয়া চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রুটের মাধ্যমে ভুটানের সঙ্গে রেল যোগাযোগের অনুরোধ করেছে এবং ভারত তার অনুরোধের বিষয়টি কার্যকারিতা ও সম্ভাব্যতার ভিত্তিতে বিবেচনা করতে সম্মত হয়েছে।

যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আন্তঃসীমান্ত রেল সংযোগগুলো কার্যকর করার জন্য ভারত বাংলাদেশকে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি ক্রসিংয়ে বন্দর বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছে।

দুই নেতা বিবিআইএন মোটর ভেহিকেল চুক্তি দ্রুত কার্যকর করার মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক ও উপ-আঞ্চলিক সংযোগ উন্নত করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করতে সম্মত হয়েছেন।

ভারত পশ্চিমবঙ্গের হিলি থেকে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে মেঘালয়ের মহেন্দ্রগঞ্জ পর্যন্ত একটি মহাসড়কসহ নতুন উপ-আঞ্চলিক সংযোগ প্রকল্প শুরু করার জন্য সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছে এবং এ বিষয়ে একটি বিশদ প্রকল্প প্রতিবেদন তৈরির প্রস্তাব করেছে।

একই চেতনায় ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড ত্রিপক্ষীয় হাইওয়ে প্রকল্পের চলমান উদ্যোগে অংশীদার হওয়ার জন্য বাংলাদেশ তার আগ্রহের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে।

বাংলাদেশ ও ভারতের দুই প্রধানমন্ত্রী একটি যৌথ সম্ভাব্যতা সমীক্ষার সাম্প্রতিক চূড়ান্তকরণকে স্বাগত জানিয়েছেন। এ সমীক্ষায় সুপারিশ করা হয়েছে যে, ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর হবে।

তারা উভয় দেশের বাণিজ্য কর্মকর্তাদের ২০২২ সালের মধ্যে আলোচনা শুরু করতে এবং এলডিসি মর্যাদা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের জন্য যথাসময়ে এগুলো দ্রুত সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সব ধরনের সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে তাদের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

তারা এ অঞ্চলে এবং এর বাইরে সন্ত্রাসবাদ, সহিংস চরমপন্থা ও মৌলবাদের বিস্তার রোধে তাদের সহযোগিতা আরও জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

যৌথ বিবৃতিতে সীমান্তে প্রাণহানির সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে বলে সন্তোষ প্রকাশ করে উভয় পক্ষ এ সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করতে সম্মত হয়েছে।

উভয় পক্ষ অস্ত্র, মাদকদ্রব্য ও জাল মুদ্রার চোরাচালানের বিরুদ্ধে এবং বিশেষ করে নারী ও শিশুদের পাচার রোধে দুই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ক্রমবর্ধমান প্রচেষ্টা প্রশংসার সঙ্গে উল্লেখ করেছে।

মঙ্গলবার উভয় প্রধানমন্ত্রী একান্ত বৈঠক করার পর প্রতিনিধিদল পর্যায়ের আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

দুই নেতা গভীর ঐতিহাসিক ও ভ্রাতৃত্বপূর্ণ বন্ধন এবং গণতন্ত্র ও বহুত্ববাদের অভিন্ন মূল্যবোধের ভিত্তিতে দ্বিপাক্ষিক চমৎকার সম্পর্ক বিরাজ করায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। এতে সার্বভৌমত্ব, সমতা, আস্থা ও সমঝোতার ব্যাপক ভিত্তিক দ্বিপাক্ষিক অংশীদারিত্ব বিশেষ করে একটি কৌশলগত অংশীদারিত্ব প্রতিফলিত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির আমন্ত্রণে ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর ভারতে রাষ্ট্রীয় সফরে রয়েছেন। সফরকালে, তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জগদীপ ধনখারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়ন মন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডি তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

শেখ হাসিনার কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ও গুরুতর আহত ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর ২০০ জন সদস্যের জন্য ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্র বৃত্তি’ চালু করা।

তিনি আজ যৌথভাবে ভারতীয় ও বাংলাদেশ ব্যবসায়ী সম্প্রদায় আয়োজিত একটি ব্যবসায়িক অনুষ্ঠানেও বক্তৃতা করেন।

যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী উভয়েই রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা, প্রতিরক্ষা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্য ও সংযোগ, পানিসম্পদ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, উন্নয়ন সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক ও জনগণের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগসহ দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার পুরো বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন।

এতে আরও বলা হয়েছে, তারা পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন, সাইবার নিরাপত্তা, আইসিটি, মহাকাশ প্রযুক্তি, পরিবেশ সম্মত জ্বালানি এবং সুনীল অর্থনীতির মতো সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্রগুলিতে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছেন।

তারা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। বিশ্বব্যাপী কোভিড ১৯ মহামারির প্রভাব এবং সরবরাহ শৃঙ্খলে বাধার কথা মাথায় রেখে নেতারা এ অঞ্চলের সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য বন্ধুত্ব ও অংশীদারিত্বের চেতনায় বৃহত্তর সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি দ্বিপাক্ষিক এবং উপ-আঞ্চলিক রেল, সড়ক এবং অন্যান্য সংযোগ উদ্যোগ বাস্তবায়নের গুরুত্বের ওপর জোর দেন।

উভয় পক্ষই চলমান দ্বিপাক্ষিক উদ্যোগগুলোকে স্বাগত জানিয়েছে, যেমন টঙ্গী-আখাউড়া লাইনের ডুয়েল-গেজে রূপান্তর, রেলওয়ে রোলিং স্টক সরবরাহ, বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি, বাংলাদেশ রেলওয়ের উন্নত পরিষেবার জন্য আইটি সমাধান বিনিময় করা ইত্যাদি।

দুই দেশ দ্বিপাক্ষিক উন্নয়ন সহযোগিতার অধীনে বিভিন্ন অর্থায়ন ব্যবস্থার মাধ্যমে এই প্রকল্পগুলির অর্থায়ন অন্বেষণ করতে সম্মত হয়েছে।

বাংলাদেশ ভারত থেকে চাল, গম, চিনি, পেঁয়াজ, আদা এবং রসুনের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের অনুমানযোগ্য সরবরাহের জন্য ভারতীয় পক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছে।

উভয় দেশ বিদ্যুৎ খাতে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করতে সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের মাধ্যমে নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির অনুরোধ জানানো হয়। ভারতীয় পক্ষ জানিয়েছে যে, এর জন্য নির্দেশিকা ইতোমধ্যেই ভারতে বিবেচনাধীন রয়েছে।

দুই নেতা ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন সংক্রান্ত অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন, যা বাংলাদেশের জ্বালানি চাহিদা পূরণে অবদান রাখবে। তারা দ্রুত প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম পণ্যের জন্য তার অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে সহায়তা করার জন্য ভারতকেও অনুরোধ করেছে এবং ভারত উভয় পক্ষের অনুমোদিত সংস্থাগুলোর মধ্যে আলোচনা করতে সম্মত হয়েছে।

উভয় নেতা উন্নয়ন অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে দুই পক্ষের মধ্যে জোরদার সহযোগিতার পরিপ্রেক্ষিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সহজতর করার গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করে, তারা স্থল শুল্ক স্টেশন/স্থল বন্দরগুলিতে অবকাঠামো এবং স্থাপনাসমূহের উন্নয়ন এবং বিশেষ স্থল শুল্ক স্টেশনগুলোতে বন্দর বিধিনিষেধ এবং অন্যান্য অ-শুল্ক বাধা অপসারণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

দুই নেতা দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সম্পর্ক নিবিড়করণে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং প্রতিরক্ষার জন্য ক্রেডিট লাইনের অধীনে প্রকল্পগুলো দ্রুত চূড়ান্ত করার জন্য সম্মত হন, যা উভয় দেশের জন্য উপকারী হবে।

ভ্যাকসিন মৈত্রী এবং অক্সিজেন এক্সপ্রেস ট্রেনের মাধ্যমে বাংলাদেশে সহযোগিতা পাঠানো এবং ভারতকে বাংলাদেশের ওষুধ উপহার পাঠানোসহ কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতাকে স্বাগত জানিয়ে দুই নেতা উভয় দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

উভয় নেতাই বঙ্গবন্ধুর ওপর যৌথভাবে নির্মিত চলচ্চিত্র (মুজিব : দ্য মেকিং অব এ নেশন)—এর উদ্বোধনের অপেক্ষায় ছিলেন।

তারা পশ্চিমবঙ্গের নদীয়ায় বাংলাদেশের মুজিবনগর থেকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত ঐতিহাসিক সড়ক ‘স্বাধীনতা সড়ক’ চালু করা এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর একটি তথ্যচিত্র নির্মাণসহ অন্যান্য উদ্যোগের বাস্তবায়নেও কাজ করতে সম্মত হয়েছেন।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরল ভিডিও ফুটেজের যৌথ সংকলনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

উভয় পক্ষই সহযোগিতার নতুন ও উদীয়মান ক্ষেত্রগুলির সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর গুরুত্ব স্বীকার করেছে এবং উভয় পক্ষের কর্তৃপক্ষকে মহাকাশের শান্তিপূর্ণ ব্যবহার, পরিবেশ সম্মত জ্বালানি, পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার এবং অর্থ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে প্রযুক্তিভিত্তিক পরিষেবাগুলোর ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে।

আঞ্চলিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে, ভারত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হওয়া দশ লাখেরও বেশি মানুষকে আশ্রয় ও মানবিক সহায়তা প্রদানে বাংলাদেশের উদারতার প্রশংসা করেছে এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত লোকদের তাদের স্বদেশে নিরাপদ, টেকসই এবং দ্রুত প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার প্রচেষ্টায় উভয় দেশের একমাত্র প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয়কেই সহায়তার জন্য তার অব্যাহত প্রতিশ্রুতির ওপর জোর দিয়েছে।

দুই পক্ষ বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠনের মাধ্যমে আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদারের জন্য কাজ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে। ভারতীয় পক্ষ বিমসটেক সচিবালয় পরিচালনায় এবং এর অবকাঠামো উন্নয়নে বাংলাদেশের অবদানের প্রশংসা করেছে। ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের (আইওআরএ) চেয়ার হিসেবে ভারত বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদক https://khoborbangla24.net

বিশ্বজুড়ে দেশের খবর

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours