চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রধান ফটকে তালা লাগানো যেন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। ট্রেনের শিডিউল বাড়ানো, সিএনজি চালক কর্তৃক শিক্ষার্থীকে মারধর, পূর্ণাঙ্গ কমিটি কিংবা ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলেও তালা লাগে প্রধান ফটকে।
সঙ্গে রয়েছে শাটল ট্রেন বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা। এতে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা, ব্যাহত হচ্ছে প্রশাসনিক কার্যক্রম।
এ বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি দুপুর দেড়টায় শাটল ট্রেন সংকট এবং নিয়মিত শিডিউলে ট্রেন চালুর দাবিতে প্রধান ফটকে তালা দেন শিক্ষার্থীরা।
৫ মার্চ চবির ৫৩৭তম সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করে শাখা ছাত্রলীগের উপ-গ্রুপ ভার্সিটি এক্সপ্রেস (ভিএক্স)।
২২ মার্চ সিএনজি চালকের সঙ্গে ভাড়া বিতর্কে মারধরের ঘটনার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে তালা ও টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
১১ এপ্রিল ভাড়া বিতর্কে তিন শিক্ষার্থীকে স্থানীয় সিএনজি চালকরা মারধর করেন। এই তিন শিক্ষার্থী শাখা ছাত্রলীগের বিজয় এবং সিএফসি গ্রুপের কর্মী হিসেবে পরিচিত। ঘটনার প্রতিবাদে প্রধান ফটকে তালা দিয়ে অবরোধ করে ছাত্রলীগের অনুসারীরা।
১৪ এপ্রিল বিকেল ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর রেলক্রসিং এলাকায় সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী আরাফাত হোসেনের সঙ্গে সিএনজি চালকের কথা কাটাকাটির প্রতিবাদে প্রধান ফটকে তালা দেয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের অনুসারীরা।
২৮ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী কফিল উদ্দিনের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় ৫-৬ জন। হামলার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে প্রধান ফটকে তালা দেয় কফিলের সহপাঠী ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
১ আগস্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটিকে অবৈধ উল্লেখ করে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধের ডাক দেয় শাখা ছাত্রলীগের বিজয় গ্রুপের একাংশ। পরে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরীর আশ্বাসে অবরোধ স্থগিত করে আন্দোলনকারীরা।
২১ আগস্ট সিএনজি চালক কর্তৃক সুমিত মণ্ডল নামে এক ছাত্রলীগ কর্মীকে মারধরের জের ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে তালা দেয় ছাত্রলীগের একাংশ।
১১ সেপ্টেম্বর শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি বর্ধিত করে পদবঞ্চিদের মূল্যায়নের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করে শাখা ছাত্রলীগের একাংশ।
সর্বশেষ গতকাল সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করে অবরোধের ডাক দেয় শাখা ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীদের একাংশ। প্রধান ফটকে তালা লাগানো ছাড়াও ষোলশহর স্টেশনে শাটল ট্রেন আটকে দেয় আন্দোলনকারীরা।
এদিকে ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিতে আসা শিক্ষার্থীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো বাস ছেড়ে না যাওয়ায় আসতে পারেননি শিক্ষকরাও।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আজ ১০টির বেশি বিভাগের ইয়ার ফাইনাল এবং সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা ছিল। তবে অবরোধের জন্য বেশির ভাগ বিভাগ তাৎক্ষণিক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দেয়।
প্রধান ফটকে তালা দেওয়ার ঘটনা শুধু গতকালই নয়, এর আগেও একাধিকবার তালা লাগানোর ঘটনা ঘটেছে। চলতি বছরের ৯ মাসে অন্তত ১০ বারের বেশি তালা লাগানো হয়েছে চবির প্রধান ফটকে।
+ There are no comments
Add yours