টঙ্গীর গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে ভয়ংকর প্রতারণা

Estimated read time 1 min read
Ad1

মাহবুবুর রহমান জিলানী, টঙ্গী, গাজীপুর:

টঙ্গী গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের কোভিড-১৯ টেষ্ট প্রতারণা রিজেন্ট হাসপাতালের ঘটনাকেও হার মানাবে। রিজেন্টের তবু সরকারি অনুমোদন ছিলো। একদিকে করোনা হাসপাতাল হিসেবে টঙ্গী গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের সরকারি কোন অনুমোদন নেই। অপরদিকে র‌্যাপিড টেষ্ট কিটে করোনা শনাক্তকরণ পদ্ধতিও সরকারিভাবে নিষিদ্ধ। অনুমোদনহীন তেমন র‌্যাপিড কিট দিয়ে টেষ্ট করা হচ্ছে।

রিজেন্ট বা জেকেজি সরকারি অনুমোদন নিয়ে ভুয়া পজিটিভ- নেগেটিভ রির্পোট দিয়েছে। আর টঙ্গী গণস্বাস্থ্য কোন প্রকার সরকারি অনুমোদন ছাড়াই সাড়ে ৩ হাজার মানুষের কোভিড-১৯ টেষ্ট রির্পোট দিয়েছে। সরকার ইতমধ্যেই রিজেন্ট এবং জেকেজি ছাড়াও আরও ৫ টি বেসরকারি করোনা হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করেছে। সেখানে ওই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিদিনই শতাধিক রোগির ভুয়া টেষ্ট রির্পোট দিচ্ছে । তারা মানুষকে ভয়ংকর বিপদে ফেলে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সহযোগীতা করেছে একটি অসাধু চক্র। শুধু তাই না সেখানে অনুমোদন ছাড়াই খোলা হয়েছে করোনা আইসোলেশন সেন্টার।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার করোনা নিয়ন্ত্রণে যখনই সফলতার দারপ্রান্তে। এর মাঝেই রিজেন্ট হাসপাতাল ও জেকেজি কান্ডে দেশের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হলো। একইভাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উপসর্গ নিয়ে টঙ্গী গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসা মানুষের সাথে করোনা পরীক্ষার নামে ভয়ংকর প্রতারণা করা হচ্ছে। নেগেটিভ রিপোর্ট পাওয়া ওইসব হাজার হাজার মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে।

টঙ্গী গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে এই ঘটনা ঘটছে। জানতে পেরে ১৩ জুলাই যখন পিবিএ থেকে অনুসন্ধানে যাওয়া হয় তখনো দুইজন কোভিড আক্রান্ত রোগি সেখানে ভর্তি ছিল।

টঙ্গী গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে ‘কোভিড-১৯ হাসপাতাল’ বা কোভিড টেষ্টের জন্য কোন অনুমোদন দেয়া হয়নি বলে জানান গাজীপুরের সিভিল সার্জন মোঃ খায়রুজ্জামান।

মুঠোফোনে জানতে চাওয়া হলে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র টঙ্গী শাখার ব্যবস্থাপক মোঃ নুরুল ইসলাম জানান, টঙ্গী সচেতন নাগরিক পরিষদের সভাপতি মোঃ সেলিম খান তাদের এখানে কোভিড-১৯ টেষ্ট চালু করেছেন। তিনি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ডাঃ মোঃ নাজিম উদ্দিনের মেয়ে জামাই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেলিম খান টঙ্গী সচেতন নাগরিক পরিষদ নাম সর্বস্ব কমিটি করে এই করোনা মহামারিতে মানুষের সাথে প্রতারণা করেছেন। তিনি সিটি মেয়রের কাছ থেকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চায়না র‌্যাপিড কিট নিয়েছেন। অথচ প্রতিটি টেষ্টে রোগির কাছ থেকে ১ হাজার টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। শুধু তাই না অনুমোদনহীন করোনা আইসোলেশন সেন্টার খুলে বসেছেন।

টঙ্গী শিল্প এলাকার হোন্ডা রোডে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের টঙ্গী শাখা। আজ ১৩ জুলাই বেলা ১২ টার দিকে অনুসন্ধানে জানা যায়।
কেন্দ্রের মূল ফটকে করোনা টেষ্ট ও সেবার নানা রকম ব্যানার ফেষ্টুন। মূল ভবনের দরজার সামনে সিটি কর্পোরেশনের করোনা সেম্পল সংগ্রহ বুথ স্থাপন করা। হাসপাতাল বারান্দার ডান দিকে সুমাইয়া ও বিথি নামে দুইজন সেবিকা রেজিষ্টার খাতা নিয়ে বসা। তারা শুরুতেই রোগির ওজন, তাপমাত্রা ও প্রেসার লিখে নেন। রোগির লক্ষণগুলোও তারাই লিপিবদ্ধ রাখেন। তাদের সামনে রাখা রোগি ফাইলে দেখালেন, করোনা আইসোলেশণ সেন্টারে ৩ দিন যাবৎ ভর্তি রয়েছেন টঙ্গী কলেজ গেট এলাকার আজিমুন নাহার ও শাহজাহান দেওয়ান দম্পতি।

বারান্দারই পূর্বপাশে একাউন্টেন্ট রওশন আলী ইমন রিসিপ্ট কেটে করোনা টেস্ট ফি ৭’শ ও চিকিৎসক ফি ৩’শ নিচ্ছেন।

সেখানে তখনো ৩জন লোক করোনা টেষ্টের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এদের মধ্যে আশুলিয়ার মোঃ সাইফুল, উত্তরার মোঃ জাকির ও ফকিরাপুল থেকে এসেছেন মোঃ মঞ্জু।

কথা হয় করোনা টেষ্ট করতে অপেক্ষমান মোঃ মঞ্জুর সাথে। তিনি জানান, কিছুদিন পূর্বে সিঙ্গাপুর থেকে ছুটিতে এসেছেন। ফের যেতে হলে করোনা নেগেটিভ সনদ প্রয়োজন। যে কারনে তিনি করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট নিয়ে রাখলেন। এটা যে সরকার অনুমোদিত না সেটা তিনি জানতেন না বলেও জানালেন।
চিকিৎসক ডাঃ মোঃ তাওহিদ করোনা টেষ্ট ও চিকিৎসার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে ভর্তি দুইজন রোগীর সাথে সাক্ষাত করতে বাধা দেন।
কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক নুরুল ইসলামও সাড়ে ৩ হাজার করোনা টেষ্টের কথা স্বীকার করেন। করোনা হাসপাতাল হিসেবে তারা সরকারি অনুমোদন পাননি সে কথাও স্বীকার করেন। তিনি মন্তব্য করেন, ‘সরকার লিষ্টেড যারা তারাতো পুকুর চুরি করছে।’ তারা কিভাবে সরকারি অনুমোদন ছাড়া কোভিড-১৯ টেষ্ট করছেন ? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধ করতে অনুমোদন দিছে ক্যারা, আমরা এইডা করি সকল প্রশাসন আমাদের পক্ষে কথা বলতেছে, কাজ করতেছি, তাহলে উচিত ছিলো! গর্ভনমেন্ট আমাদের ডাক দিয়া বলবো, তারা টেষ্ট করুক। তাতো দিলো না!’

গণমাধ্যমে প্রকাশ চীন থেকে আমদানি করা করোনার এসব র‌্যাপিড টেষ্ট কিট স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ঔষধ প্রশাসন অনুমোদন করেনি। সেলিম খান সেবার নামে বিনামূল্যে এসব কিট সংগ্রহ করেছেন। অথচ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

টঙ্গী সচেতন নাগরিক পরিষদের সভাপতি ও কৃষক লীগ টঙ্গী পূর্ব থানার সা. সম্পাদক মোঃ সেলিম খান মুঠোফোনে করোনা টেষ্টের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমরা মানুষের সেবার জন্য এটা করেছি। চিকিৎসক ও ল্যাব খরচ বাবদ টাকা নেয়া হয়েছে।

জেলা সিভিল সার্জন মোঃ খায়রুজ্জামান আরও বলেন, তিনি ইতিপূর্বে টঙ্গী গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কোভিড-১৯ টেষ্ট বন্ধ করেছেন। তারপরও প্রভাব খাটিয়ে তারা এটা চালিয়ে যাচ্ছে।

নিজস্ব প্রতিবেদক https://khoborbangla24.net

বিশ্বজুড়ে দেশের খবর

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours