বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৩০তম কেন্দ্রীয় সম্মেলন আগামী ৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। শুক্রবার (৪ নভেম্বর) বিকেলে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বিষয়টি খবর বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
তবে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নিয়ে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগে বেশ অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে সংগঠনটির সভাপতি নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে ওঠা নানা অভিযোগ নিয়ে দলের একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা ক্ষুব্ধ হয়ে আছেন।
অন্যদিকে জয়-লেখকের বিপরীতে ক্ষুব্ধ নেতারা প্রকাশ্যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করায়ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকে ক্ষুব্ধ।
ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির অনেক নেতা অভিযোগ তুলেছেন, কমিটি বাণিজ্য, ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন না করা ও দায়িত্ব পালনে স্বেচ্ছাচারিতা করছেন জয়-লেখক। অভিযোগ আছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের তো দূরের কথা ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদেরও গুরুত্ব দেন না জয়-লেখক।
১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর ছাত্রলীগের ২৯টি কমিটি হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৭০ সালের পর হয়েছে ১৮টি। বর্তমানের ৩০১ সদস্যের কমিটিতে সহসভাপতিই রয়েছেন ৬১ জন।
এই কমিটিতে যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ১১ জন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক ১১ জন রয়েছেন। এর বাইরে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত চিঠি পেয়ে অসংখ্যজন ‘কেন্দ্রীয় নেতা’ পরিচয় দিচ্ছেন।
আনুষ্ঠানিকভাবে বর্ধিত কমিটিতে পদপ্রাপ্তদের কোনো তালিকা ঘোষণা করেনি ছাত্রলীগ। ফলে এদের প্রকৃত সংখ্যা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিগত তিনটি কমিটিতে পদ ঘোষণার এমন ধারা কমবেশি অব্যাহত ছিল।
এদিকে আগামী ৪ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পলোগ্রাউন্ডে জনসভা করবেন। এই জনসভাকে ঘিরে চট্টগ্রামের ছাত্রলীগ কর্মীদের মনে নানা আশা জেগেছে। সকলের ইচ্ছা বৃহত্তর চট্টগ্রাম থেকে কেউ আসবেন ছাত্রলীগের নেতৃত্বে।
বিগত দশক থেকে ছাত্রলীগের কোন কমিটিতেই বৃহত্তর চট্টগ্রাম থেকে কেউ মূল নেতৃত্বে আসেনি। দেশের সর্ববৃহৎ বিভাগ হয়েও চট্টগ্রাম থেকে মূল নেতৃত্বে দেওয়া হয়নি কাউকে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মোঃ এমরান উদ্দিন বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ০৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম আসবেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলন ০৩ ডিসেম্বর। আমরা চাটগাঁইয়া তৃণমূল ছাত্রসমাজ আশাবাদী বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একমাত্র অভিভাবক, দেশরত্ন শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের ছাত্রসমাজের জন্য উপহার হিসেবে চাটগাঁইয়া ছেলে জাতীয় নেতৃত্বে আনবেন।’
ছাত্রলীগের দপ্তর সেল, বিভিন্ন কমিটিতে দায়িত্ব পালনকারী অন্তত ৩০ জন সাবেক ও বর্তমান ছাত্রলীগ নেতা এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে উল্লিখিত সব তথ্য।
১৯৭৭-১৯৮১ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ ছিল ৫৯টি। ১৯৮১-১৯৮৩ থেকে ১৯৯২-১৯৯৪ পর্যন্ত মোট পাঁচ কমিটিতে ৬৯টি করে পদ ছিল।
১৯৯৪-১৯৯৮ সালে গঠনতন্ত্র সংশোধনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কমিটির পদসংখ্যা বাড়িয়ে ১০১টি করা হয়। ১৯৯৮-২০০২ সালের কমিটি পর্যন্ত এই সংখ্যা ১০১ জনই ছিল।
কিন্তু ২০০২-২০০৬ সালে তা বেড়ে হয় ২০১টি। একই সংখ্যা ছিল ২০০৬-২০১১ সালের কমিটিতে। ২০১১-২০১৫ সালে কমিটির আকার বেড়ে দাঁড়ায় ২৫১ সদস্যবিশিষ্ট।
২০১৫-২০১৮ সালে আরও ৫০টি পদ বেড়ে কমিটি হয় ৩০১ জনের। বর্তমানে কাগজে-কলমে কমিটির আকার ৩০১ জনই আছে।
এছাড়া ১৯৭২ সালের আগের কমিটিগুলোর আকার সম্পর্কে একাধিক উৎস থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এর আগে ১৯৬৯-১৯৭০ সালে এবং ১৯৭০-১৯৭২ সালের কমিটিতেও ১০১টি পদ ছিল। এর আগে ১৯৬০-১৯৬৩ থেকে শুরু করে ১৯৬৮-১৯৬৯ পর্যন্ত ৫টি কমিটিতে এই সংখ্যা ছিল ৭১ সদস্যবিশিষ্ট।
এরও আগে ১৯৪৮-১৯৫০ সালের কমিটি থেকে ১৯৫৭-১৯৬০ পর্যন্ত গঠিত ৫টি কমিটিতে ৫১ জন করে সদস্য ছিলেন। ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠাকালে আহ্বায়ক কমিটি ছিল ১৭ সদস্যের। তাছাড়া ১৯৭৩-১৯৭৪ সালে কমিটির আকার ছিল ১০১ সদস্যবিশিষ্ট। ১৯৭৬-১৯৭৭ সালে কমিটির আকার ছিল ৫৯-এর কম।
+ There are no comments
Add yours