স্থানীয় সরকার বিভাগের শহর এলাকায় স্বল্প আয়ের মানুষ ও বস্তিবাসী, বিশেষ করে শিশু, নারী ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা ব্যবস্থার উন্নয়নে একটি প্রকল্পে বিদেশে প্রশিক্ষণ নিতে চাওয়া হয়েছে ৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।
সংকটের এই সময়ে বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য এত অর্থ ব্যয়কে অযৌক্তিক মনে করছে পরিকল্পনা কমিশন।
জানা যায়, ১০ সিটি করপোরেশন ও ১৭টি পৌরসভার ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে ‘আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিস ডেলিভারি’ প্রকল্পে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
প্রকল্পটির মূল ডিপিপিতে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ খাতে রাখা হয়েছিল ১০ কোটি ১৮ লাখ টাকা। পরে সংশোধিত ডিপিপিতে এ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এরই মধ্যে বৈদেশিক প্রশিক্ষণে প্রকল্পটিতে ৭৮ লাখ টাকা ব্যয়ও করা হয়েছে।
বাকি টাকা আগামী দুই বছরের মধ্যে ব্যয় করতে চান কর্মকর্তারা। অথচ সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা বৈশ্বিক সংকটের কথা বিবেচনা করে কৃচ্ছ্রসাধনের কথা বলেছেন। খুব প্রয়োজন না হলে কোনো ব্যয় করতে নিষেধ করেছেন। তা আমলে নিয়ে অর্থমন্ত্রণালয় ১০ নভেম্বর এক পরিপত্রে উন্নয়ন বাজেট ও পরিচালন বাজেট উভয় ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিদেশ সফর বন্ধ করেছে।
এ নিয়ে জানতে চাইলে প্রকল্পটির পরিচালক ও যুগ্ম সচিব এ এফ এম আলাউদ্দিন খান বলেন, প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বৈদেশিক প্রশিক্ষণের প্রয়োজন থাকতেই পারে। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তা ব্যয় করা হবে। সরকার অনুমতি না দিলে বিদেশে প্রশিক্ষণে যাওয়া হবে না।
এদিকে প্রকল্পটিতে বিদেশে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি দেশে প্রশিক্ষণে মূল ডিপিপিতে ১৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। গত চার বছরে এ খাতের ৫০ শতাংশ ব্যয় হয়েছে। বাকি অর্থ আগামী দেড় বছরে ব্যয় করতে চান সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো শহর এলাকায় বসবাসকারী জনসাধারণ, বিশেষ করে শিশু, মহিলা ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অবস্থার উন্নয়ন সাধন করা। বিশেষ করে প্রকল্পের আওতাভুক্ত এলাকার প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের আর্থিক ও ভৌত সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ।
নগরবাসীদের জন্য মানসম্মত প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, বিশেষ করে মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য সম্পর্কিত অপরিহার্য সেবা প্রদান প্যাকেজসমূহ নিশ্চিত করা। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহীতার সংখ্যা (বিশেষ করে দরিদ্র মহিলা, নবজাতক এবং শিশু) বৃদ্ধিকরণ। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ।
স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন-২০০৯, স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন-২০০৯ অনুসারে নগরবাসীকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাসমূহের দায়িত্ব।
এ পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৮ সাল থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার (UPHC) শিরোনামে জুলাই ১৯৯৮ থেকে জুন ২০০৫ মেয়াদে ১ম পর্যায় ও জুলাই ২০০৫ থেকে ২০১২ মেয়াদে ২য় পর্যায় প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়।
পরে আরবান প্রাইমারি হেল্প কেয়ার সার্ভিস ডেলিভারি প্রজেক্ট (UPHCSDP) নামে জুলাই ২০১২ থেকে মার্চ ২০১৮ (১ম পর্যায়) এবং এপ্রিল ২০১৮ থেকে মার্চ ২০২৩ পর্যন্ত (২য় পর্যায়), যা বর্তমানে চলমান রয়েছে।
+ There are no comments
Add yours