ভালুকায় স্বাস্থ্য কর্মকর্তার প্রত্যাহার চেয়েও ব্যর্থ ৫৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী

Estimated read time 1 min read
Ad1

কামরুজ্জামান মিন্টু, ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রোগীদের সেবা দেয়ার কথা থাকলেও ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। হাসপাতালের প্রধান যদি অনিয়মকে নিয়ম বানিয়ে দূর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়, তাহলে বাঁশের চাইতে কইঞ্চা শক্ত হবে সেটাই স্বাভাবিক। শুধু অনিয়ম, দুর্নীতি ছাড়াও অভিযোগের সীমা নেই ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ সোহেলী শারমিনের বিরুদ্ধে। এদিকে সকল অভিযোগ চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর পরও অদৃশ্য কারনে নিশ্চুপ কর্তৃপক্ষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি নির্দেশ অমান্য করে ডাঃ সোহেলী শারমিন ৫০ শয্যার সরকারি এই হাসপাতালের জরুরী বিভাগে তার মনোনীত নার্সদেরকে প্রেসক্রিপশন করার অনুমতি দিয়েছেন। নার্স আনোয়ার জরুরী বিভাগে কাজ করার সময় রোগীদেরকে প্রেসক্রিপশন লিখে দেয়। ডাঃ সোহেলীর নির্দেশে প্রতিদিন নার্স দিয়ে প্রেসক্রিপশন করিয়ে সাধারণ রোগীদের সাথে করা হচ্ছে প্রতারণা। এছাড়া গত (২২ অক্টোবর)
জরুরি বিভাগে বসে নার্স রিপন কর্মকারের প্রেসক্রিপশনের লেখা কপির খোজ করলেও তার প্রমাণ পাওয়া যাবে। এদিকে নার্সরা প্রেসক্রিপশনে তাদের মনোনীত ঔষধ কোম্পানির ঔষধ লিখে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোম্পানির মোটা অংকের কমিশন। আর কমিশনের ভাগটাও অবলীলায় চলে যাচ্ছে নির্দেশদাতার হাতে।

এদিকে গত এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে তার
বিরুদ্ধে অসৌজন্যমূলক আচরণ, মিথ্যাচার, অযৌক্তিক হঠকারি সিদ্ধান্ত ও অযোগ্যতার জন্য ডাঃ সোহেলীকে প্রত্যাহারের দাবিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত আবেদন করেন হাসপাতালের ৫৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। যার অনুলিপি ভালুকার সংসদ সদস্য, বিভগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক, সিভিল সার্জন ও উপজেলা চেয়ারম্যানকেও দেয়া হয়। কিন্তু আজও সেই আবেদন আলোর মুখ দেখেনি। উল্টো সেই আবেদনকারীদের মধ্যথেকে চারজনকে ডাঃ সোহেলী সিভিল সার্জনের যোগসাজশে অন্যত্র বদলি করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয় এখনো অভিযোগকারীদেরকে বদলির হুমকিসহ নানাভাবে হয়রানী করে যাচ্ছেন ডাঃ সোহেলী।

এ যেনো ‘বাতির নিচে অন্ধকার’। এপ্রিল মাসের ৩০ তারিখ করোনা কালীন সময়ে তার
অসৌজন্যমূলক আচরণ, মিথ্যাচার, অযৌক্তিক হঠকারি সিদ্ধান্ত ও অযোগ্যতার জন্য ডাঃ সোহেলী শারমিনকে প্রত্যাহারের দাবিতে হাসপাতাল চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি এবং বিক্ষোভ করেন হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে এসব কর্মসূচি পালন করে তারা। পরে এই সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রকাশ হলেও রহস্যজনক কারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে আজো খতিয়ে দেখেনি। এসব অনিয়মের ফলে হাসপাতালের স্টাফদের মাঝে একধরণের চাপা অসন্তোষ বিরাজ করছে। এভাবে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সাথে স্টাফদের রেষারেষির কারণে হাসপাতালে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা।

গোপন সূত্রে বেড়িয়ে এসেছে আরও বহু চাঞ্চল্যকর তথ্য। উপজেলার এই প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নাকি খুটির জোর বেশী। কারণ বড় পর্যায়ে আত্নীয় থাকায় ডাঃ সেহেলির মাথায় আশীর্বাদের হাত রয়েছে। ফলে মার্চ মাসের ১২ তারিখ বিসিএস ক্যাডারভুক্ত না হয়েও এডহক নিয়োগের ভিত্তিতে যোগ দেন তিনি। যোগ দেয়ার কিছুদিন পরেই তিনি পেয়ে যান ৫৫ লাখ টাকা দামের সরকারি পাজেরো গাড়ী। এই সরকারি গাড়ী দিয়েই তিনি প্রাইভেট প্র্যাকটিস অব্যাহত রেখেছেন। যোগ দেয়ার এক সপ্তাহ পর তিনি গত মার্চ মাসের ১৯ তারিখ উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের প্রসূতি সেবা কেন্দ্রে একটি সিজারিয়ান অপারেশন করান। সরকারি হাসপাতালে এটিই তার প্রথম এবং শেষ সিজারিয়ান অপারেশন। প্রায় ৭ মাস ধরে তিনি আর সরকারি স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে কোনো সিজারিয়ান অপারেশন করেন না।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, টাকার নেশায় ডাঃ সোহেলী এফসিপিএস অথবা ডিজিও ডিগ্রি লাভ না করেই শুধুমাত্র পিজিটি (গাইনী এন্ড অবস) ট্রেনিং নিয়েই নেমে পড়েছেন প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে সিজারিয়ান অপারেশন করার কাজে। তার যোগদানের একমাসের মাথায় সরকারি হাসপাতালের অ্যানেস্থেসিস্ট ডাঃ ইমরুলকে সুকৌশলে ডিজি অফিসের সাথে যোগাযোগ করে অন্যত্র বদলী করিয়ে দেন। এরপর থেকেই তার টাকা কামানোর পথ আরো সুগম হয়ে যায়। অ্যানেস্থেসিস্ট না থাকার অজুহাতে সরকারি হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ করে দেন তিনি। হাসপাতালে প্রসূতি রোগী আসলেই ভিতর এবং বাইরে দালালদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। ডাঃ সোহেলী হাসপাতালের ভিতরে তার অনুগত মহিলা নার্সদেরকে দিয়ে গড়ে তুলেছেন একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা প্রসূতি রোগীদেরকে সিজারের কথা বলে সুকৌশলে ভালুকায় ডাঃ সোহেলীর প্রাইভেট চেম্বারে পাঠিয়ে দেন। নরমাল ডেলিভারি হলেও বকশিসের কথা বলে ওই সিন্ডিকেট রোগী প্রতি
২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেয়। ডাঃ সোহেলী যোগদানের পূর্বেও নরমাল এবং সিজারিয়ান ডেলিভারিতে ভালুকা সরকারি হাসপাতালের প্রসূতি সেবা কেন্দ্র দেশের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করতো। অথচ ডাঃ সোহেলী যোগদানের পর থেকে বাংলাদেশে ভালুকা সরকারি হাসপাতালের প্রসূতি সেবা কেন্দ্রের আর কোনো সিরিয়ালই নেই।

এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটি তার বিরুদ্ধে সরকারি বরাদ্দের দেড় কোটি টাকা অনিয়ম করার অভিযোগ তুলেছেন। এই অনিয়ম খতিয়ে দেখতে গত জুলাই মাসে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু আজো তদন্ত কমিটি তার কাছ থেকে দেড় কোটি টাকার হিসাব নিতে পারেনি। তার খুটিঁর জোড় নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নিজের পছন্দের ঠিকাদার নিয়োগ করে নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করে কমিশন খায়, হাসপাতালের বাবুর্চিকে নিজের বাসায় নিজের বিভিন্ন কাজে ব্যবহারও করেন ডা. সোহেলী শারমিন। এদিকে স্থানীয় প্রশাসন তার নানা অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিলেও জেলা সিভিল সার্জনের অদৃশ্য কারনে নিশ্চুপ রয়েছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সোহেলী শারমিন বলেন, আমি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসার পর থেকেই একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আমি কোনো দুর্নীতি করিনি।

নিজস্ব প্রতিবেদক https://khoborbangla24.net

বিশ্বজুড়ে দেশের খবর

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours