আগামী ২৮ ডিসেম্বর ঢাকার উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল উদ্বোধন হচ্ছে, এর মধ্য দিয়ে গণপরিবহন ব্যবস্থায় এক নতুন যুগে সূচনা হচ্ছে বাংলাদেশে।
মেট্রোরেল উদ্বোধনে দুই হাজার অতিথি নিয়ে অনুষ্ঠান হবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। প্রধানমন্ত্রী প্রথম টিকিট কেটে ট্রেনে চড়বেন।
- ছয় বগির ১০ ট্রেন চলবে আগারগাঁও পর্যন্ত
- সড়কের ওপর চাপ কমবে : পরিকল্পনামন্ত্রী
- জাইকার সাড়ে ১৯ হাজার কোটি টাকার ঋণ
- চালু হওয়ার পর আয়ের হিসাব জানা যাবে : এমডি
- ৩০-৪০ বছরে ঋণ শোধ করবে ইআরডি
ডিএমটিসিএল সূত্রে জানা গেছে, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি হবে শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। পুরো কেন্দ্রটি মেট্রোরেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া নেওয়া হয়েছে। এ অনুষ্ঠানে দুই হাজার অতিথি থাকবেন। মন্ত্রিসভার সদস্য, রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক, সরকারি কর্মকর্তা, দিল্লি মেট্রোরেলের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাসহ বিভিন্নজনকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর কথা রয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের যে প্রাথমিক পরিকল্পনা করা হয়েছে, তা থেকে জানা যায়, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতাসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগারগাঁও স্টেশনে (আইডিবি ভবনের কাছে) যাবেন। সেখান থেকে তিনি প্রথম যাত্রী হিসেবে টিকিট কেটে ট্রেনে চড়বেন। প্রধানমন্ত্রী স্থায়ী কার্ডের মাধ্যমে টিকিট কাটবেন বলে জানা গেছে।
এরপর তিনি ট্রেনে চড়ে উত্তরা উত্তর (উত্তরায় মেট্রোরেলের ডিপোর কাছে) স্টেশনে গিয়ে নামবেন, যেটি সর্বশেষ স্টেশন। সেখানে মেট্রোরেলের উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন। সেখানকার আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে প্রধানমন্ত্রী আবার মেট্রোরেলে চড়ে আগারগাঁও চলে আসবেন। ট্রেন থাকা অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলবেন ও ছবি তুলবেন।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাজধানীর ওপর থেকে চাপ কমাতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে। যানজট কমিয়ে যোগাযোগ সহজ করতে রাজধানীজুড়ে মেট্রোরেল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ঘোষণা অনুযায়ী চলতি মাসেই (ডিসেম্বর) মেট্রোরেলের তিনটি অংশের মধ্যে একটির উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত উড়াল মেট্রোরেল পথে ট্রেন চালুর অপেক্ষা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
বর্তমানে উদ্বোধনের প্রস্তুতি হিসেবে প্রতিদিন উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ট্রায়াল চলছে স্বপ্নের মেট্রোরেলের। পদ্মা সেতুর পর মেট্রোরেল চালুর মাধ্যমে রাজধানীর যানজট কমার পাশাপাশি রাজস্ব আহরণ বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা জানান, মেট্রোরেল প্রকল্পের উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১.৭৩ কিলোমিটার অংশের উদ্বোধন হবে ২৮ ডিসেম্বর। পরবর্তীতে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত দ্বিতীয় অংশ এবং তৃতীয় অংশ অর্থাৎ মতিঝিল থেকে কমলাপুর রেল স্টেশন পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু করা হবে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হবে বলে তারা জানান।
প্রথমে কথা ছিল উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার মেট্রোরেল স্থাপন করা হবে। সে হিসাবে এ প্রকল্পের ব্যয় ছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে মেট্রোরেলের দূরত্ব আরও ১.১৬ কিলোমিটার বাড়িয়ে কমলাপুর পর্যন্ত নির্মাণের পরিকল্পনা করে সরকার। ফলে বর্তমানে মেট্রোরেলের মোট ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। নতুন করে ১.১৬ কিলোমিটারের জন্য প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
মেট্রোরেলের ভাড়া কিলোমিটারে ৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা। সেই হিসাবে উত্তরা নর্থ স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ভাড়া হবে ৬০ টাকা। আর উত্তরা নর্থ স্টেশন থেকে কমলাপুর স্টেশন পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে একজন যাত্রীকে ১০০ টাকা ভাড়া গুনতে হবে।
মেট্রোরেলে ভ্রমণের জন্য প্রথমদিকে কেবল স্টেশনের কাউন্টার থেকে এমআরটি পাস ইস্যু করা হবে এবং সেটি পরবর্তীতে রিচার্জ করা যাবে। এর বাইরে স্টেশনের কাউন্টার কিংবা টিকিট বিক্রির মেশিন থেকে নির্দিষ্ট যাত্রার টিকিট (সিঙ্গেল জার্নি টিকিট) কেনা যাবে।
গত মাসের শেষ (নভেম্বর) পর্যন্ত মেট্রোরেলের (এমআরটি লাইন-৬) সার্বিক গড় অগ্রগতি হয়েছে ৮৪.২২ শতাংশ। প্রথম পর্যায়ে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে আগারগাঁও অংশের পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৯৫ শতাংশ। দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্মাণের জন্য নির্ধারিত আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৮৫.৭৬ শতাংশ। ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম এবং রোলিং স্টক (রেলকোচ) ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ কাজের সমন্বিত অগ্রগতি ৮৪.৮৭ শতাংশ।
ডিএমটিসিএলের জনসংযোগ কর্মকর্তা আফতাব মাহমুদ গালিব বলেন, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১০টি ট্রেন চলবে। দুটি ট্রেন সবসময় প্রস্তুত থাকবে। ১০টি ট্রেনের মধ্যে যদি কোনোটির সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে বাকি দুটি সাপোর্ট হিসেবে কাজ করবে। আপাতত সময় নিয়ে অর্থাৎ ধীরে-সুস্থে এই রুটে ট্রেন চলাচল করবে। তবে, পুরোদমে ট্রেন চালু হলে সাড়ে তিন মিনিটে একটি করে ট্রেন চলাচল করবে। স্টেশনে ট্রেন কতক্ষণ দাঁড়াবে তা আপাতত নির্ধারণ করা হয়নি। প্রত্যেক স্টেশনে যাত্রীদের ওঠা-নামা শেষ হওয়া পর্যন্ত ট্রেন অপেক্ষা করবে। প্রতিটি ট্রেন দুই হাজার ৩০০ যাত্রী নিয়ে ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে পারবে। তবে, যেসব এলাকায় বাঁক আছে সেখানে গতি কম থাকবে।
+ There are no comments
Add yours